জমজমাট শব্দটি আবিষ্কৃত না হলে দিল্লির এই গলিকে ঠিকঠাক প্রকাশ করাটা বুঝি একটু মুশকিলই হতো! উপরে ঝলমলে জরির ছাওনি দেওয়া, নিচে বিভিন্ন বয়সের ভোজন রসিকদের সমাগম। কোনও দোকানে ঝুলছে লোভনীয় সব কাবাব, আবার কোনও দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দৈত্যাকৃতির জিলাপি। কেউ ব্যস্ত তরমুজ দিয়ে তৈরি শরবতে মোহাব্বত বানাতে, কেউবা বিশাল পাত্রে শাহী টুকরা সাজিয়ে বসেছেন। প্রতিদিনই যেন এখানে ফুড ফেস্টিভ্যাল চলে।
দিল্লি জামে মসজিদের উল্টো দিকে আলো ঝলমলে এই গলি জেগে থাকে প্রায় পুরো রাতই। আমি যখন গিয়েছিলাম তখন রোজার সময়। ফলে সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত এখানে ছিল মানুষের আনাগোনা। বিখ্যাত চাঁদনী চক সংলগ্ন এই ফুড স্ট্রিট ঘুরতে না গেলে দিল্লি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কিছুটা অপূর্ণই থেকে যাবে আপনার।
গভীর রাতেও এখানে আপনাকে ঢুকতে হবে ভিড় থেকে। সরু গলির দুইপাশে হাজার হাজার দোকান কোনটাই খালি নেই। খেতে চাইলে দাঁড়াতে হবে লাইনে। স্ট্রিড ফুডের যেমন রয়েছে নানা পদ, তেমনি বিখ্যাত সব দোকানের দেখাও মিলবে এখানে। করিমস, আসলাম, আল জওহরের মতো পুরনো ও বিখ্যাত খাবারের দোকান রয়েছে এই গলিতে।
একশো বছরের পুরনো রেস্তোরাঁ করিমসে জায়গা পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। চিকেন বিরিয়ানি, চিকেন কোরমা ও রুমালি রুটি অর্ডার করলাম। খুব কম সময়েই চলে আসলো খাবার। তবে খাবার খেয়ে একটু হতাশই হতে হলো! প্রচুর তেল আর মসলা দিয়ে প্রস্তুত প্রতিটি খাবার। বিরিয়ানির স্বাদটাও একটু সাদামাটাই বলা চলে।
তবে আশা না হারিয়ে অন্যকিছু চেখে দেখার আশায় আবারও মিশে গেলাম চলমান জনসমুদ্রে। নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া শরবতে মোহাব্বত প্রস্তুত প্রণালি বেশ নজরকাড়া। এক গ্লাস নিয়ে নিলাম। বেশ রিফ্রেশিং একটা পানীয়। দিল্লির গরমকে বশে আনার জন্য উপাদেয় পানীয়ই বলা চলে। শাহী টুকরাতে যদিও মিষ্টি খানিকটা বেশি, তবে খেতে দারুণ!
এক ধরনের কাশ্মিরি রুটি পাওয়া যায় এখানে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও মোরব্বা দিয়ে তৈরি নরম এই রুটিটি খেতে ভীষণ মজাদার। আগুনে ঝলসানো শিক কাবাবও চেখে দেখতে পারেন।
মোঘলাই খাবারের ছড়াছড়ি এখানে। বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি, বাটার চিকেন, শিক কাবাব, তন্দুরি চিকেন, ফিশ টিক্কা, তন্দুর রুটি যেমন রয়েছে, তেমনি শুকনো ফল, সেমাই, বেকারি আইটেমেরও দেখা মিলবে। ভোজন রসিকদের জন্য দিল্লির এই গলি হতে পারে চমৎকার অভিজ্ঞতার ঝুলি।