কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন। ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জাল ভিসা, এমনকি আঙুলের ছাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ডও। এমন একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ৩৫টি পরিবার।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) চক্রটির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করার পর এসব তথ্য জানা যায়।
অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাত্র ৪ মাসে ৩৫ ব্যক্তি থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইস্ট বেঙ্গল ওভারসিজ নামে একটি প্রতারক চক্র। টাকা নেয়ার পর থেকেই লাপাত্তা চক্রটি।
কুয়েতে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে সময় লেগেছে মাত্র ২ মাস। চলতি মাসের ১২ তারিখের ফ্লাইট বুকিং স্লিপ পেয়ে বাস্তবে আকাশে ওড়ার আগেই মনের আকাশে উড়ছিলেন কুমিল্লার সুমন ও তার পরিবার। সুদে টাকা ধার করে ৫ লাখ টাকা প্রতারকদের হাতে দিয়ে এখন তারা নিঃস্ব ও দেনাগ্রস্ত। সুমনের মতো এমন অবস্থা আরও ৩৪ জনের।
ভুক্তভোগী সুমন জানান, তারা ১২ জন একসঙ্গে মিলে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেন ইস্ট বেঙ্গল ওভারসিজের প্রতারকদের হাতে। তাদের কাছে জমা দেয়া টাকাগুলো যদি ফেরত না পান, তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না বলেও জানান তিনি।
অন্য ভুক্তভোগীরা জানান, তারা একেকজন ৮-৯ লাখ টাকা করে জমা দিয়েছেন। তাদেরকে যে প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে, সেখানে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে এটি জাল ভিসা। অনলাইনে চেক করার পরও ভিসার অনুমোদন দেখিয়েছে বলেও জানান তারা।
জানা যায়, প্রতিটি ভিসা অনলাইনে সঠিক দেখালেও, আদতে সেগুলো ছিল জাল। কারণ, যে ওয়েবসাইটে ভিসাগুলো চেক করা হচ্ছে, সেটিই ছিল ভুয়া। ওই ওয়েবসাইটে জাল ভিসাকে সঠিক আর সঠিক ভিসাকে দেখায় জাল হিসেবে।
কুয়েত দূতাবাস অনুমোদিত এজেন্সির কর্মকর্তা আব্দুর রউফ মজুমদার বলেন, ‘এ ভিসাগুলো আমার কাছে আপনারা (সময় সংবাদের প্রতিনিধি) পাঠানোর পর আমি সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বাসিতে পাঠিয়েছি। অ্যাম্বাসি আমাকে জানিয়েছে যে, এগুলো জাল ভিসা। হাউসের ভিসা সাধারণত আমরা চেক করতে পারি না। সেটি আমরা দূতাবাসকে দেখাই। আর কোম্পানির ভিসাগুলো আমরা চেক করে বলতে পারি আসল নাকি জাল।’
প্রতারকদের দেয়া ভিসার বিপরীতে ভুক্তভোগীরা পেয়েছিলেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ডের প্রিন্টেড কপিও।
তবে জাল ভিসার বিপরীতে কীভাবে দিলেন আঙুলের ছাপ, কীভাবে করলেন তিন দিনের ট্রেনিং–এসব বিষয়ে জানতে কাকরাইল বিএমইটির সদর দফতরে গেলে প্রবেশই করতে দেয়া হয়নি সময় সংবাদের প্রতিবেদককে। দিনভর অসংখ্যবার চেষ্টা করেও মেলেনি উত্তর পাওয়া যাবে এমন ব্যক্তির সাক্ষাৎ।
প্রতারণা হয়েছে প্রতিটি ধাপেই। ফ্লাইটের টিকিট বুকিং দিলেও টাকা না দেয়ায় বাতিল হয় সব টিকিট। ভিসা জাল হলেও ১৪০০০ টাকা নিয়ে করানো হয়েছে মেডিকেল টেস্ট। খোঁজ করা হলো স্মার্টকার্ডে উল্লিখিত আরএ ৯১২ নম্বর এজেন্সির। যাদের সহযোগী পরিচয়ে প্রতারণা চালিয়েছে প্রতারকরা। বায়রার হালনাগাদ তালিকায় ঠিকানা পাওয়া গেলেও ঠিকানায় গিয়ে জানা গেল, পাঁচ বছর আগে অফিস ছেড়েছেন তারা।
আর রাজধানীর বনানীর ৮৬ নম্বর ভবনে খোঁজ না মিললেও ৮১ নম্বর ভবনে দেখা মিলল এজেন্সির সাইনবোর্ড। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা স্বীকার করলেও স্বত্বাধিকারীর চেয়ারে বসা ব্যক্তি অস্বীকার করলেন ইস্ট বেঙ্গল ওভারসিজের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্কের কথা।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম সম্পাদক এম টিপু সুলতান বলেন, যখন কোনো প্রতারণা হয়, তখন এটার সঙ্গে কিন্তু একটা চেইন থাকে, অনেকেই যুক্ত থাকে। যদি ভিসা সঠিক ছাড়া ফিঙ্গার হয়ে থাকে বা কেউ করে থাকে, তাহলে তারাও কিন্তু এ অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত।
প্রতারকরা ছয় বছর ধরে এ অফিস ব্যবহার করার কথা বললেও আসলে ভাড়া নিয়েছিল মাত্র চার মাস আগে।
Like this:
Like Loading...