মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন

কুঁড়েঘরে শিল্পের বড়াই করা বাবুই আজ বিপন্ন

  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার ’পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে।’

গ্রামবাংলা থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে শৈল্পিক কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা বিলীন হতে চলেছে।

অথচ আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা।বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কষ্টকর। প্রতিটি তালগাছে ১০০-১৫০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ১০-১২ দিন।

রিকশাচালক মোশারেফ হোসেন (৫৬) বলেন, ‘গ্রামে ৪০ বছর আগে তাল গাছে বাবুই পাখি বাসা বুনতো। পাখির কিচিরমিচির শব্দ হোনতে ভালো লাগতো। এ্যাহন আর তাল গাছও নেই আর আগের মতো পাখির ডাকও শোনা যায় না।

ভ্যানচালক ফারুক হোসেন (৫২) বলেন, ‘আগের দিনগুলোতে মোরা পাখির ডাক শুনতাম। তালগাছ কমে যাওয়ায় পাখির ডাকও কমে গেছে।’

বাবুই পাখির বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়।

সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়।চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি বিশ্বজোড়া। বাবুই পাখির বাসার ভেতর আধুনিক যুগের মত লাইটের ব্যবস্থা আছে। বাসার ভেতর একটু গোবর রাখা হয়, তার ভেতর জোনাকি পোকার মাথাটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফলে জোনাকির আলোতে বাসা আলোকিত হয়ে উঠে। কারুকার্যময় এ বাসা দেখিয়ে পুরুষ বাবুই পাখি তার প্রেমিকার মন ভুলিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে।
সুনিপুন এ কারিগর এভাবে একের পর এক বাসা তৈরী করে নতুন নতুন সঙ্গী জুটিয়ে নিজ হাতে গড়া সেই বাসায় স্বল্প দিনের সুখের ঘর বাঁধে। এভাবেই আমৃত্যু চলতে থাকে পুরুষ বাবুই পাখির বাসা তৈরী আর সঙ্গী বদলের পালা।

চা বিক্রেতা শ্যামলী রানী (৫৫) বলেন, ‘বাবুই পাখির বাসা দেখতে অনেক সুন্দর। এই বাসা নিয়ে ছোট সময়টায় আমরা পুতুল খেলতাম। বাবুই পাখির বাসায় রাতে জোনাকী পোকার মিটমিট আলো জ্বলতো, এসব দৃশ্য খুবই ভালো লাগতো।’

প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। নিচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।

বেতাগীর স্থানীয় সংগীত শিল্পী সদানন্দ দেবনাথ (৭৪) বলেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামের রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোতে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আবার তালগাছ লাগানো হলে হয়তবা বাবুই পাখি বাসা তৈরি করবে।’

বেতাগী উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি মো. কামাল হোসেন খান বলেন, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার দুপাশে তালগাছ লাগানো হলে আবার বাবুই পাখি বাসা বুনবে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com