দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর এবং পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকার নাম নিলে মালয়েশিয়া অবশ্যই সেখানে থাকবে। আর মালয়েশিয়াতে ঘুরতে আসলে যেকারও প্রথম পা রাখতে হবে বিশাল এক বিমানবন্দরে। যার নাম, কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ)। এটি মালয়েশিয়া তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান বিমানবন্দর। সিপাং শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই বিমানবন্দর আধুনিক বিমানবন্দরের এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলা চলে।
বিমানবন্দরটি মূলত দুটি প্রধান ভবন এবং স্যাটেলাইট ভবন দ্বারা নির্মিত। মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যশৈলী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরটি মালয়েশিয়ান সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে যা স্থান দখল করে রয়েছে বহুবছর ধরে।
মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী-পুত্রজায়া মালয়েশিয়ার দক্ষিণ করিডোরের শীর্ষে অবস্থিত। দেশের অন্যান্য শহরের সাথে উপদ্বীপ পুত্রজায়ার সংযোগ ঘটাবার জন্য একটি অনেক বড় অবদান রেখেছে কেএলআইএ। পুত্রজায়া শহরের সাথে সারাদেশ একটি উচ্চ গতির রেল ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযুক্ত। আর এই রেলপথটি মূলত কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের বিশেষ সুবিধার জন্য নির্মিত। এখান থেকে শহরে নেমে একটি গাড়ি চালিয়ে পুত্রজায়া যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে।
কেএলআই-এর প্রধান দুটি দেশীয় অপারেটর হল মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস এবং এয়ার এশিয়া। কেএলআইএ-এর কাছেই রয়েছে লো কস্ট ক্যারিয়ার টার্মিনাল (এলসিসিটি) যা পরিচালনা করে এয়ার এশিয়াকে।
এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে পেনাং, কুচিং, কোটা কিনাবালু এবং কয়েকটি অন্যান্য শহরের কয়েকটি ফ্লাইট বাদে এই দুটি টার্মিনালই একসাথে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে।
কেন কেএলআইএ বিশ্বসেরা?
আগেই বলেছি বিমানবন্দরের রয়েছে নিজস্ব রেলসেবা। পৃথিবীর খুব কমসংখ্যক বিমানবন্দর রয়েছে যারা যাত্রীদেরকে শহরে যাওয়ার জন্য রেলসেবা দিয়ে থাকে। আর এই রেলসেবা বেশ নিখুঁত বলা চলে।
তাছাড়া বিমানবন্দরে প্রধান টার্মিনালসহ সবকটি টার্মিনালে রয়েছে বিলাসবহুল লাউঞ্জ, বিভিন্ন ধরণের রেস্তোঁরা, শিশুদের খেলার ক্ষেত্র এবং শুল্কমুক্ত স্টোর। যেখানে নেশাজাতীয় পানীয় থেকে শুরু করে চকোলেট পর্যন্ত সবকিছু পেয়ে যাবেন আবার আপনার বাজেটের মধ্যেই। পাঁচ তলায় অবস্থিত মূল টার্মিনালে দশটি প্রবেশ গেটসহ প্রতিটি টার্মিনালের অভ্যন্তরে ও বাইরে একটি বিশাল গেইট। প্রতিটি গেইট নম্বর দিয়ে চিহ্নিত।
মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হলে আপনার অবশ্যই ভিসার পাশাপাশি কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। ইমিগ্রেশনে অসংখ্য কাউন্টার থাকা সত্ত্বেও, বিদেশী পাসপোর্টের জন্য সাধারণত কয়েকটি মাত্র খোলা থাকে, সুতরাং বিমানবন্দরে এসেই দীর্ঘ লাইনের মধ্যে দাঁড়াতে হতে পারে। তবে আপনি যদি কুয়ালালামপুর ত্যাগ করতে চান সেক্ষেত্রে শুল্কজনিত ঝুটঝামেলা অনেকটাই কম।
দর্শনার্থীরা এক প্যাকেট সিগারেট, এক লিটার মদ এবং ব্যক্তিগত জিনিস যেমন ক্যামেরা, প্রসাধনী, ল্যাপটপ কম্পিউটার এবং ঘড়ি আনতে পারবে। মাদক এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মালয়েশিয়ায় ড্রাগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ-এমনকি সামান্য পরিমাণে গাঁজার পাচারের ফলে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
ব্যাগ, তৈজসপত্র পরীক্ষায় বেশ দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তবে যদি অভিবাসন হয় তবে সময়টা একটু কম লাগবে। কেএলআইএ স্টাফ সদস্য যারা আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করবে তাদের অনেকেই ইংরেজিটা ঠিকঠাক জানেনা। সেজন্য ভাষাসংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে।
পুরো বিমানবন্দরজুড়ে অসংখ্য এটিএম রয়েছে। কেএলআই-এর প্রচুর সংকেত রয়েছে যাতে আপনি কখনই পথ হারিয়ে না ফেলেন। পঞ্চম তলায় ভিআইপি লাউঞ্জ এবং টাই র্যাকের মধ্যে একটি এটিএম মেশিন রয়েছে। অন্যদিকে একটি বডি শপ এবং ক্যাফে মার্কে একই ট্র্যাভেলের পাশাপাশি ট্র্যাভেলারের বারের পাশের একটি এটিএম রয়েছে।
কেএলআই-এর ব্যাংকগুলো তৃতীয় এবং পঞ্চম তলায় অবস্থিত। সিআইবিএম-এর পঞ্চম তলায় ক্যান্ডি স্টোরের পাশে এবং আরএইচবি তৃতীয় তলায় এবং পঞ্চম তলায় যথাক্রমে ডিজি কিওস্ক এবং সিআইএমবির বিপরীতে অবস্থিত। মায়াব্যাঙ্ক – মালয়েশিয়ার সর্ববৃহৎ ব্যাঙ্ক যার শাখা রয়েছে পঞ্চম তলায়।
বিমানবন্দর চেক-ইন কাউন্টারগুলোর পিছনে কেএলআইএর পঞ্চম তলায় অবস্থিত। প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। লিফট, রেস্টরুম সহ বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থা আছে তাদের জন্য। মোটকথা একজন যাত্রী ভ্রমণে যেসকল সুবিধা পেতে চায় তার সব ব্যবস্থাই রয়েছে এ বিমানবন্দরে।