ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রদেশ গুজরাট। এর পাশে মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান- দুটি প্রদেশ রয়েছে। সিন্ধু সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ থেকে ১৯০০ অব্দে গুজরাট অঞ্চল ছিলো সুবিস্তৃত বাণিজ্য কেন্দ্র। এর অব্যবহিত পরে শুরু হয় মুঘল শাসন। ব্রিটিশদের দ্বারাও অঞ্চলটি শাসিত হয়েছে। এছাড়া এক সময় গুর্জর-প্রতিহার রাজবংশের কর্তৃত্ব ছিলো এখানে। ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা করমচাঁদ গান্ধীর জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এটি। গুজরাটে রয়েছে প্রণিধানযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় শহর। এসব শহরে সব বয়সের মানুষকে ভ্রমণ করতে দেখা যায়।
আহমেদাবাদ
গুজরাটের রাজধানী এটি। ২০১৭ সালে এই শহরকে ভারতের প্রথম ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শহর হিসেবে অভিহিত করা হয়। পঞ্চদশ শতকে সুলতান আহমেদ শাহ আবদালী কর্তৃক এই শহর প্রতিষ্ঠিত হয়। সনাতন, মুসলিম ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা এখানে বসবাস করে। আহমেদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ হলো গান্ধীর আশ্রম। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করেন।
বারোদা
গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী শহরের নাম বরোদা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নবরাত্রী উৎসবের গড়বা নৃত্যের জন্য বিখ্যাত এই শহর। গায়েকওয়াদ রাজপরিবার অষ্টাদশ শতাব্দিতে শহরটিতে শাসন শুরু করেন। তাদের বিলাসবহুল প্রাসাদের নাম লক্ষ্মী ভিলাস প্যালেস। এটি ইন্দো-সারাকেনিক স্থাপত্যে নির্মিত। ৫০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তীর্ণ এটি। আহমদাবাদ শহর থেকে বরোদা শহরের দুরত্ব ১১৫ কিলোমিটার।
স্ট্যাচু অব ইউনিটি, কেভাদিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভাস্কর্য এটি। ২০১৮ সালে ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী সরদার বল্লভভাই প্যাটেলকে স্মরণ করে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। এটি ১৮২ মিটার লম্বা। পর্যটকদের দৃষ্টিতে গুজরাটের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। বরোদা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে এর দুরত্ব ৯০ কিলোমিটার। অন্তত ২ ঘণ্টার মধ্যে এখানে পৌঁছা সম্ভব।
চ্যামপ্যানার-পাভাগড় প্রত্নতাত্ত্বিক পার্ক
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে পরিচিত চ্যামপ্যানার-পাভাগড় প্রত্নতাত্ত্বিক পার্কে রয়েছে ইতিহাসের ছোঁয়া। হিন্দু ও মুসলিম ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে নির্মিত স্থাপনা। অষ্টম থেকে চতুর্দশ শতাব্দিতে এটি নির্মাণ করা হয়। সুরক্ষিত দুর্গ, অভিজাত ভবন, আশ্রম, মসজিদ, মন্দির ও আবাসিক এলাকা রয়েছে। বরোদা শহরের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এর দুরত্ব ৪৮ কিলোমিটার।
সূর্য মন্দির, মোধেরা
ভারতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সূর্য মন্দির মোধেরায় অবস্থিত। একাদশ শতাব্দিতে সোলাঙ্কি সাম্রাজ্যের শাসকরা মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সূর্যকে উৎসর্গ করে স্থাপন করা হয় এটি। এখানে রয়েছে প্রস্তরমূর্তি। গুজরাটের উত্তরে অবস্থিত মন্দিরটিতে আহমদাবাদ শহর থেকে অন্তত ২ ঘণ্টায় পৌঁছা সম্ভব। দুরত্ব ৯৯ কিলোমিটার।