রাঙামাটি ভ্রমণের কথা বললেই চোখে ভেসে উঠে হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা এক মুগ্ধকর শহরের কথা। সবুজ পাহাড় আর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি এই শহরকে দিয়েছে রুপের রাণীর খেতাব। এই জনপদকে চারপাশ থেকে ঘিরে রয়েছে ৬৮৮ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদ। যোগাযোগ থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসা, এই ধরণের প্রায় অনেক কিছুই নির্ভরশীল এই হ্রদের উপর।
রাঙামাটিতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশে কিছু উদ্যমী তরুণের হাত ধরে কাপ্তাই হ্রদের বুকে চালু হয়েছে ভাসমান রেঁস্তোরা “দোল”।
পর্যটন নগরী হিসেবে রাঙামাটিতে বিভিন্ন ধরণের রেষ্টুরেন্ট চালু থাকলেও হ্রদের পানির উপরে ভাসমান রেঁস্তোরা এই প্রথম। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘাটে এই রেস্টুরেন্টের অবস্থান। খোলা থাকে সপ্তাহের সাতদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা। কাপ্তাই হ্রদের বুকে ভ্রমণ করতে করতে খাবারের আনন্দ উপভোগের এই নতুন আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
জানা যায়, দোল রেস্টুরেন্টটি কাপ্তাই হ্রদের বুকে চলাচলকারী বড় বোটগুলোর আদলেই তৈরি করা। দ্বিতল এই বোটের উপরের তলাটি রেস্টুরেন্ট এবং নিচের তলাটি কিচেন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপরের তলার রেস্টুরেন্টের মুগ্ধকর সাজসজ্জা নজর কাড়বে যে কারোরই। বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, পেছনের দিকের বসার স্থানগুলো ও আলোকসজ্জা বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে এই রেস্টুরেন্টে। উপরের তলাটি খোলামেলা হওয়াতে হ্রদের বুকে ভাসমান অবস্থায় খাবার খেতে খেতে উপভোগ করা যায় চারপাশের বিস্তীর্ণ হ্রদের সৌন্দর্য্য। আর পুরো রেস্টুরেন্টটি বুকিং দিলে এই ভাসমান রেস্টুরেন্টে চেপে বেড়িয়ে আসতে পারবেন হ্রদের যেকোন জায়গা থেকে। দিনের সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি রাতের “দোল” আলাদা মুহূর্ত তৈরি করে। হ্রদের বুকে আলোকিত ভাসমান এই তরীটি আলোকিত করে তোলে চারপাশ। দেখে মনে হবে, গভীর সমুদ্রে কোন প্রমোদতরী ভেসে বেড়াচ্ছে।
উদ্বোধনের দিন থেকেই রাঙামাটিসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে বেশ সাড়া ফেলেছে এই ভাসমান রেস্টুরেন্ট। রাঙামাটির আশেপাশের জেলাগুলো থেকে অনেকেই আসছেন এখানে, পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। বিকেল থেকে রাত অব্দি বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায় রেস্টুরেন্টে।
দোল- রেস্টুরেন্টে বেড়াতে আসা সরোয়ার আলম বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশকে সঙ্গী করে এই ধরণের ভাসমান রেস্টুরেন্ট রাঙামাটিতে প্রথম। খাবারের পাশাপাশি মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য এটি একটি দারুণ জায়গা। আর এদের ফুড কোয়ালিটি এবং সার্ভিস খুবই ভালো।
তার সাথে কন্ঠ মেলালেন তার বন্ধু আলমগীর কবীর। তিনি বলেন, হ্রদের বুকে এই ধরণের একটি ভাসমান রেঁস্তোরার আইডিয়াটা আসলেই চমৎকার। এটি রাঙামাটির অন্যান্য গতানুগতিক রেঁস্তোরাকে পেছনে ফেলে নতুন একটা কিছু তৈরি করেছে। আর এদের ফুড কোয়ালিটিও অসাধারণ।
বরিশাল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আনজুমান সাদিক বলেন, আমি রাঙামাটিতে ছুটি কাটাতে এসেছি। আমার বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম- কাপ্তাই হ্রদের বুকে একটি ভাসমান রেঁস্তোরা সম্প্রতি শুরু হয়েছে, তাই চলে আসলাম। এখানে দারুণ সময় কাটিয়েছি। খাবার খেতে খেতে প্রকৃতির খুব কাছে থাকা যায়। আর এদের ব্যবস্থাপনাও ভালো। দোল রেস্টুরেন্টের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এটি কাপ্তাই হ্রদ দূষিত করেনা। সকল ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে শুরু করে হিউম্যান ডাস্ট সবকিছুই খুব সতর্কতার সাথে নিষ্কাশন করেন দোল কর্তৃপক্ষ।
দোল ভাসমান রেঁস্তোরার পরিচালক মোঃ গালিব হাসান বলেন, আমাদের রাঙামাটির এই সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ আমাদের জন্য একটি সম্পদ। এই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা উচিত বলে আমি মনে করি। রাঙামাটিতে অনেক ধরণের হাউস বোট রয়েছে কিন্তু কোন ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট নেই। সেই চিন্তা থেকেই আমাদের এই রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু।
তিনি আরো বলেন, রেস্টুরেন্টে কমন খাবারের পাশাপাশি রাঙামাটির ট্রেডিশনাল ফুডগুলোরও ব্যবস্থা রয়েছে। যা সারাদেশের কাছে রাঙামাটিকে রিপ্রেজেন্ট করবে।
দোল-এর ম্যানেজিং পার্টনার মুন্না তালুকদার বলেন, এই ফ্লোটিং রেস্টুরেন্টের বিশেষত্ব হলো এটি দেশের একমাত্র উডেন ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট। যেখানে আপনি রাঙামাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগের পাশাপাশি ভাসমান অবস্থায় খাওয়ার সুযোগ পাবেন। রাঙাামটিতে যারা বেড়াতে আসেন তারা চার দেয়ালের আবদ্ধ রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে যান, কিন্তু প্রকৃতির মাঝে বসে খাবারের আনন্দ উপভোগ করার ব্যবস্থা করেছি আমরা।
এ বিষয়ে রাঙামাটি ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস্ গাইডের স্বত্ত্বাধিকারী হিমু বাপ্পী বলেন, রাঙামাটিতে পর্যটন শিল্পের বিকাশে তরুণরা যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। যার ধারাবাহিকতায় দোলের মত ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে। যা রাঙামাটিকে সারাদেশের কাছে আলাদাভাবে উপস্থাপন করছে। আমি দোল রেস্টুরেন্টের সফলতা কামনা করি।