রিসোর্টের জেলা হিসেবে পরিচিত গাজীপুর। এই জেলায় নতুন করে চালু হলো আরও একটি রিসোর্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বন বিভাগের ৩ দশমিক ১২ একর জমি ইজারা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। রিসোর্ট মানেই যে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ আর বিনোদনের নানা উপাদান, তার কোনও ছিটেফোঁটাও নেই এখানে।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দূরে এলেই ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে দেখা যায় ‘গাজীপুরের সালনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট’-এর সাইনবোর্ড। সালনা পর্যটন রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে জানুয়ারিতে এটির কাজ শুরু করে শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে।
সাড়ে তিন বছর সময় ব্যয় করে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে দুই রুমের ছয়টি কটেজ। আরও আছে একটি কনফারেন্স হল, দুটি পিকনিক শেড ও একটি ৬০ আসনের রেস্তোরাঁ।
৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী গাজীপুরে গিয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ‘সালনা পর্যটন রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট’ উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধন হলেও এখনও সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়নি রিসোর্টটি। রেস্তোরাঁও চালু হয়নি। সাড়ে তিন বছর সময় ব্যয় করে নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করার পরও কেন উন্মুক্ত নয় তার উত্তরও দিতে পারেনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।
ঢাকা থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে এই রিসোর্টে কী আছে?
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বলছে, আধুনিক কটেজ ছয়টি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কটেজে দুটি বেডরুম, একটি ড্রইং কাম ডাইনিং রুম রয়েছে। তবে সরজমিন দেখা গেলো, কটেজের রুমগুলো আয়তনে ছোট। গোসলের গরম পানির জন্য গিজারের ব্যবস্থা নেই। বাথরুমে নেই কোনও বাথটাব। টয়লেট ও রুমের বিভিন্ন উপকরণও বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়। ফ্রিতে ডাইনিং রুম ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও সেখানে নেই কোনও ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলি। তবে কোনও কিছু থাকুক আর না থাকুক, প্রতি রাতে জন্য এই কটেজের ভাড়া দিতে হয় ছয় হাজার টাকা।
কীভাবে সময় পার করবেন এই রিসোর্টে আসা অতিথিরা?
পর্যটন করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, সালনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট খুব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি রিসোর্ট। প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকায় এখানে বিদেশি পর্যটকও আসবে। তবে রিসোর্ট ঘুরে কোথাও সুইমিংপুল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বন বিভাগের জায়গা হওয়ায় সেখানে কিছু পুরানো বড় গাছ আছে, তবে আলাদা করে দৃষ্টিনন্দন কোনও বাগান নেই। বরং বিভিন্ন জায়গায় থাকা ঝোপ কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে। ছয়টি কটেজ ছাড়া বিনোদনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেই। কয়েকটি গাছের নিচে কাদামাটির ওপরে সিমেন্ট দিয়ে বানানো বসার জায়গা রয়েছে। সেখানে বসলে নজরে আসবে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বেশ কয়েকটি ট্যাংক।
পর্যটন করপোরেশন বলছে, আধুনিক স্থাপত্য নকশায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬০ আসনবিশিষ্ট রেস্তোঁরা আছে এই রিসোর্টে। এছাড়া একটি অভ্যর্থনা ভবন, যার নিচতলায় অভ্যর্থনা কাউন্টার, তিনটি স্যুভিনিয়ার শপ, একটি কফি কর্নার। বাস্তবে স্যুভিনিয়ার শপ, আর কফি কর্নারের কোনও অস্তিত্ব নেই।
পর্যটন করপোরেশন বলছে, গ্রুপ টুরিস্টদের ডে-আউটিংয়ের জন্য দুটি পিকনিক শেড ও একটি কুকিং শেড রয়েছে, যেখানে ২০০-৩০০ লোকের সব ধরনের খাবার প্রস্তুতের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০ লোক সেখানে অবস্থান করার মতো কোনও আয়োজন নেই। পর্যটন করপোরেশন বলছে, শিশুদের জন্য রাইড ও বিনোদন সুবিধা রয়েছে। তবে রিসোর্টে দুটি দোলনা ছাড়া আকর্ষণীয় কোনও খেলার রাইড নেই।
কেমন হবে একটি রিসোর্ট?
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতেও থাকার ব্যবস্থা আছে, রেস্তোরাঁ আছে । শুধু তাই নয়, সুইমিংপুল, জিম, বার, স্পা সেন্টার, প্লে গ্রাউন্ড থাকে। তাহলে আলাদা করে রিসোর্ট কেন? রিসোর্টের কনসেপ্ট এসেছে খোলামেলা পরিবেশে বিনোদন ও খেলাধুলাসহ উপভোগের নানা আয়োজন থেকে।
টুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্রিয়াব) সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, রিসোর্টে মানুষ আসে বড় পরিসরে বেশি কিছু উপভোগ করতে। হোটেলগুলোতে কেবল থাকার ব্যবস্থা আছে। তাহলে রিসোর্টে কেন আসবে বাড়তি সুবিধা ও ভিন্ন আয়োজন না থাকলে।
এসব বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলি কদর বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং মহাসড়কের পাশেই হওয়ায় রিসোর্টটি জনপ্রিয় হবে। আমরা একটি সুইমিংপুলের ব্যবস্থা করবো। আরও কিছু বিষয়ে কাজ হবে। প্রকল্প শেষ হলেও আরও কিছু বিষয়ে উন্নয়ন করা হবে।