বাঙালীর ট্যুর প্লান মানেই সমুদ্র দর্শন। আর সমুদ্র দর্শনে যাওয়ার প্লান করলে সবার আগে মাথায় আসে কক্সবাজারের কথা। যাতায়াত ব্যবস্থা, থাকা-থাওয়ার সুব্যবস্থা থাকায় ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের প্রথম পছন্দ কক্সবাজার। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত মানেই কক্সবাজার নয় বরং এই তালিকায় উজ্জল নাম কুয়াকাটা। যদিও বিভিন্ন কারণে অনেকটা পিছিয়ে আছে দেশের অন্যতম অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।
‘সাগর কন্যা’ হিসেবে পরিচিত কুয়াকাটাই বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দু’টোই দেখা যায়। কুয়াকাটার ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকতটি বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ সবঋতুতেই মৌসুমী পাখিদের কলরবে মুখোরিত থাকে এই সমুদ্রতট। একমাত্র কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে গিয়েই বিভিন্ন ঋতুতে সাগরের নানা রূপ উপভোগ করা সম্ভব।
ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কথা মাথায় রেখে বর্তমানে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু হোটেল ও রিসোর্ট। তারমধ্যে অন্যতম ‘সমুদ্র বাড়ি রিসোর্ট’। সমুদ্র দর্শন এর পাশাপাশি একটু গ্রামীন পরিবেশ উপভোগ ও রিসোর্টে রাত্রীযাপনের আনন্দ পাওয়া যাবে এই রিসোর্টটিতে। ছুটি কিংবা অবকাশ যাপনের জন্য সব ধরনের আধুনিক সুবিধা রয়েছে এখানে। সমুদ্র সৈকত থেকে এই রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিট। গুগল ম্যাপে খুব সহজেই রিসোর্টের লোকেশন সম্পর্কে স্পস্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
সমুদ্র বাড়ি রিসোর্টটিতে রাতে থাকার জন্য আছে এসি, নন এসি রুম। গোছানো পরিপাটি প্রতিটি রুমেই আছে আধুনিক আসবাবপত্রসহ সব রকম সুবিধা। আর লেটেস্ট ফিটিংসসহ ঝকঝকে পরিষ্কার বাথরুম। প্রতি রুমের সাথেই আছে কমপ্লিমেন্টারি ওয়েলকাম ড্রিংক্স, ব্রেকফাস্ট ও ইভেনিং স্নাক্স। আরো আছে ওয়াইফাই সুবিধা।
রুম রেট:
১. এসি ট্রিপল রুম: রেগুলার রেট ৪,০০০টাকা (৩ জনের থাকার ক্যাপাসিটি)।
২. এসি টুইন রুম: রেগুলার রেট ৩,২০০টাকা (২ জনের থাকার ক্যাপাসিটি)।
৩. এসি কাপল রুম: রেগুলার রেট ৩,২০০টাকা (২ জনের থাকার ক্যাপাসিটি)।
৪. নন-এসি টুইন রুম: রেগুলার রেট ২,৪০০টাকা।
৫. ডিলাক্স টুইন লেক ভিউ রুম: রেগুলার রেট ৪,০০০টাকা।
৬. ডিলাক্স টুইন গার্ডেন ভিউ রুম: রেগুলার রেট ৩,৫০০টাকা।
৭. ডিলাক্স কাপল রুম: রেগুলার রেট ৩,২০০ টাকা।
যেকোনো রুমে অতিরিক্ত প্রতিজনের জন্য দিতে হবে ৩০০ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে প্যাকেজের মাধ্যমে নানান অফার দিয়ে থাকে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।
খাবার:
ভোজন রসিক ট্রাভেলারদের জন্য সুখবর হলো খাবারের ব্যাপারে এই রিসোর্টটি একধাপ এগিয়ে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের খাবার অর্ডার করলেই হাজির হবে সামনে। দেশি খাবারের মধ্যে পাবেন বিভিন্ন রকমের ভর্তা, দেশি মাছের রেসিপি, শুঁটকি, ডাল। চাইলে রাতে লেকের পাশে বারবিকিউ করতে পারবেন। এখানকার কোরাল মাছের বারবিকিউটা খুবই মজার।
এছাড়া তান্দুরী চিকেন-নান, পিৎজার মতো খাবারও এখানে সহজলভ্য। এমনকি যেকোনো সময় বীচে বসেও এই রিসোর্টের খাবার অর্ডার করা যায়। শুধু ট্যুরিস্ট নয় স্থানীয়দের জন্যও হোম ডেলিভারির সার্ভিস রয়েছে।
আরো যা থাকছে:
থাকা খাওয়ার এরকম সুব্যস্থার পাশাপাশি বোটিং এবং ফিশিং করার ব্যবস্থাও রয়েছে রিসোর্টটিতে। সকাল কিংবা বিকেলে কিছুটা সময় বোটিং করেও কাটিয়ে দেয়া যায়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে আনন্দময় সময় কাটানো খুব ভালো অপশন এই সমুদ্র বাড়ি রিসোর্ট। শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি চাইলে আর ব্যস্ত জীবন থেকে একটু ছুটি পেলে প্লান করে ফেলুন কুয়াকাটা ভ্রমণের।
যেভাবে যাবেন:
এখন কুয়াকাটায় যাওয়ার জন্য নদীপথ ও সড়কপথ দু’টি পথই বেশ ভালো। ঢাকার গাবতলী থেকে বেশ কিছু এসি ও নন-এসি বাস কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যায়। তার মধ্যে হানিফ, শ্যামলী ও শাকুরা পরিবহনের বাসগুলো নিয়মিত যাওয়া-আসা করে। শাকুরা পরিবহনের এসি বাসগুলো সার্ভিস বেশ ভালো। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ও রাতে কমলাপুর এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের বিআরটিসি বাস ডিপো থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। বাসগুলো কুয়াকাটা শহরে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে স্থানীয় রিকশা বা ভ্যানে করে খুব সহজে সমুদ্র বাড়ি রিসোর্ট যেতে পারবেন।
সম্প্রতি কুয়াকাটার সবচেয়ে কাছাকাছি কলাপাড়া বা খেপুপাড়া ঘাট পর্যন্ত সরাসরি লঞ্চে যাওয়া যায়। সেখান থেকে কুয়াকাটা খুব কাছে। আগে লঞ্চে কুয়াকাটা যেতে হলে বরিশাল অথবা পটুয়াখালী নেমে বাকিটা পথ বাসে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে দুই তিন ঘন্টা সময় বেশি লাগতো। এখন খেপুপাড়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করায় সেটা অনেক সহজ হয়েছে। লঞ্চগুলো বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে যাত্রা শুরু করে। ডেক ও কেবিন ভেদে ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন হয়। সেখান থেকে অটো বা সিএনজি করে যেতে পারবেন কুয়াকাটা শহরে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে সমুদ্র বাড়ি রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিট।