বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন

গুলশানে ১০ তলা বিলাসবহুল ভবন ছিল টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অবৈধ সম্পত্তি ভোগের অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকায় তাঁর পরিবারের নামে নির্মিত এক বিলাসবহুল ১০ তলা ভবনের বাসিন্দা ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার কর্মকর্তারা ২০১৪ সালে অনুমান করেছিলেন, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় তাঁর ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ‘সিদ্দিকস’। উল্লেখ্য, টিউলিপের পারিবারিক পদবি ‘সিদ্দিক’।

গুলশানের ওই ভবন যে এলাকায় অবস্থিত, তা মূলত বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও বড় করপোরেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের জন্য বিখ্যাত। আদালতের নথি ও সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্রে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যুক্ত ‘পঞ্চম প্রপার্টি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

তবে লেবার পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই এবং যে ঠিকানাগুলো তাঁর নয়, সেগুলো নিয়ে তাঁকে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না। তবে নগরমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের এক মাস পেরিয়ে গেলেও টিউলিপ সিদ্দিক এখনো তাঁর সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয় এবং বাংলাদেশে তাঁর খালা শেখ হাসিনার ক্ষমতাবাদী শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নের মুখে আছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে দেখেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির দেওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অনিচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। এ-সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ট্রেজারি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টিউলিপের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। অথচ, তাঁর নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত চান। অভিযোগ, লন্ডনে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকটি সম্পত্তি তিনি ব্যবহার করেছেন।

উল্লেখ্য, ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত বছরের আগস্টে এক রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়ন চালানোর পর তিনি গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান। তাঁর নির্দেশে চালানো দমন-পীড়নের ফলে ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ও গোপনে কারাবন্দী করার অভিযোগ ওঠে; পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরের কানাইয়ায় একটি পারিবারিক অবকাশ কেন্দ্র খুঁজে পায় শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্ট। এই বাড়িতে ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামে একটি প্লট রয়েছে। দুদক সেটির তদন্ত করছে বলে খবর প্রকাশের এক দিন পরই দ্য টেলিগ্রাফ টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও একটি প্রপার্টির তথ্য প্রকাশ করে।

পুরোনো সরকারি নথি থেকে দেখা গেছে, ওই সম্পত্তিকে টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। নথিটি ২০১৪ সালের মে মাসে ক্যামডেন কাউন্সিলরের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পরের তারিখে লিপিবদ্ধ করা হয়।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত ১০ তলা ভবনটি ২০১০ সালের দিকে নির্মিত। একটি প্রচারমূলক ভিডিও অনুযায়ী, ভবনটিতে ছাদবাগান, দুই ও তিন বেডরুমের ঘরের ফ্ল্যাট, বারান্দাসহ আবাসিক ইউনিট রয়েছে। এ ধরনের প্রশস্ত অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সঙ্গে ঢাকার দুই কোটি মানুষের বসবাসের পরিবেশের বড় ধরনের বৈসাদৃশ্য আছে। কারণ, এটি বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি।

ভবনটি টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তাঁর দাদা বা পুরো পরিবারের উদ্দেশে নামকরণ করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এই ভবনের মালিকানার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, এটি পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমির ওপর নির্মিত হয়। তবে পরিবারটি এখনো ওই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক কি না বা ভবনটির নামকরণ কার নামে হয়েছে—এসব বিষয়ে লেবার পার্টি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক ‘সাম্প্রতিক সময়’ পর্যন্ত ওই ভবনে বসবাস করতেন বলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাঁর বায়োতে লেখা ছিল। শফিক আহমেদ শেখ রেহানার স্বামী। রেহানা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com