মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন

কানাডা যেভাবে বিশ্বের গাড়ি চুরির কেন্দ্র হয়ে উঠলো

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

কানাডার বাসিন্দা লোগান লাফর্নিয়া ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করেন যে তার ড্রাইভওয়ে, মানে গাড়ির রাখার স্থানটি ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে তার ব্র্যান্ড নিউ ‘র‍্যাম রেবেল’ গাড়িটি রাখা ছিল।

তিনি তৎক্ষণাৎ তার সিকিউরিটি ক্যামেরায় ধারন করা ফুটেজ বের করেন এবং দেখেন যে দুইজন হুডি পরিহিত ব্যক্তি মাঝ রাতে তার অন্টারিও’র বাড়ির বাইরে রাখা ওই পিকআপে উঠে পড়েন। তারপর তারা খুব সহজেই সেই গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে চলে যান।

এই ঘটনার ঠিক কয়েক মাস পরের কথা। যানবাহন কেনাবেচা হয়, এমন একটি ওয়েবসাইটে ওই একই গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন ঘুরছিলো। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পাড়ে প্রায় সাড়ে আট হাজার কিলোমিটার দূরে ঘানায় সেটি বিক্রি হবে।

“ল্যাপটপ হোল্ডারটি থেকে গাড়ির মালিকানা স্পষ্ট হয়। আমাদের ছেলের জন্য গাড়ির চালকের আসনের পেছনে সেটি লাগিয়েছিলাম এবং ওই হোল্ডারের মাঝে সে (ছেলে) আবর্জনা ফেলেছিলো,” যেসব বিষয় বিবেচনা করে তিনি বুঝতে পারেন যে গাড়িটি তার নিজেরই, তিনি বিবিসিকে বলেন।

ওয়েবসাইটে দেওয়া গাড়ির প্রতিটি ছবিতেই ওই একই এলোমেলো দৃশ্য ফুটে উঠেছিল বলে তিনি জানান।

“তখন আমার মনে কোনোপ্রকার সন্দেহ ছিল না যে এটা আমারই গাড়ি।”

মি. লাফর্নিয়া একমাত্র মানুষ নন, যাকে এমন পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে। ওই বছর কানাডায় এক লাখ পাঁচ হাজার গাড়ি চুরি হয়েছিলো। অর্থাৎ, প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীদের মাঝে কানাডা’র কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীও আছে। গাড়ি চোররা তার সরকারি গাড়ি টয়োটা হাইল্যান্ডার এক্সএলই-কে দুইবার নিয়ে গিয়েছিলো।

দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, সংক্ষেপে ইন্টারপোল, চলতি বছরের গ্রীষ্মের শুরুতে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের চুরি যাওয়া গাড়ির একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় দেখা গেছে যে গাড়ি চুরির ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মাঝে কানাডাও আছে।

কানাডা'র মন্ট্রিল বন্দর, যেখান থেকে প্রায়ই চুরি হওয়া গাড়ি পাচার হয়।

ছবির উৎস,AFP VIA GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,কানাডা’র মন্ট্রিল বন্দর, যেখান থেকে প্রায়ই চুরি হওয়া গাড়ি পাচার হয়।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে ইন্টারপোলকে চুরি যাওয়া গাড়ির তথ্য-উপাত্ত দেওয়া শুরু করেছে কানাডা। এই বিষয়টিকে “উল্লেখযোগ্য” কীর্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দেশটির সরকারের একজন মুখপাত্র।

কর্তৃপক্ষ বলছে যে চুরি করার পর এই গাড়িগুলোকে হয় কোনও অপরাধকর্মে ব্যবহার করা, অথবা গাড়িগুলোকে সেখানকার এমন মানুষের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় যাদেরকে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আবার, অনেকসময় ওই গাড়িগুলোকে পুনরায় বিক্রি করার জন্য বিদেশেও পাঠানো হয়।

ইন্টারপোল বলছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে তারা বিশ্বব্যাপী দেড় হাজারের বেশি গাড়ি চিহ্নিত করেছে, যেগুলো আসলে কানাডা থেকে চুরি হয়েছে। সেইসাথে, সংস্থাটি প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের বন্দরগুলো থেকে প্রায় দুই শতাধিক চুরি হয়ে যাওয়া গাড়ি শনাক্ত করছে।

কানাডায় ‘গাড়ি চুরি’ এমন এক মহামারীতুল্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে যে দেশটির ইন্সুরেন্স বিউরো অব কানাডা এটিকে “জাতীয় সংকট” হিসাবে ঘোষণা করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে গাড়ি চুরি হওয়ার এই ঘটনায় গতবছর বীমাকারীদেরকে দেড় বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারেরও বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।

চলমান এই সমস্যার কারণে দেশটির পুলিশ বাধ্য হয়েছে দেশজুড়ে এ বিষয়ক সতর্কতামূলক পাবলিক বুলেটিন জারি করতে। কিভাবে গাড়িকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করা যায়, বুলেটিনে তারা সেসব বলছে।

এছাড়াও, কিছু কানাডিয়ান ব্যক্তিগতভাবেও কিছু উদোগ নিয়েছেন। তাদের গাড়িতে ট্র্যাকিং প্রযুক্তি বসানো থেকে শুরু করে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ, সবই তারা করছেন।

আর, যাদের সামর্থ্য আছে, তারা গাড়ি রাখার এলাকায় রিট্র্যাক্যাবল বোলার্ড বসিয়েছেন। বিশেষ করে, চুরি ঠেকাতে ও চোরকে চিহ্নিত করতে বিভিন্ন ব্যাংক ও দূতাবাসগুলো এই পদক্ষেপ নিয়েছে। রিট্র্যাক্যাবল বোলার্ড এমন এক ধরনের যন্ত্র, যা দিয়ে গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করা যায়।

বিশ্বের শীর্ষ ১০ গাড়ি চুরি হওয়া দেশগুলোর মাঝে কানাডা অন্যতম।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,বিশ্বের শীর্ষ ১০ গাড়ি চুরি হওয়া দেশগুলোর মাঝে কানাডা অন্যতম।

টরোন্টোর পাশের একটি শহর মিসিসওগা’র বাসিন্দা নওমান খান। তিনি ও তার ভাই, দু’জনেই গাড়ি চুরির শিকার। এরপর নোমান নিজেই বোলার্ড বসানোর ব্যবসা শুরু করেছেন।

মি. খান বলছিলেন যে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তান যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন চোরেরা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা তার বাড়ির সামনে পার্ক করে রাখা মার্সিডিজ জিএলই গাড়ির চাবি খুঁজছিলেন। কিন্তু নোমান যখন ওই চোরদের সামনে পড়ে যান, তখন তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।

সেই ‘ভীতিকর’ অভিজ্ঞতার পর দু’টো পুরাতন পারিবারিক গাড়ি বাদে সবগুলোকে বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। নোমান জানান যে এখন ব্যবসা মারফতে তিনি অন্যদের কাছ থেকেও একই ধরনের গল্প শুনছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের একজন গ্রাহক ছিলেন। তার বাড়িটা যেখানে ছিল, সেখানে অনেকগুলো চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। সেজন্য তিনি প্রতি রাতে তার বাড়ির বাইরে একজন করে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতেন। কারণ তিনি কোনোভাবেই নিরাপদ বোধ করছিলেন না।”

কানাডায় গাড়ি চুরির এই ব্যাপকতার বিষয়টিকে ‘আশ্চর্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালক অ্যালেক্সিস পিকিউয়েরো।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় কানাডার জনসংখ্যা অনেক কম হওয়ার পরও সেখানে এত বেশি সংখ্যক গাড়ির চুরির ঘটনা রীতিমতো বিস্ময়কর। তিনি এও বলেন যে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেসব চুরির মতো অপরাধ ঘটে, সেগুলোর চেয়ে কানাডায় গাড়ি চুরির অপরাধের হার বেশি।

“যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক বন্দরনগরীও নেই কানাডাতে,” বলেন মি. পিকিউয়েরো।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য, এই তিন দেশেই কোভিড মহামারীর সময় থেকে গাড়ির চুরির হিড়িক দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই তিন দেশের মাঝে কানাডায় গাড়ি চুরির হার বেশি। কানাডায় প্রতি লাখে গড়ে ২৬২ দশমিক ৫টি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ২২০টি।

তবে কম জনসংখ্যার দেশ কানাডার গাড়ি চুরির হার যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় কাছাকাছি। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি এক লাখ মানুষের গড়ে ৩০০টি গাড়ি চুরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ‘পোর্ট নেটওয়ার্ক কন্টেইনার টার্মিনাল’

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ‘পোর্ট নেটওয়ার্ক কন্টেইনার টার্মিনাল’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাড়ির চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে মহামারীর কারণে সৃষ্ট ‘গাড়ি সংকট’ একটি বড় কারণ। সেসময় গাড়ির উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় গাড়ির ঘাটতি দেখা দিলে বিশ্বব্যাপী নতুন ও পুরাতন, উভয় ধরনের গাড়ির চাহিদাই বেড়ে গিয়েছিলো।

কানাডিয়ান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (সরকারি সম্পর্ক) ইলিয়ট সিলভারস্টেইন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু মডেলের গাড়ির একটি ক্রমবর্ধমান বাজার গড়ে উঠছে। সেখানে চোরাইগাড়িগুলো বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠীগুলো।

কিন্তু মি. সিলভারস্টেইন বলেন, কানাডার বন্দরগুলোর কার্যক্রম যেভাবে পরিচালিত হয়, তাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে এ ধরনের পাচারের ঝুঁকি বেশি থাকে।

“দেশ থেকে কী বের হচ্ছে, এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে কানাডার বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় অন্য দেশ থেকে কানাডাতে কী এলো, তার দিকে”, তিনি বলেন। তিনি আরও বলেন যে বন্দরে কোনও গাড়িকে একবার শিপিং কন্টেইনারে প্রবেশ করানোর পর সেটিকে ধরা কঠিন।

এদিকে, দেশটির পুলিশ চুরি হওয়া কিছু গাড়ি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।

গত অক্টোবরে টরন্টো পুলিশ সার্ভিস ঘোষণা করেছিলো যে ১১ মাসের তদন্তে এক হাজার ৮০টি গাড়ি উদ্ধার করেছে তারা, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার।

গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের শেষভাগ, এই সময়ের মধ্যে মন্ট্রিল বন্দরে ৪০০টি শিপিং কনটেইনারে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৬০০টি চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধার করেছে দেশটির সীমান্ত রক্ষায় থাকা দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ও পুলিশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ মালামাল আসা-যাওয়া করে, তাতে এই ধরনের অভিযান চালানো কঠিন। শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই মন্ট্রিল বন্দর দিয়ে ১৭ কোটি কনটেইনার যাওয়া-আসা করেছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের ওই কন্টেইনারগুলোকে পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি থাকে না এবং কাস্টমস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কেবল বর্ডার কর্মকর্তারা কোনোপ্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়া ওগুলো খুলতে পারে।

অন্যদিকে, চলতি বছরের এপ্রিলে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি (সিবিএসএ)। সেখানে সংস্থাটি তাদের লোকবল সংকটের কথা বলেছে।

চোর যাতে গাড়ি চুরি করতে না পারে, সেজন্য অনেকে 'স্টিয়ারিং হুইল লক' ব্যবহার করেন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,চোর যাতে গাড়ি চুরি করতে না পারে, সেজন্য অনেকে ‘স্টিয়ারিং হুইল লক’ ব্যবহার করেন।

শুধু তাই নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রযুক্তিও এক্ষেত্রে একটি বড় কারণ।

কানাডার অন্টারিও শহরের ব্রাম্পটনেও প্রচুর গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা’র বন্দরগুলোর তল্লাশি কার্যক্রমের মাঝে পার্থক্য কী কী, তা দেখার জন্য ব্রাম্পটন মেয়র প্যাট্রিক ব্রাউন সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ‘পোর্ট নেটওয়ার্ক কন্টেইনার টার্মিনাল’ পরিদর্শন করেছেন।

তিনি কানাডা’র ন্যাশনাল পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে স্ক্যানার আছে। বন্দরে কী পরিমাণ কন্টেইনার আছে, তা তারা নিবিড়ভাবে যাচাই করে। এছাড়া, তারা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।”

“এই কাজগুলো আমরা কানাডাতে করি না,” তিনি যোগ করেন।

সিবিএসএ বিবিসিকে জানিয়েছে, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যখন গাড়ি চুরি সংক্রান্ত অপরাধগুলো পরিচালনা করে, তখন সিবিএসএ সরাসরি পুলিশের কাছ থেকে সবরকম তথ্য পায়। তারপর তারা গিয়ে ওই চুরি হওয়া গাড়িগুলোকে বিদেশে পাচার হওয়ার হাত থেকে ঠেকায়।

তারা আরও জানিয়েছে ২০২২ সালে তারা মন্ট্রিল বন্দর থেকে এক হাজার ৩০০টি ও ২০২৩ সালে এক হাজার ৮০০টি চুরি হওয়া যানবাহন আটক করেছে।

চলতি বছরের তেসরা জুলাই এক হাজার ৪০০টিরও বেশি যানবাহন আটক করেছে সিবিএসএ।

কানাডা সরকার গত মে মাসে ঘোষণা দিয়েছে যে কানাডার সীমান্তরক্ষী বাহিনী সিবিএসএ-এর শিপিং কন্টেইনারে তল্লাশি চালানোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তারা কয়েক মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বিনিয়োগ করবে। গাড়ি চুরি ঠেকাতে পুলিশের জন্যও অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মি. সিলভারস্টেইন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে গাড়ি চুরি হওয়ার পেছনে মূল রহস্য আসলে উৎপাদকদের মাঝেই নিহিত আছে।

“সবাই চুরি হওয়া গাড়িগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টার কথা বলছেন। কিন্তু গাড়িগুলো যেন চুরি না হতে পারে, গাড়িগুলোকে শুরুতেই সেভাবে কেন তৈরি করা হচ্ছে না, সেটিই আমি বুঝতে পারছি না,” তিনি বলেন।

কানাডা'র অন্টারিওতে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে গাড়ি চুরি করছেন মুখোশ পরিহিত একজন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,কানাডা’র অন্টারিওতে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে গাড়ি চুরি করছেন মুখোশ পরিহিত একজন।

সেক্ষেত্রে প্রতিবেদনের শুরুতেই যার কথা বলা হচ্ছে, মি. লাফর্নিয়ার, তার মতো গাড়ির মালিকের এখনও ‘গাড়ি কিভাবে নিরাপদে রাখবেন’, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো না।

তার র‍্যাম রেবেল ট্রাকটি চুরি হওয়ার পর তিনি ‘টয়োটা টুন্ড্রা’ গাড়ি কিনেছেন। এটিকে তিনি তার ‘স্বপ্নের গাড়ি’ বলে বর্ণনা করেছেন।

এবার তিনি তার গাড়িকে চোরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গাড়ির ইঞ্জিনে ইমোবিলাইজার নামক এক ধরনের যন্ত্র ইন্সটল করেছেন, যাতে চোর এসে খুব সহজেই গাড়ি স্টার্ট করতে না পারে।

তারপরও যদি কোনোভাবে গাড়ি চুরি হয়ে যায়, সেজন্য তিনি তার গাড়ির অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য ট্যাগ ট্র্যাকারও লাগিয়েছেন। সেইসঙ্গে তিনি গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলে বিশেষ তালাও যুক্ত করেছেন।

কিন্তু এত কিছুর পরও চোরদের উৎপাত থামেনি। মি. লাফর্নিয়ারের ওই টোয়াটা টুন্ড্রা গাড়িটিও চুরি করতে এসেছিলো দুইজন। অবশ্য এবার তাদেরকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। গাড়ির ভেতরে ঢোকার জন্য তারা গাড়ির পেছনের জানালা ভেঙ্গেছিলো।

জানালা ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মি. লাফর্নিয়ারের। তারপর তিনি কানাডা’র জরুরি সেবা ৯১১-এ কল দেন। চার মিনিটের মাঝে পুলিশ এসে গেলেও ততক্ষণে চোরেরা পালিয়ে যায়।

এরপর তিনি তার ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির জানালায় পুনরায় নতুন কাঁচ লাগান এবং বিক্রি করেন দেন।

তিনি বলেন, গাড়ির নিরাপত্তার জন্য এই অগ্নিপরীক্ষা “হতাশাজনক” এর চেয়ে কম কিছু ছিল না।

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com