ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছেন অভাবের সঙ্গে। কখনো রাত কাটিয়েছেন না খেয়েই। পরিবারের বাড়তি আয়ের আশায় বাবার সঙ্গে কাজ করেছেন কুলি হিসেবে। তখন থেকেই শুরু হয় তার কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের গল্প। পড়ালেখা শেষ করে পাওয়া চাকরিও ছেড়ে দেন ব্যবসা করবেন বলে। ওই ব্যবসাই এখন তাকে বানিয়ে দিয়েছে এক সেলফ মেড মিলিয়নিয়ার। বলছিলাম ভারতের ব্রেকফাস্ট কিং ‘পিসি মুস্তাফা’র কথা।
একটি কফি বাগানে কুলি হিসেবে কাজ করতেন পিসি মুস্তাফার বাবা। দিনে আয় হতো ১০ টাকারও কম। তাই তিনবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়া তাদের কাছে ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাবার সঙ্গেই কুলির কাজ করতেন মুস্তাফা। স্কুলব্যাগ নামিয়ে পিঠে চাপাতেন ভারী কাঠের বাক্স। অল্পবয়সে এমন খাটুনির ধকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ত শরীর। তাই সন্ধ্যা নামতেই ঘুম পেয়ে যেত তার। এ কারণে ফেল করেছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। তখনই ভেবে নিয়েছিলেন, পরিশ্রম করে বদলে দেবেন নিজের জীবন। বাবার সঙ্গে কাজের পাশাপাশি বাড়তি মনোযোগ দেন পড়াশোনায়। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় অর্জন করে নেন প্রথম স্থান। এর পর কলেজ পেরিয়ে ভর্তি হোন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। পড়ালেখা শেষে পেয়ে যান বহুজাতিক এক প্রতিষ্ঠানে উচ্চবেতনের চাকরি। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল দেশেই কিছু করার। তিনি ঠিক করলেন, ব্যবসা করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন।
ভারতীয়দের অত্যন্ত জনপ্রিয় সকালের খাবার ইডলি-দোসা। একদিন মুস্তাফার এক আত্মীয় দেখলেন, স্থানীয় দোকানগুলোয় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অস্বাস্থ্যকর উপায়ে ইডলি-দোসা বানানো হচ্ছে। তখন এ বিষয়টি নিয়ে মুস্তাফার সঙ্গে কথা বলে ঠিক করলেন এই ইডলি-দোসা তৈরির উপকরণ বানানো শুরু করবেন তারা।
একটি ৫০ বর্গফুট রান্নাঘরে ২০০৫ সালে শুরু হয়েছিল পিসি মুস্তাফার প্রতিষ্ঠান আইডি ফ্রেশ ফুড। শুরুতে প্রতিদিন ২০টি দোকানে ১০০ প্যাকেট ইডলি-দোসার উপকরণ তৈরি করতেন তিনি। একটি সেকেন্ড হ্যান্ড বেবিট্যাক্সিতে করে তা পৌঁছে দিতেন দোকান ও গ্রাহকদের কাছে। ২০১৪ সালে একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি থেকে ৩৫ কোটি টাকা পেয়েছিল আইডি ফ্রেশ ফুড। তখন থেকেই বৃহৎ পরিসরে সাজানো-গোছানো হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এখন ৮০ হাজার বর্গফুট জায়গার কারখানা রয়েছে তার। সেখানে কাজ করছেন দুই হাজারেরও বেশি ব্যক্তি। প্রতিদিন ৫৫ হাজার কেজি ইডলি-দোসা তৈরির উপকরণ, সাড়ে ৩ লাখ পরটা ও ১০ কেজি ভাডা প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের।
করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যেও ২০২০ সালে পিসি মুস্তাফার প্রতিষ্ঠান আয় করেছে ২৯৪ কোটি টাকা। রেডি টু মেক ব্রেকফাস্ট তৈরি করায় তাকে ডাকা হয় ‘ব্রেকফাস্ট কিং’ নামে। ব্যবসার প্রসার ভারত ছাড়িয়েও নিয়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং কো-ফাউন্ডার হিসেবে রয়েছেন।