উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জনপ্রিয় এক গন্তব্যও এই দেশ।প্রত্যেক বছর লাখ লাখ মানুষ এই দেশটিতে পাড়ি জমান। দেশটির ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ অভিবাসী আর বাকি ৪ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ ফার্স্ট নেশন। যে কারণে কানাডাকে অভিবাসীদের দেশ হিসেবে বলা হয়। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে কানাডার ভিসা পাওয়া যাবে। আজকের এই প্রতিবেদনে কানাডার ভিসার আবেদন থেকে শুরু করে ভিসা পাওয়া পর্যন্ত খুঁটিনাটি তথ্য তুলে ধরা হবে।
তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং অন্যান্য উচ্চ-আয়ের বেশিরভাগ দেশের নাগরিকদের কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বাকিদের কানাডায় প্রবেশের জন্য অবশ্যই ভিসার দরকার হবে।
যারা কাজের সন্ধানে বা পড়াশোনার জন্য কানাডায় যেতে চান, তাদের কর্ম ভিসা বা স্টাডি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কানাডার ভিসার আবেদনের প্রায় সব প্রক্রিয়াই এখন অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন শেষ করার পর হাই কমিশন বা কনস্যুলেটে গিয়ে আপনাকে ছবি ও আঙ্গুলের ছাপের বায়োমেট্রিক্স দিতে হবে।
কানাডার ভিসার আবেদনের জন্য আপনি এই লিঙ্কে প্রবেশ করে নির্দেশনা অনুযায়ী যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। তার আগে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…
কানাডা সরকারের অভিবাসন এবং নাগরিকত্ববিষয়ক পোর্টালে দেশটির ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই পোর্টালে ভিসার ধরন ও সেই অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে পারেন। ভিসা সংক্রান্ত প্রায় সবকিছুই আপনি অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর ভিসার ধরনের ওপর নির্ভর করে বায়োমেট্রিক্স দেওয়ার জন্য ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনে যেতে হবে।
কানাডার সরকারের বিভিন্ন ধরনের অভিবাসন কর্মসূচি রয়েছে। সেখান থেকে আপনার চাওয়ার সাথে মিলে যায় এমন যেকোনও একটি ধরন বেছে নিতে পারেন। তবে এই প্রতিবেদনে আপনাকে কয়েক ধরনের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জানানো হবে। যাতে ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারেন।
কানাডা সরকার মূলত কয়েক ধরনের ভিসা দিয়ে থাকে…
আপনি কানাডায় কেন যেতে চান তার ওপর নির্ভর করে ওপরের যেকোনও একটি ধরন বেছে নিতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং উচ্চ-আয়ের বেশির ভাগ দেশের নাগরিকদের কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না। তবে অন্যান্য দেশের বেশিরভাগ বিদেশিকে কানাডার সরকারের ওয়েবসাইট থেকে অবশ্যই একটি ইলেক্ট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) সংগ্রহ করতে হবে। যা আপনি অনলাইনে আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পেতে পারেন।
কানাডা ভ্রমণে যাওয়ার জন্য আপনার ভিসার প্রয়োজন আছে কিনা তা এই ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারেন।
• ভ্রমণের পুরো সময়জুড়ে আপনার ব্যয় নির্বাহ করার সক্ষমতা
• ভ্রমণ শেষে কানাডা ত্যাগ করার নিশ্চয়তা
তবে আপনি যদি প্রথমবারের মতো কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই বায়োমেট্রিক্স জমা দিতে হবে। যা কানাডিয়ান কনস্যুলেট অথবা হাইকমিশনে গিয়ে দেওয়া যাবে।
কানাডার ভ্রমণ ভিসার বিস্তারিত পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে।
প্রত্যেক বছর কানাডা সরকার লাখ লাখ মানুষকে দেশটিতে কাজের সুযোগ দেয়। ২০২১ সালে দেশটির সরকারের এক ঘোষণায় বলা হয়, আগামী তিন বছরে কানাডায় অন্তত ১২ লাখ বিদেশি কর্মী কাজের সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ থেকেও অনেকে দেশটিতে কর্ম ভিসায় যেতে পারবেন।
• প্রথমে কানাডায় কাজের সন্ধান করুন। যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে ভালো কোনও নিয়োগকর্তার সন্ধান পেতে পারেন আপনি। আপনার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায় এমন কোনও কাজ পেলে কানাডার নিয়োগকর্তাই আপনার জন্য কর্ম ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করবেন।
• আপনার কাছাকাছি এলাকায় কোনও নিয়োগকারী সংস্থাকে খুঁজুন। যারা আপনাকে কানাডায় কাজ খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে। তবে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগকারী সংস্থার দ্বারস্থ হতে হবে। এই কাজের সময় অনেকে বিভিন্নভাবে প্রতারণারও শিকার হয়ে থাকেন।
• কানাডার সরকারের কর্মসংস্থান প্রকল্পে আবেদন করুন। এই প্রকল্পের আওতায় অনেক সময় চাকরি ছাড়াই কানাডার ভিসা পাওয়া যায়।
কর্ম ভিসার জন্য বিস্তারিত জানতে কানাডার সরকারের এই লিঙ্কে প্রবেশ করুন।
প্রথমত আপনাকে কানাডার যেকোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে হবে। আপনাকে সেসব বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ করতে হবে; যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
এরপরে আপনার জন্য কানাডার সরকারের স্টাডি পারমিটের দরকার হবে। এই স্টাডি পারমিট কানাডায় অবস্থানের জন্য আপনার শিক্ষার্থী ভিসা হিসাবে কাজ করবে।
এছাড়া আপনার যদি কানাডীয় গবেষণার লাইসেন্স থাকে অথবা পুনরায় পড়াশোনা শুরু করতে চান, তাহলে গবেষণার লাইসেন্স পুনঃনবায়ন অথবা ফের পড়াশোনা শুরু করার জন্য আবেদন করতে পারেন।
আপনি যদি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান তাহলে আপনাকে একটি জিনিস প্রদর্শন করতে হবে। আপনি কানাডার যেখানে বসবাস করতে চান, সেখানকার কর্তৃপক্ষ আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার মাধ্যমে কীভাবে উপকৃত হবে, সেটি উপস্থাপন করতে হবে।
আর আপনার পরিবারের কোনও সদস্য যদি আগে থেকেই কানাডায় বসবাস করেন, তাহলে তার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমতির আবেদন করতে পারেন।
আপনি কানাডায় গিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু অথবা সফল ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান বলেও উল্লেখ করতে পারেন। স্থায়ী বসবাসের আবেদন করার জন্য আপনাকে কানাডায় কোনও চাকরি খুঁজতে হবে না।
বিদেশিরা কানাডায় যাওয়ার জন্য যোগ্য কিনা তা যাচাই করে দেখতে দেশটির সরকার একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও তার জবাব দেওয়া আছে। আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায় এমন প্রশ্নের জবাব দিয়ে আপনি চাইলে নিজেকে যাচাই করে দেখতে পারেন। এই লিঙ্কে প্রবেশ করে নিজেকে যাচাই করুন।
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার জন্য এবারে আপনাকে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হবে। আপনি যদি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের যোগ্য হন, তাহলে দেশটির সরকার আপনাকে একটি কার্ড দেবে। যা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা পিআর কার্ড নামে পরিচিত।
আর এই কার্ড পাওয়ার পর আপনি যখন কানাডায় যাবেন, তখন সেখানকার কর্মকর্তাদের কাছে আপনাকে এই কার্ড ও পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।
স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে আপনি বিশ্বের উন্নত এই দেশটিতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
• কানাডার নাগরিকরা যে ধরনের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পান, আপনিও সেসবের বেশিরভাগ সুবিধা পাবেন
• সরকারি স্বাস্থ্য সেবা
• কানাডার যেকোনও স্থানে বসবাস, পড়াশোনা অথবা কাজ করতে পারবেন
• স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পর আপনাকে সব ধরনের কর পরিশোধ ও কানাডীয় সব আইন মেনে চলতে হবে
তবে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পরও আপনি নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পারবেন না :
• ভোট দেওয়ার অধিকার পাবেন না
• রাজনৈতিক কোনও দলের পদে থাকতে পারবেন না
• নির্দিষ্ট কিছু চাকরি করতে পারবেন না