1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ক্ষমতায় বসেই অনেক কিছু পাল্টে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ক্ষমতায় বসেই অনেক কিছু পাল্টে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুরোনো অনেক আইন বাতিল করেছেন। অনেক কিছুই এখন ওলট–পালট। তাঁর এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ধারা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁর তড়িঘড়ি জারি করা নির্বাহী আদেশের প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পড়তে পারে বিশ্বজুড়ে।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে গত সোমবার জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। এরপর দুই দফায় প্রায় অর্ধশত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। প্রথম দফায় রাজধানীর ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনায় অভিষেক প্যারেডের পরপরই, আর দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে। এ সময় সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপও চালিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
অভিবাসন থেকে পরিবেশ, সরকারি নিয়োগ থেকে নাগরিকত্ব—নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোন বিষয়ে বদল আনেননি ট্রাম্প? ক্ষমতায় বসে কলমের এক খোঁচায় ক্ষমা করেছেন ২০২১ সালে ক্যাপিটলে হামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে। এমন কিছু ঘোষণা দিয়েছেন, যার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। দেশের বাইরে থেকেও ট্রাম্পের নানা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া আসছে।
এসব পরিবর্তনের বিষয়ে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় থেকেই বলে আসছিলেন ট্রাম্প। গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তা মেনেই বিপুল ভোটে তাঁকে জয়ী করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছেন। সোমবার অভিষেক ভাষণেও ট্রাম্প বলেছেন, এই নির্বাহী আদেশগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার যাত্রা শুরু হবে।

সীমান্তে জরুরি অবস্থা, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল
ক্ষমতায় বসার দিনই অবৈধ অভিবাসীদের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। সে কথার কোনো নড়চড় হয়নি। সোমবার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তিনি। এখন চাইলে সেখানে মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করতে পারবেন। এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ।

সংবিধানের তোয়াক্কা না করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এতে এখন থেকে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে না। ট্রাম্পের এই আদেশ মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের বিরুদ্ধে যায়। ১৮৯৮ সালের ওই সংশোধনীতে বলা হয়, মার্কিন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করা সবাই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দিন ট্রাম্পের উসকানিতে ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ১৪০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল চারজনের। দাঙ্গার পর ট্রাম্পের বিপুলসংখ্যক সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে সোমবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। যদিও এদিনই সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিবারের সদস্যসহ তাঁর প্রশাসনের একদল কর্মকর্তাকে আগাম সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কড়া সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া আরও কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। সেগুলোর মাধ্যমে তিনি বাতিল করেছেন বাইডেনের বিভিন্ন নীতি; মাদক চক্রগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে; সহজ হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া; স্থগিত হয়েছে সামরিক বাহিনীসহ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগ; বন্ধ হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ; চালু করা হয়েছে সরকারের কার্যকারিতা মূল্যায়ন–সংক্রান্ত বিভাগ—‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’; নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের; বাইডেন প্রশাসনের অনুসন্ধানমূলক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিগত প্রশাসন যেসব ‘অপকর্ম’ করেছে সেগুলো সংশোধন করা যায়।

আন্তর্জাতিক সংস্থা, চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের উদ্যোগ
নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জলবায়ু–সংকট নিরসনে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে প্রথম মেয়াদেও একই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরে তা আবার বহাল করেন। সেদিকেই ইঙ্গিত করে এই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘কী মনে হয়, বাইডেন এটা করতে পারতেন? আমার মনে হয় না।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন ট্রাম্প। সংস্থাটিতে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের হিসাবে তা মোট অনুদানের ১৮ শতাংশ। সেখান থেকে সরে আসতে চান নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র আবারও বিবেচনা করে দেখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।
সোমবার ট্রাম্পের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু ছিল পররাষ্ট্র দপ্তরও। এদিন সীমান্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দপ্তরের এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলা হয়। সিনেটের ভোটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মার্কো রুবিও। এ ছাড়া ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের নিয়োগ দেওয়া সহস্রাধিক ব্যক্তিকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেবেন তিনি।
এরই মধ্যে সরকারের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরা হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের খেলাধুলা, স্বাস্থ্য-সবলতা ও পুষ্টিবিষয়ক পরিষদের হোসে আন্দ্রেজ, জাতীয় অবকাঠামো উপদেষ্টা পরিষদের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলার্সের ব্রায়ান হুক ও রপ্তানিবিষয়ক পরিষদের কেইশা ল্যান্স বটমস।

প্রথম দিনেই বিশ্ব অর্থনীতি, গাজা, রাশিয়া ইস্যু
ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প। তবে সোমবার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। শুধু বলেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ খবরেই দরপতন হয়েছে দুই দেশের মুদ্রার। বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম। প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারেও।

অভিষেকের দিন বৈশ্বিক অঙ্গনে সাড়া ফেলার মতো কিছু বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। উঠে এসেছে পানামা খাল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও। নির্বাচনে জয়ের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ কয়েকবার পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। আর সোমবার বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই পানিপথের চারপাশে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং চীনই কার্যত পানামা খাল পরিচালনা করছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ আটকে দিয়েছেন ট্রাম্প। ঘোষণা করেছেন মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার। নতুন মেয়াদের শুরুর দিনে গ্রিনল্যান্ড প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, গ্রিনল্যান্ডের জনগণ ডেনমার্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুখী থাকবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে আগে থেকেই তৎপর ছিলেন ট্রাম্প। একটি শান্তিচুক্তি নিয়েও আলোচনা শুরু করেছিলেন। এই যুদ্ধ নিয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর দলের প্রধান রবার্ট উইলকি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে যুদ্ধ থামাতে বলবেন ট্রাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও ফোন করবেন তিনি।
তবে সোমবার ট্রাম্পের একটি বক্তব্য হতাশা জাগানোর মতো। হোয়াইট হাউসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের সময় তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে তিনি আশাবাদী নন। দীর্ঘ ১৫ মাস পর গত রোববার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক এই আদেশের ব্যাপ্তি সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি। এই আদেশ কী ধরনের কর্মসূচি, দেশ, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা–ও স্পষ্ট হয়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com