মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৯ অপরাহ্ন

কাপ্তাই হ্রদে নৌকাভ্রমণ এক স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

পাহাড় আর জলের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক রহস্যময় জায়গা। যেন প্রকৃতি নিজ হাতে এঁকে রেখেছে তার প্রেমপত্র। যেখানে সকালে কুয়াশা আসে হ্রদের বুক চিরে। দুপুরে সূর্যের আলো খেলা করে পাহাড়ের কাঁধে। সন্ধ্যায় চারপাশে নেমে আসে শান্ত এক জাদুময়তা। স্থানটির নাম কাপ্তাই হ্রদ। বাংলাদেশের পার্বত্য রাঙ্গামাটির বুকে জড়িয়ে থাকা এক অনবদ্য সৃষ্টি।

এই হ্রদ শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মিলনস্থল। ১৯৫৬ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ হিসেবে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের ফলে তৈরি হয়েছিল এই হ্রদ। হাজার হাজার মানুষ নিজ ভূমি হারালেও, প্রকৃতি যেন ক্ষতিপূরণ হিসেবে সৃষ্টি করলো এক নীলচে স্বপ্নভূমি।

কাপ্তাই হ্রদে নৌকাভ্রমণ এক স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা। ঘণ্টাখানেক চললেই দেখা মেলে সুবলং ঝরনা। পাহাড় কেটে বয়ে আসা সেই সাদা জলরাশি যেন গোপনে বলে যায় অরণ্যের গোপন সুর। সুবলংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে হ্রদের গায়ে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া পানির আওয়াজ শুনলে মনে হয়, চারপাশের কোলাহল ভেসে গেছে বহু দূরে।

jagonews24

পথে পড়ে স্থানীয় বাজার। এখানে প্রতিটি দোকান যেন নিজস্ব গল্প নিয়ে হাজির। হাতে গড়া হস্তশিল্প, বাঁশের জিনিস, পাহাড়ি জামা-কাপড়, কাঠের অলংকার সব কিছুতেই মিশে থাকে পাহাড়ি জীবনের নিঃশব্দ ভাষা। পাহাড়ি নারীরা হাসিমুখে পণ্য সাজিয়ে বসে থাকেন, যেন তারা প্রকৃতির প্রতিনিধি।

কাপ্তাই হ্রদের আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান। যেগুলোতে পাওয়া যায় স্থানীয় রন্ধনশৈলীর স্বাদ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যাম্বু ফ্রাই, বাঁশের কচি অংশ থেকে তৈরি এক রুচিশীল ও স্বতন্ত্র পদ। সঙ্গে থাকে পাহাড়ি মুরগির ঝাল রান্না, উর্বর মাটির মাশরুম ভর্তা, আর স্থানীয় ভাত; যা খেতে একরকম মিষ্টি লাগে। এদের মধ্যে চাংপাং রেস্টুরেন্টের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেখানে খাবারের সাথে সাথে উপভোগ করতে পারবেন লেকের দৃশ্যও।

jagonews24

ভ্রমণের পথজুড়ে ছড়িয়ে আছে নৌকায় নৌকায় গানে গানে চলা মন ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্ত। কখনো জেলে নৌকা পাশ কাটায়, কখনো পাহাড়ি শিশুদের ঢেউ দেওয়া হাসি ভেসে আসে হ্রদের গায়ে। আরও দর্শনীয় স্থান যেমন- রাজবন বিহার, রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু, পেদা টিং টিং কিংবা টুকটুক পাহাড়ি পাড়ার রাস্তা সব কিছু মিলিয়ে রাঙ্গামাটি যেন এক গল্প, যা প্রতিটি পদে পদে নতুন মোড় নেয়।

কাপ্তাই হ্রদে সূর্যাস্ত সমুদ্রপাড়ের অভিজ্ঞতার মতোই মধুর। যখন নীল জলরাশির গায়ে ছড়িয়ে পড়ে কমলা রঙের আলো, পাহাড়ের গা বেয়ে নামে এক আবছা ছায়া; তখন সেই দৃশ্য শুধু চোখে নয় মনে গেঁথে থাকে। প্রকৃতির নীরব ভালোবাসায় মোড়ানো এই ভূখণ্ডে যেন প্রতিটি ঢেউ ফিসফিস করে শোনায় পাহাড়ের গল্প, ঝরনার ছুটে চলা শেখায় জীবনের গতি আর প্রতিটি লোকজ স্বাদে মিশে থাকে সংস্কৃতির গভীরতা।

jagonews24

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ শুধু দেখার নয়, অনুভবের স্থান। আত্মার সাথে প্রকৃতির গোপন কথোপকথন। ফিরে আসার পরও থেকে যায় পরানের গহীন ভেতর। তাই তো বলা চলে, কাপ্তাই হ্রদ দেখার নয়, মন দিয়ে ধারণ করার জায়গা। কাপ্তাই হ্রদে যেতে প্রথমে রাঙ্গামাটি যেতে হবে। ঢাকার সদরঘাট, কল্যাণপুর বা গাবতলী থেকে বাসে রাঙ্গামাটি পৌঁছতে হবে। যেতে ৮-৯ ঘণ্টা সময় লাগে। নিজস্ব গাড়িতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে ৭-৮ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটি যাওয়া যায়। শহর থেকে কাপ্তাই হ্রদে পৌঁছাতে স্থানীয় পরিবহন, যেমন- ট্যাক্সি বা সিএনজি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com