খাগড়াছড়ি! মেঘমালা, সবুজ বন আর ছোটবড়ো পাহাড়ের মিশেলে অপার্থিব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, যেখানে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন দুদণ্ড শান্তির খোঁজে।
অল্প সময় অর্থাৎ ২-৩ দিনের জন্যও যেতে পারেন খাগড়াছড়ি ভ্রমণে। একটু পরিকল্পনা থাকলে একদিনে সাজেক আর বাকি ২দিন কাটিয়ে আসতে পারেন অপরূপ প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
রাজধানীর পান্থপথ বা কলাবাগান থেকে কয়েকটি বাস ছেড়ে যায় খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। তবে সময় বাঁচাতে রাতের বেলায় ভ্রমণ করাই উপযুক্ত। রাত ১০টায় বাস ছাড়লে ভোরের আলো ফুটতে ফুটতেই পৌঁছে যাবেন খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে। যাত্রাপথের শেষবেলায় পাহাড়ে বাঁকে বাসের এঁকেবেঁকে যাওয়ার চিত্র কিছুটা ঘাবড়ে দিতে পারে। তবে বাস থেকে নামতেই স্নিগ্ধ ভোরের পাহাড়ের ঠাণ্ডা বাতাস মন জুড়িয়ে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
যেকোনো গেস্ট হাউজে বিশ্রাম নিয়ে খাগড়াছড়ির বিখ্যাত মনটানা রেস্তোরাঁয় সেরে নিতে পারেন সকালের নাশতা। খেতে পারেন যেকোন হোটেলই, তবে মনটানা পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত। এরপর দল বেঁধে জিপে করে রওনা দিন সাজেকের পথে। সময় কম থাকলে প্রথমদিনই চলে যান সাজেকে। সাজেকের পথ যেন শেষই হয় না। মাঝে কিছু সময়ের বিরতি দীঘিনালায়, সেনাবাহিনীর অনুমতির জন্যে। এখানে সময় লাগে একঘন্টার মতো, তাই যে যার মতো কিছুক্ষণ ঘুরতে পারেন আশপাশে। ডাবের মিষ্টি পানি খেয়ে ঘুরে-ফিরে দেখতে পারেন আদিবাসী এলাকা। কাছেই আছে স্বচ্ছ পানির পাহাড়ি লেক। যারা এখানে ভ্রমণ বিরতি পাবেন তাদের অবশ্যই আশেপাশে ঘুরে দেখা উচিত। আদিবাসীদের গ্রাম, টলটলে পানির ছড়া, আর উঁচুনিচু পাহাড়- এ দৃশ্য ভোলার নয়।
ভ্রমণের অন্যতম চমক সাজেকের রাস্তা। যেমন উঁচু, তেমনি নিচু- যেন বিধাতার সৃষ্টি চাঞ্চল্যকর এক রাইড। ওঠানামার সময় আপনাআপনি চোখ বন্ধ হয়ে আসবে। তখন ভয়ার্ত চিত্তে কড়া নাড়বে সৃষ্টিকর্তা ও পরিবারের কথা। তবে বেশিক্ষণ চোখ বন্ধ করেও রাখতে পারবেন না, কারণ পাশেই এমন সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা না দেখলে আফসোস থেকে যাবে। এসময় চোখে পড়ে- পাহাড়িদের ঘর, মায়াকাড়া চেহারার ছোট ছোট শিশু। কিছুক্ষণ পরপর ছড়ায় পানি বয়ে যাওয়ার অপরূপ সৌন্দর্য।
খাগড়াছড়ি সদর থেকে সকাল ৯টায় রওনা হলে সাজেকে পৌঁছে যাবেন দুপুর নাগাদ। সাজেক মূলত পাহাড়ের উঁচুতে সাজানো গোছানো অনন্য সুন্দর একটি ট্যুরিস্ট স্পট। ঢোকার মুখে চোখে পড়বে গোলাপী রংয়ের বাগানবিলাসের ঝোপ। রাত্রিযাপনের জন্য আছে ছোট-বড় হোটেল-মোটেল আর কাঠের তৈরি কটেজ। পৌঁছেই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। খাবারে জুটবে ভাত, সবজি, ডাল আর ঝাল করে রান্না করা পাহাড়ি মুরগি। এই মেনু দুপুরের-প্রায় সব দোকানেই, দামও বেশ কম। সাথে আপনার প্রাণ মেটাবে পাহাড়ের ছড়া থেকে সংগ্রহ করা খাবার পানি। স্থানীয় হোটেল থেকে যত খুশি খাওয়া যাবে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া এই পানি।
খাওয়া শেষ করে খানিক বিশ্রাম নিয়ে যেতে পারেন খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ পাহাড় কংলাক জয়ের পথে। সাজেকে এক-দুদিন থাকলেই হয়। ঘোরাফেরার জন্য কয়েকজন মিলে ভাড়া করে নিতে পারেন স্থানীয় পাহাড়ি জিপ। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় স্থানীয় দক্ষ চালকরাই সবচেয়ে উপযুক্ত। কংলাকের নিচে জিপ পর্যন্ত যাওয়ার পর শুরু হবে লাঠিতে ভর করে পাহাড়ে ওঠা। তবে সব ক্লান্তি মুছে যাবে সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় পৌঁছে। চারপাশে মেঘের রাজ্য, ভীষণ সুন্দর! পাহাড়ের অত ওপরেও আছে আদিবাসীদের বাস। আদিবাসী শিশুরা পর্যটকদের উপহার দেয় টকটকে লাল জবা। আপনারা দিতে পারেন চকলেট। ভালোবাসা বিনিময়।
এরপর পালা সূর্যাস্ত দেখার, হেলিপ্যাডে। অদ্ভূত সুন্দর এক সন্ধ্যা, আপনার মন প্রাণ জুড়িয়ে দেবে।
ভ্রমণশেষে কটেজে ফিরেই বার-বি-কিউ পার্টির আয়োজন শুরু। বলে রাখা ভালো, সাজেকে দিনে হোটেলগুলোতে অর্ডার দিলে বা নিজস্ব ব্যবস্থায় খাবারের বন্দোবস্ত না করা হলে রাতে অভুক্ত থাকতে হবে। এখানে বিদ্যুত নেই বলে জেনারেটর চলে। চার্জার- ব্যাটারি- পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখা ভালো। এ গেলো সাজেকের কথা। এছাড়াও খাগড়াছড়ি সদর ও আশেপাশে পাবেন, রিসং ঝরণা, আলুটিলা গুহা, ঝুলন্ত ব্রিজসহ বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র, যেগুলো কম খরচে দু-তিনদিনে আরামসে ঘুরে আসা সম্ভব।