আগেই বলে নিচ্ছি এগুলো আমার ব্যক্তিগত অভিমত যা প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা হতে পারে। সবার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি বা মেনে নেওয়ার বিষয়গুলো এক হতে পারে না।
সর্বপ্রথমে যেটা ভালো ফিল হবে সেটা হলো এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অসংখ্য অপরূপ সুন্দর লীলাভূমি ছড়ানো রয়েছে। রয়েছে অনেক মুক্ত মাঠ ও বাচ্চাদের খেলার পার্ক। সেসব পার্কে রয়েছে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন উপকরণ সমূহ যেমন ধরেন, দোলনা, Slide, আছে বিনা মূল্যে ওয়াটার পার্ক। এগুলো সব উন্মুক্ত থাকে। পয়সা লাগে না।
তাছাড়া যেসব ঐতিহাসিক ওয়াটার ফল রয়েছে নায়াগ্রা ফলস এসব দেখতেও টিকিট লাগে না। এসব দেখে মনটা ফুরফুরে হয়।
এরপর যেটা সেটা হলো চিকিৎসা সেবা:
জানি এখনই অনেকেই চিল্লাচিল্লি করবেন। কারণ, কানাডায় হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে গেলে অপেক্ষা করতে হয়। অনেকের ফ্যামিলি ডাক্তার নেই। স্পেশালিস্ট পেতে দেরি হয় এসব অভিযোগ আছে। অভিযোগ অনেকটা সত্য হলেও আমার বেলায় ততটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় নি কখনোই।
তাছাড়া আরেকটা কথা হলো যে, যার যখনই দরকার হচ্ছে তখনই তিনি চিকিৎসার জন্য কোথাও না কোথাও যেতে পারতেছেন এবং সেবা পাচ্ছেন।
আমার সবচেয়ে ভালো লাগে এদেশের হাসপাতালগুলো অত্যন্ত সুন্দর-মনোরম। ডাক্তারদের ব্যবহার অমায়িক ও কাজের প্রতি তাদের কোনো রকম পক্ষপাতদুষ্ট নেই। গরীবের এক, ধনীর আরেক চিকিৎসা এসব নেই। আমি তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
আমি কানাডিয়ান সিটিজেন হলেও আমি তো ইমিগ্রান্ট হয়ে আসা তাই না? আমাদের গায়ের রং তো সাদা না। চিকিৎসা সেবায় এসব বিচার করা হয় না এটাই হলো একটা শান্তির বার্তা।
এই তো সেইদিন গিয়েছিলাম emergency তে। সেখানে আমার যে সিচুয়েশন হয়েছিল তো নিজের মেয়েরাও হয়তো সংকোচবোধ করত সেসব ডিল করতে। কিন্তু হাসপাতালের বড়ো ডাক্তার, নেমপ্লেট গলায় ঝোলানো ছিল ওনার পরিচিতি সেই উনি দুই-হাত দিয়ে সবকিছু পরিস্কির করলেন। উনি তো পারতেন বাইরে গিয়ে একজন ক্লিনার পাঠিয়ে সব ক্নিন করাতে। কিন্তু না তিনিই করলেন। সেইদিন আমার ওনাদের ওপরে পজিটিভ ধারণা আরো একশো ডিগ্রি বেড়েছে।
এখানে আরেকটা সুবিধা হলো নাগরিকদের ফেডারেল ইন্সুরেন্স থাকায় চিকিৎসা সেবা আমাদের জন্য একটা আর্শীবাদ বলা যায়। নগদ টাকা গুণতে হলে মজাটা বোঝা যেত আরকি।
রাস্তায় যাতায়াতের সুবিধা :
এদেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনগুলো খুব সুন্দর। আরো নতুন নতুন নামানো হচ্ছে। এক টিকিটেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো নিজের একখানা গাড়ি থাকলে লাইফ নব্বই পারসেন্ট ইজি হয়ে যায়। আমি প্রতিদিন ছয়-সাত কিলোমিটারের বেশি যাই কাজে বিশ মিনিটের মধ্যে। এই যে একটা ঝামেলা মুক্ত যাতায়াত মনে কিন্তু শান্তি আনে। তাছাড়া আপনি চাইলেই নিজেই গাড়ি চালিয়ে গোটা কানাডা ঘুরে বেড়াতে পারবেন সমস্যা নেই। রাতে-বিরাতে মেয়েরাও রাস্তায় বের হন। কাজে যান-কাজ থেকে ফেরেন।
আপনি যেকোনো ধরণের কাজ করতে পারবেন। সাদা চামড়ার কানাডিয়ানরা বা অন্য জাতিরা সবাই কাজকেই মূল্যায়ন করে, কাজের ধরণটা না। শুধুমাত্র বাঙালিরা নাকটা একশো আশি ডিগ্রি উঁচুতে রেখে দেন আর বলে বেড়ান আমরা দেশে যেকোনো কাজ করার পরিবেশে বেড়ে উঠি নি। বোঝেন ঘটনা।
তো এদেশে যার যা ইচ্ছে সেই কাজ করতে পারেন যার-যার যোগ্যতা অনুযায়ী। এতে কোনো হেজিটেট বা সম্মানহানীর ব্যাপার হয় না।
কাজ খোঁজার জন্য আপনি কী করবেন ভালো করে একটা কানাডিয়ান স্টাইলের রেজ্যুমি বানাবেন। যে কাজের জন্য আবেদন করবেন সেই কাজে আপনার অভিজ্ঞতা আছে ফোকাস করবেন।
অনেক চাকরিতে অভিজ্ঞতা ছাড়া কাজে নেয় না। সেইক্ষেত্রে আপনি পড়াশোনা করা শুরু করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে placement বা co-op এ পাঠাবে। চাকরির মতো। বেতন ছাড়া। এটা আপনার কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা হবে। অভিজ্ঞতা থাকলে অনেক ফিল্ডে কাজ পাওয়া যায়। অনেক কাজ আছে অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঢোকা যায়। তবে নিজের পরিচিত রেফারেন্স লাগে।
ধর্মীয় কাজ করা যায়:
এদশে যে কোনো ধর্ম পালনে কোনো বাধা নেই। অনেক মসজিদ আছে। বিশাল বড়ো-বড়ো মন্দির তৈরি করা হয়েছে। আছে গির্জা বা অন্যান্য উপাসনালয়। যে যার মতো ধর্মীয় কাজ বা উৎসব পালন করেন।
বেনিফিটস:
এদেশে রয়েছে রেকর্ড পরিমিণ বেনিফিটসের সমাহার। প্রত্যেকটা বাচ্চার জন্য মাসে-মাসে পাবেন ট্যাস্ক ফ্রি বেনিফিটস আপ-টু ছয়শোর মতো হবে কানাডিয়ান ডলার। ফ্যামিলি ইনকাম আর বাচ্চার সংখ্যার ওপর কম-বেশি নির্ভর করে। বতর্মানে এই রেট একটুখানি বেড়েছেও।
অসুবিধা হলো:
১. ক্রাইম বেড়েছে। যদিও প্রথম যখন এসেছি তার চেয়ে এখন বেড়েছে।
তবে এসব ক্রাইম বেশিরভাগ হয় একেবারে নিজেদের মধ্য, একে অন্যের চেনাজানার ভেতরে। কার্নি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কমতেও পারে।
২. স্কুলের ছাত্ররা ভায়োলেন্স করে। নিজেরা একই জাতের মধ্যে এসব করে।
৩. অসুবিধা হলো: ফ্যামিলি ডাক্তারের এপোয়েন্টমেন্ট পেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগে, স্পেশালিস্ট পেতে এক থেকে ছয় মাস সময় লাগে। Emergency তে সমস্যার ওপর ডিপেন্ড করে সময় লাগে তিন থেকে ছয় ঘণ্টা লাগতে পারে। এই যে দেরি এটা একটা সমস্যা মনে হয় অনেকের কাছে।
৪. কাজ খুঁজে পাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কানাডা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপে চ্যাপ্টা হয়ে আছে। তবে এর মধ্যেও অনেক বিজ্ঞাপন সংস্থা নিয়োগের এড দিয়ে যাচ্ছে। আপনি একটা এপ্লাই করে বসে থাকলে হবে না। এমনও রেকর্ড আছে অনেকে দিনে আশিটা করে এপ্লাই করেন কাজের জন্য।
৫. প্রভিন্স অনুযায়ী জীবনযাত্রার খরচ বেশি। যেমন, বাড়ি ভাড়া, বাজার দর ইত্যাদি।
যাই হোক, সুবিধা-অসুবিধার মধ্যে কানাডায় থাকতে আমার কাছে বেশ ভালো লাগে।