রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন

কী রহস্য লুকিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপে

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দুই মহাদেশের মাঝবরাবর রয়েছে এক অদৃশ্য কাল্পনিক রেখা। ভুলেও সেটা টপকে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করে কোনও প্রাণী। ফলে এক পারের জীবজগৎ অন্য পারে সম্পূর্ণ অদৃশ্য! অথচ তাদের মধ্যে দূরত্ব বেশ কম। কেন ঘটেছে এ-হেন বিস্ময়কর ঘটনা? নেপথ্যে রয়েছে কোন কারণ?

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রের উপর দিয়ে টানা ওই কাল্পনিক রেখাটির নাম, ওয়ালেস লাইন। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে ক্রান্তীয় এলাকার উপরে এর অবস্থান। রেখাটির এক দিকে রয়েছে মালয় দ্বীপপুঞ্জ। অপর পারে ইন্দো-অস্ট্রেলীয় দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

এই রেখাটিকে প্রথম আঁকেন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস। বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনের মতো জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার সময়ে কাল্পনিক এই রেখাটির জন্ম দেন তিনি। যদিও পরবর্তী কালে এর নামকরণ করেন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ববিদ টিএইচ হাক্সলি।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার গা ঘেঁষে সমুদ্রের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে কাল্পনিক ওয়ালেস লাইন। রেখাটির দু’পারে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দু’পারের প্রাণীজগতের মধ্যে একটা অদ্ভুত বৈপরীত্য রয়েছে। জীববিজ্ঞানীদের ভাষায়, ওয়ালেস লাইন পশ্চিম এশিয়ার প্রাণীজগৎকে পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার জীবকুলের সঙ্গে মিশে যেতে দেয়নি।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

গবেষকদের দাবি, ওয়ালেস লাইনের দু’পারে থাকা অধিকাংশ প্রাণী, এমনকি মাছ পর্যন্ত, রেখাটি কখনওই অতিক্রম করে না। দু’দিকের জীব বৈচিত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্যের নেপথ্যে একে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কিলস।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

অ্যালেক্স বলেছেন, ‘‘পৃথিবী জুড়ে জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতির বণ্টনকে বুঝতে হলে ওয়ালেস লাইন নিয়ে দীর্ঘ অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইটালির ভেনিসবাসী জীববিজ্ঞানী অ্যান্টনিয়ো পিগাফেটা। ফিলিপিন্স এবং মালুকু দ্বীপপুঞ্জে পৃথক প্রাণীদের অস্তিত্ব রেকর্ড করেন তিনি। সালটা ছিল ১৫২১।’’

 

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

১৯ শতকে এ বিষয়ে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান প্রকৃতিবিদ জি ডব্লু আর্ল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জীববিজ্ঞানী ওয়ালেসের পা পড়েছিল ১৮০০ সালের গোড়ার দিকে। পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, বোর্নিয়ো, জাভা ও বালি এবং পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি ও লম্বকের জীবজগতের মধ্যে একটি পরিবর্তন লক্ষ করেন তিনি।

 

০৮১৮
Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

১৮৬৩ সালে লন্ডনের রয়্যাল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি ওয়ালেসের তত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিল। সেখানে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল পিগাফেটা ও আর্লের পর্যবেক্ষণ। স্কিলসের কথায়, ‘‘এই ধরনের কোনও কাল্পনিক রেখা তৈরি ওয়ালেসের উদ্দেশ্য ছিল না। জীবজগৎ পৃথক হওয়ার জেরে ভূতাত্ত্বিক এবং উপনিবেশের উপর কী প্রভাব পড়ছে, তা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় তাঁর গবেষণা ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।’’

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

মজার বিষয় হল ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে ওয়ালেস রেখা টানা হয়নি। সমুদ্রের উপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে এটি চলে গিয়েছে। রেখাটির নীচে সাগরের জলরাশির গভীরে রয়েছে ‘ওয়ালেস খাদ’। সেখানে একে অপরের গায়ে ধাক্কা মেরেছে তিনটি টেকটনিক প্লেট। সেগুলি হল, সুন্দা, বান্দা এবং তিমর।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

ভূবিজ্ঞানীদের দাবি, ওয়ালেস রেখা সমুদ্রের মধ্যেই একটি অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি করেছে। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্লাইস্টোসিন যুগে এটি তৈরি হয়েছিল। প্রাকৃতিক লীলায় এই অদৃশ্য প্রাচীর কখনওই ভেঙে যায়নি।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

ওয়ালেস রেখার উত্তর দিকের দ্বীপগুলিতে হাতি, গন্ডার এবং বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। আর দক্ষিণে অস্ট্রেলিয় উপদ্বীপের প্রাণীজগতের মধ্যে ক্যাঙারু, মার্সুপিয়াল উল্লেখযোগ্য। এই রেখার প্রভাব সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ এবং সরীসৃপের ক্ষেত্রে।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

কাল্পনিক রেখাটির দু’পারের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ হল বালি ও লম্বক। এদের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিমি। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাতেগোনা বাদুড়ের কয়েকটি প্রজাতিরই ওয়ালেস লাইনের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

প্রাণীর পাশাপাশি উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এই পার্থক্য সমান ভাবে পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে ইউক্যালিপটাসের কথা বলা যেতে পারে। এই গাছটির বেশির ভাগ প্রজাতি অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। ওয়ালেস রেখার উত্তর দিকে ইউক্যালিপটাসের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একমাত্র ব্যতিক্রম ফিলিপিন্সের মিন্দানাও দ্বীপ। সেখানে অল্প সংখ্যায় এই গাছটিকে জন্মাতে দেখা গিয়েছে।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

এই এলাকার প্রাণীদের ওয়ালেস রেখা অতিক্রম না করার নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন জীববিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, প্রাকৃতিক কারণেই কাল্পনিক রেখাটি অতিক্রম করার সুযোগ খুব বেশি পায় না তারা।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

প্রথমত, ওয়ালেস রেখার পাশে সমুদ্রের গভীরে খাদ থাকায় অতীতের বরফ যুগে সেখানে কোনও স্থল সেতু গড়ে ওঠেনি। ফলে এক পারের প্রাণীকুলের অপর দিকে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

দ্বিতীয়ত, ইন্দোনেশিয়া সংলগ্ন লম্বক প্রণালীটি অস্বাভাবিক সংকীর্ণ হওয়ায় সেখানে জলের স্রোত খুব বেশি। সেটা অতিক্রম করে এক পারের জলজ প্রাণীগুলি অপর দিকে যেতে পারে না।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

তৃতীয়ত, ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলির মধ্যে প্রাণী চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মলাক্কা প্রণালী সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির কিছু এলাকা জলাতঙ্ক প্রবণ। ফলে সেখানে এক শ্রেণির বন্য প্রাণী প্রায় যায় না বললেই চলে।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কিলস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘ওয়ালেস রেখার দু’পারের প্রাণীকুলের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যও স্পষ্ট। যেমন রেখাটির এক পারের পাখিরা জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে থেকে শিকার করতে পছন্দ করেন। অস্ট্রেলিয়ার উন্মুক্ত তৃণভূমির দিকে তাদের উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’’

এই রেখাটিকে প্রথম আঁকেন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস। বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনের মতো জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার সময়ে কাল্পনিক এই রেখাটির জন্ম দেন তিনি। যদিও পরবর্তী কালে এর নামকরণ করেন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ববিদ টিএইচ হাক্সলি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার গা ঘেঁষে সমুদ্রের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে কাল্পনিক ওয়ালেস লাইন। রেখাটির দু’পারে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দু’পারের প্রাণীজগতের মধ্যে একটা অদ্ভুত বৈপরীত্য রয়েছে। জীববিজ্ঞানীদের ভাষায়, ওয়ালেস লাইন পশ্চিম এশিয়ার প্রাণীজগৎকে পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার জীবকুলের সঙ্গে মিশে যেতে দেয়নি।

গবেষকদের দাবি, ওয়ালেস লাইনের দু’পারে থাকা অধিকাংশ প্রাণী, এমনকি মাছ পর্যন্ত, রেখাটি কখনওই অতিক্রম করে না। দু’দিকের জীব বৈচিত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্যের নেপথ্যে একে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কিলস।

অ্যালেক্স বলেছেন, ‘‘পৃথিবী জুড়ে জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতির বণ্টনকে বুঝতে হলে ওয়ালেস লাইন নিয়ে দীর্ঘ অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইটালির ভেনিসবাসী জীববিজ্ঞানী অ্যান্টনিয়ো পিগাফেটা। ফিলিপিন্স এবং মালুকু দ্বীপপুঞ্জে পৃথক প্রাণীদের অস্তিত্ব রেকর্ড করেন তিনি। সালটা ছিল ১৫২১।’’

১৯ শতকে এ বিষয়ে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান প্রকৃতিবিদ জি ডব্লু আর্ল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জীববিজ্ঞানী ওয়ালেসের পা পড়েছিল ১৮০০ সালের গোড়ার দিকে। পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, বোর্নিয়ো, জাভা ও বালি এবং পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি ও লম্বকের জীবজগতের মধ্যে একটি পরিবর্তন লক্ষ করেন তিনি।

১৮৬৩ সালে লন্ডনের রয়্যাল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি ওয়ালেসের তত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিল। সেখানে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল পিগাফেটা ও আর্লের পর্যবেক্ষণ। স্কিলসের কথায়, ‘‘এই ধরনের কোনও কাল্পনিক রেখা তৈরি ওয়ালেসের উদ্দেশ্য ছিল না। জীবজগৎ পৃথক হওয়ার জেরে ভূতাত্ত্বিক এবং উপনিবেশের উপর কী প্রভাব পড়ছে, তা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় তাঁর গবেষণা ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।’’

মজার বিষয় হল ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে ওয়ালেস রেখা টানা হয়নি। সমুদ্রের উপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে এটি চলে গিয়েছে। রেখাটির নীচে সাগরের জলরাশির গভীরে রয়েছে ‘ওয়ালেস খাদ’। সেখানে একে অপরের গায়ে ধাক্কা মেরেছে তিনটি টেকটনিক প্লেট। সেগুলি হল, সুন্দা, বান্দা এবং তিমর।

Know why Animals Like Kangaroos and Rhinoceroses do not cross the Wallace Line between Asia and Australia

ভূবিজ্ঞানীদের দাবি, ওয়ালেস রেখা সমুদ্রের মধ্যেই একটি অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি করেছে। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্লাইস্টোসিন যুগে এটি তৈরি হয়েছিল। প্রাকৃতিক লীলায় এই অদৃশ্য প্রাচীর কখনওই ভেঙে যায়নি।

ওয়ালেস রেখার উত্তর দিকের দ্বীপগুলিতে হাতি, গন্ডার এবং বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। আর দক্ষিণে অস্ট্রেলিয় উপদ্বীপের প্রাণীজগতের মধ্যে ক্যাঙারু, মার্সুপিয়াল উল্লেখযোগ্য। এই রেখার প্রভাব সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ এবং সরীসৃপের ক্ষেত্রে।

কাল্পনিক রেখাটির দু’পারের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ হল বালি ও লম্বক। এদের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিমি। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাতেগোনা বাদুড়ের কয়েকটি প্রজাতিরই ওয়ালেস লাইনের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

প্রাণীর পাশাপাশি উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এই পার্থক্য সমান ভাবে পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে ইউক্যালিপটাসের কথা বলা যেতে পারে। এই গাছটির বেশির ভাগ প্রজাতি অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। ওয়ালেস রেখার উত্তর দিকে ইউক্যালিপটাসের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একমাত্র ব্যতিক্রম ফিলিপিন্সের মিন্দানাও দ্বীপ। সেখানে অল্প সংখ্যায় এই গাছটিকে জন্মাতে দেখা গিয়েছে।

এই এলাকার প্রাণীদের ওয়ালেস রেখা অতিক্রম না করার নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন জীববিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, প্রাকৃতিক কারণেই কাল্পনিক রেখাটি অতিক্রম করার সুযোগ খুব বেশি পায় না তারা।

প্রথমত, ওয়ালেস রেখার পাশে সমুদ্রের গভীরে খাদ থাকায় অতীতের বরফ যুগে সেখানে কোনও স্থল সেতু গড়ে ওঠেনি। ফলে এক পারের প্রাণীকুলের অপর দিকে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম।

দ্বিতীয়ত, ইন্দোনেশিয়া সংলগ্ন লম্বক প্রণালীটি অস্বাভাবিক সংকীর্ণ হওয়ায় সেখানে জলের স্রোত খুব বেশি। সেটা অতিক্রম করে এক পারের জলজ প্রাণীগুলি অপর দিকে যেতে পারে না।

তৃতীয়ত, ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলির মধ্যে প্রাণী চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মলাক্কা প্রণালী সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির কিছু এলাকা জলাতঙ্ক প্রবণ। ফলে সেখানে এক শ্রেণির বন্য প্রাণী প্রায় যায় না বললেই চলে।

জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কিলস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘ওয়ালেস রেখার দু’পারের প্রাণীকুলের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যও স্পষ্ট। যেমন রেখাটির এক পারের পাখিরা জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে থেকে শিকার করতে পছন্দ করেন। অস্ট্রেলিয়ার উন্মুক্ত তৃণভূমির দিকে তাদের উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com