মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

কীভা‌বে দ‌ক্ষিণ কোরিয়ায় অভিবাসী হ‌বেন

  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ মে, ২০২৩
A family at home on a couch.

দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। কোরিয়া উপদ্বীপের এই দেশটি দিন দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিজেকে। অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার বলতে যেসব উপকরণকে বোঝায়, তার সবগুলোই মজুদ আছে দেশটিতে। এমন একটি দেশে অভিবাসী হতে চায় না কে! প্রতি বছরই দেশটিতে বিভিন্ন উদ্দেশে গমন করেন বহু মানুষ। তবে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২০০৭ সালে সম্পাদিত সমকো চুক্তির প্রেক্ষিতে আঞ্চ সার্ভিসে লিমিটেড (বোয়েসেল) এবং কোরিয়া সরকারের পক্ষে হিউম্যান রিসোর্সেস (এইচ.আর.ডি কোরিয়া) বর্তমানে কোরিয়ার অভিবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

প্রতিবছর কোরিয়া ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাইয়ের মাধ্যমে দেশটিতে শ্রমিক নেওয়া হয়। কোরিয়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রার্থী বেশি হলে লটারির মাধ্যমে কোরীয় ভাষা পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ে কোরিয়া সরকার কর্তৃক কোরিয়ান ভাষা-দক্ষতা অর্জন ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪ বছর ১০ মাসের জন্য উচ্চ বেতনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানায় চাকুরি করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সম্পূর্ণ সরকারিভাবে স্বল্প ব্যয়ে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। দুই সরকারের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বোয়েসেল ব্যতীত অন্যকোনো জনশক্তি রফতানিকারী এজেন্ট বা মধ্যস্বত্বভোগী বা কোরিয়ান ভাষাশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোরিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ নেই।

কী কী যোগ্যতা লা‌গে

দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারিভাবে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছু প্রাথমিক যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে-

  • বয়স ১৮-৩৯ হতে হবে,

*শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি/সমমানের ডিগ্রি

*বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে,

*কোরিয়ান ভাষা পড়া, লেখা ও বোঝার পারদর্শিতা এবং কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে

  • ফৌজদারি অপরাধে জেল বা অন্য কোনো শাস্তি হয়নি এমন ব্যক্তি

*যাদের কালার ভিশনে কোনো সমস্যা নেই,

*যারা ইত:পূর্বে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করেনি,

*মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষার অংশগ্রহণ ও করণীয় কী?

প্রতি বছর কোরিয়ান ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদনের তারিখ বোয়েসেল-এর ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.boesl.gov.bd । নির্ধারিত সময়ে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে-এর মাধ্যমে নিবন্ধন ফি ৫০০/- (পাঁচশ) টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিকাশ পেমেন্ট-এর ট্রানজেকশন আইডি বোয়েসেলে এর ফর্মে আবেদনের সময় লিখতে হবে।
পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করে নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর ফরমটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। প্রার্থী বেশি হলে অংশ নিতে হবে লটারিতে। লটারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য আবারও বোয়েসেল ওয়েবসাইটে নাম প্রকাশ হবে। সে অনুযায়ী ২ হাজার ১০০ টাকা ফি জাম দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। এবার কোরিয়ান ভাষা শেখার পালা। নিজ উদ্যোগে শিখতে হবে কোরিয়ান ভাষা। যেকোনো বেসরকারি প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে তা শিখতে হবে। ভাষা শেখার পর অংশ নিতে হবে পরীক্ষায়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এইচআরডি কোরিয়া স্কিল টেস্টে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা হবে। এভাবে ভাষাগত দক্ষতায় উত্তীর্ণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ভাষাগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিজ নিজ জেলায় সার্জন কার্যালয়ে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য নোটিশ বোয়েসেল-এর ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রচার করা হয়।উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিজ নিজ এজলার সিভিল সার্জনের মধ্যেমে নির্ধারিতে তারিখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। বোয়েসেল-এ নির্ধারিত জব এপ্লিকেশন ফরমসহ পাসপোর্ট কপি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ জমা করতে হয়।

লেবার কন্ট্রাক্ট ইস্যু

চূড়ান্ত উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তথ্য জব রোস্টারের জন্য বোয়েসেল এইচআরডি কোরিয়ার ডাটাবেইজ সার্ভারে তথ্য প্রদান করে থাকে।বোয়েসেল কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য এইচআরডি কোরিয়া যাচাই করে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে জব রোস্টার সম্পন্ন করে। জব রোস্টারের মেয়াদ রোস্টারভুক্ত হওয়ার দিন থেকে ১ম ধাপে এক বছর ও ২য় ধাপে এক বছরসহ মোট ২ বছর। এরপর কর্মী হিসেবে নিয়োগের জন্য কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়।কোরিয়াস্থ কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয় এসএমই কর্তৃক কর্মী নিয়োগের চাহিদা যাচাই বাচাই করে অনুমোদন প্রদান করে থাকে।

লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্ত কর্মীদের করণীয়

লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্ত কর্মীদের বিকেটিটিসি’তে ৪৮ ঘন্টার প্রিলিমিনারী প্রশিক্ষণ, যক্ষা পরীক্ষা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহের জন্য বোয়েসেল ওয়েবসাইটে নোটিশ প্রদান ও এসএমএস প্রেরণ করে থাকে। প্রিলিমিনারী প্রশিক্ষণ সম্পন্নের পর কর্মীদের বোয়েসেল অফিসে মূল পাসপোর্ট, প্রশিক্ষণ সনদ, ভিসা ফরম, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ভিসা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।

কী পরিমাণ ফি প্রদান করতে হবে?

*বোয়েসেল-এর সার্ভিস চার্জ ২৩,১৮৪/- (ভ্যাটসহ),

*বোয়েসেল ডাটাবেইজ ফি ২০০/-,

*ভিসা ফি ৫,১০০/-,

*বহির্গমন ফি ৩,৫০০/-,

*স্মার্ট কার্ড ফি ২৫০/-

  • উৎসে আয়কর বাবদ ৮০০/- টাকাসহ সর্বমোট ৩৩,০৩৪/- টাকার পে-অর্ডার এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলে ১১৪৫/- টাকার পৃথক পে-অর্ডার প্রদান করতে হয়।

*একই সাথে কোরিয়াগামী জেনারেল কর্মীদের ফেরতযোগ্য একলক্ষ টাকার পে-অর্ডার এবং কমিটেড/স্পেশাল সিবিটি কর্মীদের ফেরতযোগ্য তিন লক্ষ টাকার পে-অর্ডার বোয়েসেলকে প্রদান করতে হয়।

এভাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর কর্মীদের ভিসা স্ট্যাম্পিং করার জন্য ঢাকাস্থ কোরিয়া দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা করতে হয়। ভিসা ও এইচআরডি কোরিয়া থেকে ফ্লাইট-এর তালিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত এয়ারলাইন্সে টিকেটের জন্য বোয়েসেল বুকিং দিয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জ্ঞাতার্থে ফ্লাইটের তারিখ, টিকেটের টাকা জমা সংক্রান্ত ও বোয়েসেল কর্তৃক ৩ দিনের কোরিয়ান ভাষা ও কালচার প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য বোয়েসেল-এর ওয়েবসাইটে প্রচার ও এসএমএস প্রেরণ করা হয়। বোয়েসেল-এর তথ্যের ভিত্তিতে কর্মীকে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স অফিসে উপস্থিত হয়ে টিকেটের নির্ধারিত অর্থ জমা প্রদান করতে হবে।

এভাবে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অভিবাসী হওয়া যাবে স্বপ্নের সাউথ কোরিয়ায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com