বড় অংকের আর্থিক বিনিয়োগের বিনিময়ে একটি দেশের দ্রুততম সময়ে বিদেশি নাগরিকদের বসবাসের অনুমতি পাওয়ার একটি উপায় হল গোল্ডেন ভিসা। বিনিয়োগের ফলে অন্য দেশের ধনী ব্যক্তিদের বসবাস এবং কাজের অধিকার দেয় গোল্ডেন ভিসা। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনী ব্যক্তিরা এই ভিসা প্রদানকারী দেশ এ আবেদন করে সেখানে কাজ করার এবং ভোট দেওয়ার সুযোগ সহ নাগরিক হিসেবে সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা পান।
গোল্ডেন ভিসা বা গোল্ডেন পাসপোর্ট কী?
বড় বিনিয়োগের বিনিময়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্য দেশে বসবাস এবং কাজ করার অধিকার দেয় গোল্ডেন ভিসা।
একটি গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য পানামার আবাসন খাতে এক লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয় কিংবা ২ কোটি ১৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ লুক্সেমবার্গের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত আকারে জমা রাখতে হয়।
আর তারপরই পাওয়া যায় গোল্ডেন পাসপোর্ট। যার মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা একটি দেশে আবেদন করে সেখানে কাজ করার এবং ভোট দেওয়ার সুযোগসহ নাগরিক হিসেবে সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা লাভ করেন।
গ্লোডেন ভিসা পাওয়া যায় কোন কোন দেশে?
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এবং ‘দ্য গোল্ডেন পাসপোর্ট: গ্লোবাল মোবিলিটি ফর মিলিয়নেয়ার’ বইয়ের লেখক ড. ক্রিস্টিন সুরাক জানান, প্রায় ৬০টি দেশ গোল্ডেন ভিসা দেয়।
এর মধ্যে প্রায় ২০টি দেশ বিনিয়োগের মাধ্যমে আইনি বিধানসহ নাগরিকত্ব দেয় আর এর মধ্যে অর্ধেক দেশে প্রতি বছর ১০০টিরও বেশি আবেদন পায়, জানান তিনি।
এর মধ্যে গোল্ডেন ভিসা বেশি দেয় তুরস্ক।
এ নিয়ে ক্রিস্টিন সুরাক বলেন, নাগরিকত্বের সবচেয়ে বড় বিক্রেতা তুরস্ক।
তার গবেষণার তথ্যমতে, গোল্ডেন পাসপোর্ট স্কিমে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক নাগরিকত্ব বিক্রির প্রায় অর্ধেকই তুরস্কের।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ কর্মসূচির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বসবাসের সুযোগ দেয়া হয় বৈশ্বিক দক্ষিণে (গ্লোবাল সাউথ), বিশেষ করে মালয়েশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোতে।
গোল্ডেন পাসপোর্টের প্রধান ইস্যুকারীদের মধ্যে আরও রয়েছে সেন্ট কিটস, ডোমিনিকা, ভানুয়াতু, গ্রেনাডা, অ্যান্টিগুয়া এবং মাল্টা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গোল্ডেন ভিসাপ্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে কাঙ্খিত গন্তব্যগুলোর একটি। কেননা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও একটি সদস্য দেশে বসবাস এবং কাজ করার অধিকার পেলে শেনজেন-ভুক্ত দেশগুলোতে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের অনুমতি পাওয়া যায়।
২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৪টি দেশ গোল্ডেন ভিসা দিয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি অনুমোদন দিয়েছে গ্রিস, লাটভিয়া, পর্তুগাল আর স্পেন। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই এই স্কিম সীমিত করার দিকে আগোচ্ছে।
ধনী বিদেশি নাগরিকরা সম্পদ আনলে তাদের দেশে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার একটি প্রকল্প ২০২২ সালে শেষ করে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। পরের বছর আয়ারল্যান্ড দেশটির গোল্ডেন ভিসা ব্যবস্থা বাতিল করে। তবে পর্তুগাল বাতিল না করলেও এতে নিজস্ব কিছু পরিবর্তন আনে।
সম্পত্তি ক্রয়ের বিনিময়ে বসবাসের অনুমতি না দিলেও তহবিল এবং গবেষণা কার্যক্রমের জন্য মূলধন স্থানান্তর ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এই চর্চা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখে দেশটি।
গোল্ডেন ভিসার এত চাহিদার কারণ কী?
ভালো ব্যবসার সুযোগ, জীবনধারা, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সেবা খোঁজা ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে গোল্ডেন ভিসা ও পাসপোর্ট বেশ জনপ্রিয়।
গোল্ডেন ভিসা বা পাসপোর্ট পাওয়া উপায়
ভিসা পাওয়া নির্ভর করে গন্তব্য এবং বিনিয়োগের ধরনের উপর। যেমন, বিদেশিদের মধ্যে যারা চার লাখ ডলার বা তার বেশি মূল্যের আবাসন কেনে তুরস্ক থেকে তাদের গোল্ডেন পাসপোর্ট অফার করা হয়।
লুক্সেমবার্গের মতো কিছু দেশ গোল্ডেন ভিসার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প দেয়। এই বিকল্পের মধ্যে রয়েছে লুক্সেমবার্গের কোনও কোম্পানিতে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার ডলার বিনিয়োগ থেকে শুরু করে কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ১৪ লাখ ডলার জমা রাখা।
অনেক দেশ গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অনুদান বা বিনিয়োগ নেয়।
এই স্কিমগুলো চালাতে সরকারগুলোর জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রণোদনার একটি হল দেশে পুঁজি স্থানান্তর করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা।
জার্নাল অব এথনিক অ্যান্ড মাইগ্রেশন স্টাডিজে প্রকাশিত ড. ক্রিস্টিন সুরাক এবং ইউসুকে সুজুকির একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে পর্তুগালের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ এসেছে গোল্ডেন ভিসার মাধ্যমে।
এই অনুপাত লাটভিয়ার জন্য ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ আর গ্রীসের জন্য তা ছিল সাত শতাংশেরও বেশি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা