বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন

কেরালার যে ৬ জায়গা ঘুরতে যেতে পারেন

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩
কেরালা কয়েক শতাব্দী ধরে বিকশিত বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কারণে পরিচিত। কেরালার আছে সবচেয়ে সহজ জীবনধারা, যা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও শিল্প সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এখানে আছে বন্যপ্রাণী, সৈকত ও ব্যাকওয়াটার। সবমিলিয়ে কেরালার জাদুকরী সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

ভারতের সবচেয়ে ‍সুন্দর রাজ্যগুলোর একটি কেরালা। ঐতিহাসিকভাবে এটি কেরালাম হিসেবে পরিচিত। এই রাজ্যটি দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে অবস্থিত। ভ্রমণের জন্য কেরালা খুবই উপযুক্ত। প্রচলিত আছে, একবার কেরালা ঘুরলে এখানকার প্রকৃতি মনের মধ্যে প্রশান্তি এনে দেয়। রাজ্যটির নামের সঙ্গেও এই তত্ত্বের ব্যুৎপত্তিগত সম্পর্ক আছে। রাজ্যটির নাম ‘কেরা’ ও ‘আলাম’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কেরা শব্দের অর্থ নারকেল গাছে ও আলাম মালায়ালাম (রাজ্যের ভাষা) থেকে এসেছে। কেরালাকে ‘নারকেলের রাজ্য’ নামেও ডাকা হয়।

কেরালা কয়েক শতাব্দী ধরে বিকশিত বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কারণে পরিচিত। কেরালার আছে সবচেয়ে সহজ জীবনধারা, যা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও শিল্প সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এখানে আছে বন্যপ্রাণী, সৈকত ও ব্যাকওয়াটার। সবমিলিয়ে কেরালার জাদুকরী সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

যারা ভারতের অপরূপ সুন্দর এই রাজ্যটি ঘুরতে যেতে চান, তারা কেরালার দর্শনীয় ৬টি স্থানের তথ্য জেনে নিন।

আলেপ্পি

আল্লেপি কেরালার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এটি ব্যাকওয়াটার ট্রিপ ও হাউসবোটের জন্য পরিচিত। কেরালা ভ্রমণ করতে চাইলে আলেপ্পি অবশ্যই সেরা পছন্দ। এর চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সবুজ আর সবুজ।

বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব: কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৫১ কিলোমিটার।

ভ্রমণের সেরা সময়: জানুয়ারি-মে, সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর।

দর্শনীয় স্থান: আলাপ্পুঝা সৈকত, কুমারকোম পাখি অভয়ারণ্য, মারারি সৈকত, পুন্নামাদা হ্রদ, রেভিকারনুকরণ জাদুঘর।

আবহাওয়া: গরম ও মনোরম। তবে, বর্ষা মৌসুমে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

আলেপ্পিকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এখানকার ব্যাকওয়াটারে হাউসবোট ভ্রমণ ধান খেত, ছোট চ্যাপেল, মাছ ধরা অঞ্চল, হাঁস ও শাপলাসহ সব ধরনের ল্যান্ডস্কেপ দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেবে। যা চিরকাল আপনার মনে অঙ্কিত থাকবে। আপনি আলেপ্পির যেখানেই খাবার খান না কেন কলা পাতায় খাবার সরবরাহ করা হবে। যা আপনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। সুতরাং আপনি যদি কেরালার সেরা ব্যাকওয়াটার ট্রিপের খোঁজে থাকেন, তাহলে এটি হবে আপনার জন্য নিখুঁত গন্তব্য। আলেপ্পিতে গেলে অবশ্যই ঘুরবেন- আর্থুনকাল চার্চ, ভগবতী মন্দির, শ্রী কৃষ্ণ মন্দির, কৃষ্ণপুরম প্রাসাদ, পাথিরামনাল এবং ওপরে উল্লিখিত স্থানগুলো।

মুন্নার

পুরো দক্ষিণ ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় হিল স্টেশন, অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সবুজ বলয়ের জন্য পরিচিত মুন্নার।

বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব: কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৪৩ কিলোমিটার।

ভ্রমণের সেরা সময়: সারা বছর।

দর্শনীয় স্থান: ব্লুসম পার্ক, আট্টুকাল জলপ্রপাত, কুন্ডালা লেক, পোথামেদু ভিউপয়েন্ট, মারাইউর দোলমেনস, এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান, লাইফ অব পাই চার্চ, লকহার্ট গ্যাপ ও চিয়াপাড়া জলপ্রপাত।

আবহাওয়া: ঠান্ডা ও মনোরম। এমনকি গ্রীষ্মেও এসির প্রয়োজন হবে না।

মুন্নার হলো শীর্ষ স্থানীয় হিল স্টেশন। এটি ৮০ হাজার মাইল সবুজ চায়ের খেতে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছে। এই সবুজ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এরসঙ্গে আছে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ি উপত্যাকা, যেখান থেকে উড়ন্ত মেঘ ছুঁয়ে যায়। এখানকার পাহাড়গুলো মূলত চা চাষের জন্য নকশা করা হয়েছে। এরসঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে এটি বিলাসবহুল জৈব উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। যেখানে আছে পাহাড়ি সিঁড়ি বা ধাপ, চা বাগান ও অসংখ্য জলপ্রপাত।

ওয়ানাড

বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব: কোঝিকোড় বিমানবন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার।

ভ্রমণের সেরা সময়: জুন-অক্টোবর।

দর্শনীয় স্থান: বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান, কালপেট্টা, সুলথান বাথেরি, মানানথাভাডি, লাক্কিডি, ওয়ানাড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, তুষারগিরি জলপ্রপাত ও থিরুনেলি।

আবহাওয়া: তীব্র ঠান্ডা। রোমান্টিক ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।

ওয়ানাড হলো কেরালার ‘সবুজ স্বর্গ’। কারণ এটি শান্ত, বন্যপ্রাণী, প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিশেলে অপরূপ। জীবন ও প্রকৃতি এখানে মিশে একাকার। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য কেরালার সেরা স্থান এটি। এছাড়াও, ওয়ানাড আদাবাসী ঐতিহ্যের পাশাপাশি কৃষিপ্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানকার সঙ্গে কেরালার অন্যান্য জেলার তুলনা করা হলে মনে হবে কেরালা খুবই কম জনবহুল এলাক। এর ট্রেকিং ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের কারণে অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত।

থেক্কাডি

কেরালার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে থেক্কাডি বন্যজীবন অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে আছে বাঘ, হাতি, গৌর, সাম্বার ও সিংহ, লেজযুক্ত ম্যাকাকসহ অনেক প্রজাতির প্রাণী।

বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব: ত্রিবান্দ্রম বিমানবন্দর থেকে ২৫৭ কিলোমিটার।

ভ্রমণের সেরা সময়: মার্চ-মে।

দর্শনীয় স্থান: পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান, টাইগার ট্রেইল, আব্রাহামের স্পাইস গার্ডেন, থেক্কাডি লেক, বাঁশের রাফ্টিং, মঙ্গলা দেবী মন্দির ও মুরিক্কাডি।

আবহাওয়া: মোটেও মনোরম নয়।

থেক্কাডি পেরিয়ার হ্রদের তীরে অবস্থিত একটি বন। এর আয়তন প্রায় ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার ঘন বন। এই জায়গাটির বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বছরের পর বছর ধরে সারা বিশ্বের দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে আসছে। সম্ভবত বন্যপ্রাণীদের জন্য কেরালার সেরা জায়গা থেক্কাডি। এখানকার হ্রদে দুর্দান্ত নৌকা ভ্রমণের সুযোগ আছে। এখানকার ঘন বনটি ভারতীয় হাতি, চিতাবাঘ, ভারতীয় বাঘ, বাইসন, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল। থেক্কাডি পর্যটন বিভাগ আপনাকে এমন একটি রুট সরবরাহ করবে, যেখান দিয়ে হাতির ওপর চড়ে বা পায়ে হেঁটে বনের মাঝখানে যাওয়া যায়।

কোচি

আরব সাগরের উপকূলীয় রেখা বরাবর অবস্থিত কোচি কেরালার দর্শনীয় একটি স্থান। এটি দক্ষিণ ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় শহর।

ভ্রমণের সেরা সময়: মার্চ-মে।

দর্শনীয় স্থান: ফোর্ট কোচি, মাট্টানচেরি প্রাসাদ, ইন্দো-পর্তুগিজ জাদুঘর, তিরুপুনিথারা হিল প্যালেস, এর্নাকুলাম শিব মন্দির এবং ভিগাল্যান্ড।

আবহাওয়া: খুবই চমৎকার।

কোচি কেরালার কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত। এটি কেরালা ভ্রমণের সেরা জায়গা বলা যেতেই পারে। কারণ, এখান থেকে রাজ্যটিকে বেশি উপভোগ করতে পারবেন। এ কারণে কোচি থেকেই কেরালা ভ্রমণ শুরু করা উচিত। যদিও কোচি নামে পরিচিত তবে, পুরো এনারকুলামে এমন কিছু আছে যা মিস করা একদমই উচিত হবে না। কারণ এটি আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এবং শহরটিও যথেষ্ট আধুনিক। এছাড়া কোচি ব্রিটিশ, ডাচ ও পর্তুগিজ সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত পুরোনো শিল্প ও স্থাপত্যে পূর্ণ।

এনারকুলাম প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যের জন্য বিশিষ্ট ছিল এবং পরে কোচিতে রূপান্তরিত হয়। যেটি সমগ্র জেলার একটি আকর্ষণীয় শহর ও কেরালার বাণিজ্যিক রাজধানীতে পরিণত হয়। এনারকুলাম ‘আরব সাগরের রানী’ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা বন্দর। ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ, ডাচ, আরব, পর্তুগিজ, এমনকি চীনারাও এখানে এসেছিলেন এবং তাদের ছাপ রেখে গেছেন। মূলত তখন থেকেই চারপাশে শিল্প ভবনসহ একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে।

কোভালম

কোভালম আয়ুর্বেদিক চিকিত্সার জন্য পরিচিত। এটি দক্ষিণ ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সেরা একটি।

বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব: ত্রিবান্দ্রম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৩.৩ কিলোমিটার।

ভ্রমণের সেরা সময়: নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি।

দর্শনীয় স্থান: বাতিঘর সৈকত, করমানা নদী, হাওয়াহ সৈকত, হালসিয়ন ক্যাসল, কোভালম আর্ট গ্যালারি, ভিজিনজাম রক কাট গুহা মন্দির, ভালিয়াথুরা পিয়ার ও নেয়ার বাঁধ।

আবহাওয়া: গরম।

ভালো চিকিৎসা ও থেরাপিউটিক ম্যাসেজের জন্য পরিচিত কোভালম। কেরালা ভ্রমণের জন্য সুবিধাজনক স্থানগুলোর একটি এটি। কারণ, এখানার চিকিত্সা ব্যবস্থা পর্যটনকেও উত্সাহিত করে। ফিরোজা ব্লুজের নীচে ক্রিসেন্ট সৈকত এবং দক্ষিণ দিকের বাতিঘরসহ কোভালম ভ্রমণে গিয়ে তাদের নববর্ষ উদযাপনের পরিকল্পনা করতে পারেন। আপনি বাতিঘর থেকে চাঁদের আকৃতির সৈকত ও ভিজিনজাম মসজিদের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পাবেন। কোভালম নারকেল গাছে পূর্ণ এবং ত্রিবান্দ্রম শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com