কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হোসেনপুর গ্রামের পাশের হাওড়ে প্রায় ৩০ একর জমিতে দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে আছে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট। শতকোটি টাকার এই রিসোর্টে রয়েছে হ্যালিপ্যাড। বিত্তশালী আর প্রভাবশালীরা প্রায়ই হেলিকপ্টারে করে এই রিসোর্টে একান্ত সময় কাটাতে আসেন। প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামের এই অবকাশ কেন্দ্রটির মালিক বহুল আলোচিত সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ।
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চালু হয় প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। চোখ ধাঁধানো এই রিসোর্টটিতে ২০টি দোতলা কটেজে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৪০টি কক্ষ। আছে রেস্টুরেন্ট, পার্টি সেন্টার, শিশুদের গেইম জোন ও ওয়াচ টাওয়ার।
এই রিসোর্টের পাশেই হোসেনপুর গ্রামে সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের বাড়ি। শুধু বিলাসবহুল এই রিসোর্টই নয়, এর পাশেই নীরিহ কৃষকদের ৩/৪০০ একর জমি দখল করে অ্যাগ্রো ফার্ম তৈরির পায়তারা করছিলেন হারুন। শতাধিক একর জমি বাদ দিয়ে গতবছরই দখল করে নিয়েছেন, বর্ষা মৌসুম থাকায় কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। মিঠামইনের হোসেনপুর থেকে অষ্টগ্রামের ভাতশালা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নিমার্ণ করা হয়েছে হারুনের ছোটভাই শাহরিয়ারের নেতৃত্বে।
গত ৭ ও ১৩ আগস্ট দুইদফা সরেজমিনে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন উর রশিদের এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী এবং নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিভাবে এতোটা অর্থবিত্তের মালিক হয়ে গেলেন।
জানা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন হারুন। লেখাপড়া শেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পান। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার এসে তার পদায়ন আটকে দেয়। এরপর ওয়ান ইলিভেনের সময় হারুনের চাকরি স্থায়ী হয়। মূলত গাজীপুরের এসপি থাকাকালীন কপাল খুলে যায় হারুনের।
গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময় থেকেই হারুন তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ির পাশের হাওড়ে জমি কিনতে শুরু করেন। নামে বেনামে তার কমপক্ষে ১০০ একর জমি রয়েছে। সেই সঙ্গে শতাধিক একর অন্যের জমিও দখল করেছেন। এমনকি দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রেও হারুনের শত শত কোটি টাকার সম্পদ থাকার গুঞ্জন রয়েছে।
সাবেক ডিবি প্রধান হারুন উর রশিদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এসব দুর্নীতির ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাই ভাই প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট ও অ্যাগ্রো ফার্মের এমডি ডা. এবিএম শাহরিয়ারের ফোনও বন্ধ রয়েছে। রিসোর্টে গিয়ে এমডির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা হলে গেইটে পাহারায় থাকা লোকজন জানান দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়, তাই রিসোর্টে কাউকে অ্যালাউ করা হচ্ছে না।