শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

কোলাহল থেকে অনেক দূরে

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

কমবেশি আমরা সবাই এই পান্ডামিকের বন্দি জীবনের ভুক্তভুগি। ছোটোবড়ো সবাই যেন একই ঘরের মধ্যে থেকে, একই বাতাস গ্রহণ করে, একই মানুষ দেখে হাফিয়ে উঠেছি। একসময়ের “Home sweet home” যেন এখন “Home bitter home” এ পরিনিত হয়েছে। যাহোক, এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা প্ল্যান করে আগাতে থাকি একটি Natural Escape এর জন্য। অপেক্ষা করতে থাকি পান্ডামিকের অবস্থার উন্নতি এবং পাবলিক হেলথের নির্দেশনার জন্য। অবশেষে পরিস্থিতি অনুকূলে আসলো, এবং আমরা আমাদের প্লানকে কার্যকরী করতে সমর্থ হই, সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।

গত উইকেন্ডে আমরা টরোন্টোর উত্তরে Huntsville শহরের কিছু উত্তরে Algonquin Park সংলগ্ন একটি প্রাইভেট ক্যামগ্রাউন্ডে যাই। এই ক্যাম্পগ্রাউন্ডে আমি আগে গেছি, কিন্তু সম্প্রতি এদের মালিকানা পরিবর্তন হওয়াতে সার্ভিস আগের থেকে অনেক ভালো। ছোটবড় সবার জন্য খেলাধুলা বা Entertainmentএর যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে। আমাদের বোড়োদের সাথে ছিলো ৬ জন ছোট সদস্য। সব থেকে ছোটজনের বয়স ৩ বছরের মতো, আর বড়জনের বয়স ১১ বছর। ছোট জন তানভীর/সাদিয়ার কন্যা সুনাইরা, সে এবার গিয়েছিলো শুধু তার বাবার সাথে কারণ মা কাজে ব্যাস্ত ছিল, কিন্তু তাতে তার কোনো সমস্যা হয় নি। এই ক্ষুদে বালিকা আমাদের সাথে তার ১৭ মাস বয়স থেকে কাম্পিঙে যায়। তার অফুরন্ত Energy আর চঞ্চলতা মাতিয়ে রেখেছিলো পুরা গ্রূপকে। রাতের ঠান্ডা বা মশার কামড় কোনোকিছুতেই তার কোনো পরোয়া নেই। সে নতুন, পুরাতন, চেনা বা অচেনা সবার সাথেই তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক।

তাপমাত্রা ভালোই ছিলো। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। দিনে গরম থাকলো রাতে ঠান্ডা ছিল। তাপমাত্রা হাইকিং, সুইমিং বা বিভিন্ন এক্টিভিটিসের জন্য অনেক ভালো ছিল। ৩টি দিন খুবিই ভালো কেটেছে। বাচ্চারা নির্দ্বিধায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ছাড়া ৩টি দিন পার করেছে। আমাদেরও ছবি তোলা ছাড়া ফোনের তেমন ব্যবহার হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ফোনের ডেটা অফ করে রেখেছিলাম। দীর্ঘদিন পরে ফুটবল, বাস্কেট বল, ভলিবল এবং ব্যাডমিন্ট খেলা হয়েছে। সকাল-বিকাল হাইকিং করেছি এবং পানিতে সাঁতার কাটাসহ অন্নান্য এক্টিভিটিসও করা হয়েছে। ফল, ২ পাউন্ডের মতো ওজন বিদায়।

তবে সবথেকে আমার ব্যাক্তিগতভাবে আকর্ষণীয় বিষয় হলো সন্ধ্যাবেলা বাচ্চাদের নিয়ে ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে বিভিন্ন গেম এবং জীবনের বিভিন্ন ব্যাপারে কনভারসেশন। বাচ্চাদেরও এটি খুব প্রিয় বিষয়, যেটি তাদের মধ্যে জরিপ করে জানা গেছে। এবার তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল তারা ১ মিলিয়ন ডলার পেলে প্রথম ৩ টি কাজ কি করবে, তাদের এক দিনের জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী বানালে তারা প্রথম ৩টি জিনিস কি করবে, তাদের কাছে জীবনের জন্য ৩টি অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ইত্যাদি। এছাড়া তাদেরই পছন্দের বিভিন্ন গেম। আমি তাদের মূল্যবোধ সমন্ধে জেনে খুবই আনন্দিত। এই বাচ্চাগুলি ভিন্ন পরিবারের এবং ভিন্ন দেশেরও বটে কিন্তু তাদের সবারই কিছু কিছু মূল্যবোধ একই রকম। যেমন এরা সবাই অন্যকে সাহায্যের মানসিকতা ধারণ করে। তারা তাদের ট্রেডিশন এবং বাবা-মাকে কেয়ার করে, এবং পরিবেশ তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এক মিলিয়ন ডলার পেলে প্রথমে কি করবে। এর উত্তর শুনে কিছুটা আবেগে প্রবন হতে হয়। আমার নেপালি বন্ধুর ৫ বছেরে মেয়ে ড্যানিকা বলে, “আমি প্রথমে আমার বাবা-মাকে দেশে যাওয়ার একটা টিকেট কেটে দিবো, তারপর গরিবদের কিছু দিবো”, আমার ভাগ্নে রাজ্ বলে, ” আমি আমার মাকে ১০০,০০০ ডলার দিবো আর বাংলাদেশের গরিবদের দিবো” আরেকজন বলে “আমি আফ্রিকার মানুষদের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবো”. ইত্যদি অনেক মজার এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনা হয়।

আর একটি জিনিস লক্ষণীয় যে, এরা প্রশ্নের উত্তর খুব articulate way তে দেয়, যেটি আমি আমাদের অনেক বোড়োদের মধ্যে দেখি না। ওদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিনিস শেখারও আছে। আমাদের শত স্ট্রাগগল এবং বাধাবিপত্তির মধ্যে দিয়ে এই বাচ্চারা যে এসমস্ত মূল্যবোধ ধারন করে বড়ো হচ্ছে, সেটি সত্যিই Inspiring . দিনশেষে বাড়ি-গাড়ি, অর্থ-কড়ি কম থাকলেও আপনার বাচ্চার মূল্যবোধটি যদি ঠিক থাকে এবং সে সেইভাবে এগিয়ে যেতে পারে তাহলেই, আমি মনে করে আমাদের কষ্টের অনেক সার্থকতা।

ক্যাম্পিংয়ে যাওয়া, সবকিছু সেট আপ করা, খাওয়া দাওয়া, টেন্টের মধ্যে রাত যাপন ইত্যাদি একেবারে আরামের নয়। খাটাখাটনিও আছে, তবে আপনি এবং আপনার পরিবার যা অর্জন করবেন সেটি মূল্যহীন। শহরে ঘরের মধ্যে থেকে, বা ৫ ষ্টার হোটেলে ভ্যাকেশনে গিয়ে তারা প্রকৃতিকে হয়তো ছবিতে/টিভিতে দেখবে, কিন্তু বাস্তবে দেখার অভিজ্ঞতা হবে না। তারা জানবে না যে আল্লাহতালার সৃষ্টি কত অপূর্ব এবং বিশাল। ক্যাম্পিংয়ে গেলে আপনাকে যে টেন্টেই থাকতে হবে এমন নয়, আপনি লগ কেবিনে, ট্রেইলারে বা Yurt এ থাকে পারেন। আমরা অন্তত বছরে একবার টেন্ট ক্যাম্পিং পছন্দ করি কারণ এতে নিজেরা এবং বাচ্চাদেরও একটা ভিন্নধরনের অভিজ্ঞতা হয়।

আর ক্যাম্পিংকালীন সমস্ত কার্যক্রমের মধ্যে বাচ্চারা টিম-ওয়ার্ক এবং সলিডারিটির অনেক উদাহরণ দেখতে পায় এবং নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে। রাতে কিছুটা ঠান্ডা, কিছু মশার কামড়, বাসার মতো থাকা বা খাওয়া দাওয়া নয় তবুও বাচ্চাদের আসার সময় মন খারাপ থাকে, এবং প্রথম দিন থেকেই তাদের প্রশ্ন, “When we are leaving”. আর আমাদের বোড়োদের, ফিরে আশা হয় পরিপূর্ণ energy নিয়ে।

সাথে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ ও ছবি থেকে বুঝতে পারবেন ছোটোবড়ো সবাই কতটা Vibrant ছিল। আর হাঁ, সবাই মিলে এতো সুন্দর সময় কাটানোর মধ্যে কোনো এলকোহল, স্মোকিং বা কোনো কোনো ধরণের নেশার জিনিস ছিল না, এবং ওগুলি আমাদের জন্য সার্বক্ষণিক বর্জনীয় !

ভালো থাকবেন, এবং সময় বা সুযোগ হলে ঘুরে আসুন ২/৪দিন, এই শহর থেকে দূরে কোথাও !

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com