শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

কানাডায় স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সুযোগ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ মে, ২০২১

কানাডায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো শিক্ষার্থী পড়তে আসে। ২০১৯ সালে কানাডায় পড়তে এসেছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখের ওপরে। এই শিক্ষার্থীরা কানাডার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এর পাশাপাশি অনেকে পড়াশোনা করে কানাডায় স্থায়ীভাবে থেকে যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে কানাডা তাদের ইউনিভার্সিটি ও কলেজগুলোর পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সুযোগ করে দিচ্ছে। এই সুযোগের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো শিশু কানাডায় আসছে। যারা আসছে, তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে ধনীর সন্তান। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এই প্রোগ্রামে আপনার সন্তানকে পাঠাতে চান, তাঁরা শুরুতেই মনে রাখবেন, দেশে যদি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে না থাকেন, তাহলে আপনার সন্তানকে এ প্রোগ্রামে পাঠাতে পারবেন না।

কানাডায় জনশিক্ষার একটি শক্তিশালী, বৃহৎভাবে পরিচালিত এবং সুনিশ্চিত ব্যবস্থা রয়েছে। ফলস্বরূপ, কানাডায় শিক্ষাব্যবস্থার কিছু দিক প্রদেশগুলির মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, যেহেতু কানাডার ফেডারেল সরকার দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে, তাই সারাদেশে শিক্ষার মান ধারাবাহিকভাবে উচ্চ। কানাডার সমস্ত স্কুল এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ভাল এবং সাশ্রয়ী মূল্যের।

কানাডার স্কুলগুলোর শিক্ষার মান অনেক উন্নত। এখানে অনেক প্রভিন্সে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা হয় না। স্কুলের পর বাসায় গিয়ে পড়াশোনার কোনো চাপ নেই। অন্তত গ্রেড সেভেন স্কুলে কোনো বই নিয়ে যেতে হয় না। স্কুলগুলোতে বিশাল জিম, লাইব্রেরি, বাইরে ট্যুর, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুলগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি মিউজিক, থিয়েটার, আর্ট, রান্না, ইলেকট্রিক ও কাঠের কাজ, কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, ড্রাইভিং ইত্যাদি শিখানো হয়। ১২ ক্লাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশু সবকিছু শিখে বের হয়। কানাডায় একটি সরকারী এবং বেসরকারী শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। কানাডিয়ান সরকার কিন্ডারগার্টেন থেকে পরবর্তী মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাকে ভর্তুকি দেয় এবং তার জিডিপির প্রায় ৬% শিক্ষায় ব্যয় করে। এর অর্থ কানাডা ওইসিডি দেশগুলির মধ্যে গড়ের চেয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে আনুপাতিক বেশি ব্যয় করে।

কানাডার সরকারি ইমিগ্রেশনের ওয়েবসাইট (www.cic.gc.ca) এ গিয়ে ‘Studzing in Canada as a minor’ লিখে সার্চ দিলে সব তথ্য পেয়ে যাবেন। কানাডার স্কুলগুলো প্রভিন্সিয়াল সরকারের অধীনে। প্রতিটি প্রভিন্সে আলাদা আলাদা স্কুল ডিভিশন রয়েছে। আপনি যে প্রভিন্সে আপনার সন্তানকে পাঠাতে চান, সেখানে যোগাযোগ করবেন। সেই স্কুল ডিভিশন থেকে অফার লেটার পেলে সন্তানের ভিসার জন্য আবেদন করবেন। কানাডার ১০টি প্রভিন্স ও ৩টি টেরিটরিতে মাইনরের বয়সের পার্থক্য রয়েছে। কিছু জায়গায় ১৮ বছর কিছু জায়গায় ১৯ বছর।

আপনার সন্তান যেহেতু ১৮ বা ১৯ বছরের নিচে, সেই কারণে তাকে একা পাঠাতে পারবেন না। আপনার সন্তান প্রথমে এক বছরের ভিসা পাবে। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিসা নবায়ন করতে হবে। আপনি বা আপনার স্পাউস যেকোনো একজনকে শিশুর সঙ্গে আসতে হবে। চাইলে দুজনও আসতে পারেন। যিনি সঙ্গে আসবেন, তিনি ভিজিট ভিসায় আসবেন। সে কারণে আপনাদের আলাদাভাবে কানাডার ভিজিট ভিসা নিতে হবে। এ ভিসার মেয়াদ পাঁচ বছরের হতে পারে। এ ভিসায় যিনি আসবেন, তিনি একনাগাড়ে ছয় মাসের বেশি কানাডায় থাকতে পারবেন না। ছয় মাস থেকে বাংলাদেশে ফিরে আবার পুনরায় কানাডায় আসতে হবে।

কানাডায় যেহেতু আপনি বা আপনার স্পাউস সব সময় কানাডায় থাকবেন না, সে কারণে কানাডায় একজনকে কাস্টোডিয়ান লাগবে। তাঁকে কানাডার নাগরিক বা কানাডার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি হতে হবে। তিনি যে এলাকায় থাকবেন, আপনার সন্তানকে ওই প্রভিন্সের এবং তাঁর বাসার কাছের স্কুলে পড়াতে হবে। অর্থাৎ তিনি যদি অন্টারিও প্রভিন্সে থাকেন, তাহলে ওখানেই পড়াতে হবে। কাস্টোডিয়ান খোঁজার ক্ষেত্রে নিজের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবকে প্রাধান্য দেবেন। তা খুঁজে না পেলে কানাডায় অনেকে টাকার বিনিময়ে কাস্টোডিয়ান হন। তাঁদের খুঁজে নিতে হবে। সন্তানের পিতা-মাতা যদি কাছে না থাকেন, সন্তান শিশু হওয়ার কারণে তাকে অবশ্যই ওই কাস্টোডিয়ানের বাসায় থাকতে হবে। ওই কাস্টোডিয়ান যেহেতু সম্পূর্ণ অফিশিয়ালভাবে আপনার সন্তানের দায়িত্ব নেবেন, সে কারণে সন্তানের সব দায়িত্ব তাঁর। অর্থাৎ তিনি কানাডার আইন অনুসারে আপনার সন্তানের দায়িত্ব নিতে বাধ্য। কাস্টোডিয়ান যেহেতু আপনার সন্তানের সব দায়িত্ব নিবেন, অর্থাৎ থাকা-খাওয়াসহ স্কুলের সবকিছু দেখাশোনা করবেন তিনি, সে কারণে তাঁকে পে করতে হবে।

কানাডায় নাগরিক বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্টদের সন্তানদের ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা সম্পূর্ণ ফ্রি। কিন্তু যারা কানাডার বাইরে থেকে পড়তে আসে, তাদের নিজেদের খরচ নিজেদের বহন করতে হয়। প্রভিন্সভেদে অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে প্রায় এক হাজার কানাডিয়ান ডলার টিউশন ফি লাগতে পারে। যিনি কাস্টোডিয়ান হবেন, তিনি যেহেতু তার থাকা-খাওয়াসহ সবকিছুর দায়িত্ব নেবেন, তাঁকে আপনার কমপক্ষে মাসে ১ হাজার ৫০০ কানাডিয়ান ডলার দিতে হতে পারে। তা ছাড়া চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কানাডিয়ান ডলার ইস্যুরেন্স কিনতে হবে। আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ আছে। আর আপনি বা আপনার স্পাউস যদি সন্তানের সঙ্গে সব সময় থাকতে চান, তাহলে স্কুলের খরচ ছাড়া প্রতি মাসে প্রায় তিন হাজার কানাডিয়ান ডলার লাগবে থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ।
অনেকেই ভাবেন এটা নিয়ে। আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে ভিজিট ভিসায় যেহেতু আসবেন, সে কারণে আপনি কোনোভাবেই কাজ করার অনুমতি পাবেন না। যদি কেউ ভেবে থাকেন, কানাডায় সন্তানের সঙ্গে এসে আপনি কাজ বা ব্যবসা করে টাকা আয় করবেন, তা কিন্তু সম্ভব হবে না।

আপনার সন্তান কানাডায় এসে পড়াশোনা করার পর ওয়ার্ক পারমিট এমনিতেই পাবেন। তা ছাড়া ১৮ বছর হলে তিনি ছাত্রাবস্থায় পার্টটাইম জব করতে পারবেন। পড়াশোনা শেষ করে (কমপক্ষে ১২ ক্লাস) ৬ মাস ফুলটাইম জব করার পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিন বছরের মধ্যে কানাডিয়ান নাগরিক হয়ে যাবেন।

আসা-যাওয়ার খরচ বাদে যদি প্রতি মাসে ৩ হাজার ৫০০ কানাডিয়ান ডলারের ওপরে খরচ করতে না পারেন, তাহলে সন্তান পাঠানোর কথা চিন্তা করবেন না। আর আপনি যে সন্তানের সঙ্গে ভিজিট ভিসায় আসবেন, তা দিয়ে আপনি কোনোভাবেই কানাডায় কাজ করে ডলার আয় করতে পারবেন না। বাংলাদেশ, কানাডাসহ অনেক দেশে অনেক প্রতারক চক্র আছে, তারা আপনাকে বলতে পারে যে আপনি কানাডায় গিয়ে কাজ করে আপনার ও আপনার সন্তানের পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারবেন, এটা কিন্তু সঠিক নয়। (তথ্যসূত্র: কানাডা গভর্নমেন্ট ওয়েবসাইড, গেøাবাল নিউজ টরন্টো)।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com