পাহাড় আর জলের মাঝে লুকিয়ে থাকা এক রহস্যময় জায়গা। যেন প্রকৃতি নিজ হাতে এঁকে রেখেছে তার প্রেমপত্র। যেখানে সকালে কুয়াশা আসে হ্রদের বুক চিরে। দুপুরে সূর্যের আলো খেলা করে পাহাড়ের কাঁধে। সন্ধ্যায় চারপাশে নেমে আসে শান্ত এক জাদুময়তা। স্থানটির নাম কাপ্তাই হ্রদ। বাংলাদেশের পার্বত্য রাঙ্গামাটির বুকে জড়িয়ে থাকা এক অনবদ্য সৃষ্টি।
এই হ্রদ শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মিলনস্থল। ১৯৫৬ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ হিসেবে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের ফলে তৈরি হয়েছিল এই হ্রদ। হাজার হাজার মানুষ নিজ ভূমি হারালেও, প্রকৃতি যেন ক্ষতিপূরণ হিসেবে সৃষ্টি করলো এক নীলচে স্বপ্নভূমি।
কাপ্তাই হ্রদে নৌকাভ্রমণ এক স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা। ঘণ্টাখানেক চললেই দেখা মেলে সুবলং ঝরনা। পাহাড় কেটে বয়ে আসা সেই সাদা জলরাশি যেন গোপনে বলে যায় অরণ্যের গোপন সুর। সুবলংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে হ্রদের গায়ে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া পানির আওয়াজ শুনলে মনে হয়, চারপাশের কোলাহল ভেসে গেছে বহু দূরে।
কাপ্তাই হ্রদের আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান। যেগুলোতে পাওয়া যায় স্থানীয় রন্ধনশৈলীর স্বাদ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যাম্বু ফ্রাই, বাঁশের কচি অংশ থেকে তৈরি এক রুচিশীল ও স্বতন্ত্র পদ। সঙ্গে থাকে পাহাড়ি মুরগির ঝাল রান্না, উর্বর মাটির মাশরুম ভর্তা, আর স্থানীয় ভাত; যা খেতে একরকম মিষ্টি লাগে। এদের মধ্যে চাংপাং রেস্টুরেন্টের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেখানে খাবারের সাথে সাথে উপভোগ করতে পারবেন লেকের দৃশ্যও।
কাপ্তাই হ্রদে সূর্যাস্ত সমুদ্রপাড়ের অভিজ্ঞতার মতোই মধুর। যখন নীল জলরাশির গায়ে ছড়িয়ে পড়ে কমলা রঙের আলো, পাহাড়ের গা বেয়ে নামে এক আবছা ছায়া; তখন সেই দৃশ্য শুধু চোখে নয় মনে গেঁথে থাকে। প্রকৃতির নীরব ভালোবাসায় মোড়ানো এই ভূখণ্ডে যেন প্রতিটি ঢেউ ফিসফিস করে শোনায় পাহাড়ের গল্প, ঝরনার ছুটে চলা শেখায় জীবনের গতি আর প্রতিটি লোকজ স্বাদে মিশে থাকে সংস্কৃতির গভীরতা।