ম্যাপল পাতার দেশ কানাডা যেতে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা আবশ্যক। বাংলাদেশে কানাডার ভিসা আবেদন কেন্দ্র সিভিএসি পরিচালনার কাজটি করে ভিএফএস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড। এ কেন্দ্রকেই ভিসা আবেদন গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে কানাডা সরকার। ভিসা আবেদনপত্র জমা নেয়ার পাশাপাশি পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র বিতরণের কাজটিও কানাডার ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে করা হয়।
এছাড়া প্রয়োজনে ভিসা সাক্ষাতকারের জন্য শিডিউলের ব্যবস্থা করে। কানাডার অভিবাসন ভিসা আইন ও গাইডলাইন অনুসারে ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা ভিসা আবেদন নিষ্পত্তি করেন, ভিসা ইস্যু করা না করার ব্যাপারে সিভিএস বা কানাডার ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কোন ভূমিকা নেই।
ভিএফএস কানাডা ভিসা আবেদন কেন্দ্র: ঢাকা: ৫ম তলা, ডেল্টা টাওয়ার, প্লট-৩৭, রোড-৯০, গুলশান নর্থ, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম: বাড়ী নং-৩৮, চেম্বার হাউজ, ৫ম তলা আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম-৪১০০, বাংলাদেশ। সিলেট: ৮ম তলা, নির্বাণ ইন, মির্জা জঙ্গল রোড, রামের দীঘির পাড়, সিলেট-৩১০০, বাংলাদেশ। ওয়েবসাইট: http://www.vfsglobal.ca/canada/bangladesh/
অফিস সময়: সরকারি ছুটির দিন ছাড়া রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার খোলা থাকে। সকাল ০৯:০০ থেকে বিকাল ০৫:০০ টা পর্যন্ত অফিস খোলা থাকে। আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময়: সকাল ০৯:০০ থেকে বিকাল ০৫:০০ টা পর্যন্ত।
পাসপোর্ট সংগ্রহের সময়: বিকাল ০৩:০০ টা থেকে বিকাল ০৫:০০ টা পর্যন্ত। হেল্প লাইন: ফোন: +88 09606 777 888 (সকাল ০৯:০০ থেকে বিকাল ০৫:০০ টা পর্যন্ত) ই-মেইল: [email protected] (ই-মেইল বা এসএমএস-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করলে ব্যক্তিগত তথ্য না দেয়াই ভালো কারণ এ ধরনের বার্তা ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। )
ভিসা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ জানাতে নাম, যোগাযোগের ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করে অভিযোগ পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। এক কর্ম দিবসের মধ্যে প্রাপ্তিস্বীকার করা হয় এবং তিন দিনের মধ্যে পূর্ণ জবাব দেয়া হয়।
ট্যুরিস্ট ভিসা: বেড়াতে কিংবা পরিবারের সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা করতে কানাডা যেতে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
সন্তান-সন্ততি বা নাতি-নাতনিদের সাথে দেখা করতে: কানাডার নাগরিক এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করছে এমন সন্তান-সন্ততি বা নাতি-নাতনি থাকলে দু’বছর মেয়াদি প্যারেন্ট এন্ড গ্র্যান্ড প্যারেন্ট সুপার ভিসা দেয়া হয়।
ভিসার তথ্য: কানাডা ভ্রমণ বা বা কানাডা হয়ে অন্য দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রয়োজন হবে। এদিকে ২০১৩ সালে থেকে কানাডা ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের জন্য ছবির পাশাপাশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কানাডার ট্যুরিস্ট ভিসার নিয়মাবলী: বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে, কানাডায় থাকা এবং সেখান থেকে ফেরার মত আর্থিক সচ্ছলতা আছে, এর প্রমাণ হিসেবে চাকরি, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পত্তি দেখাতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড থাকলে কানাডা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না।
এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কানাডায় অবস্থানকারী কারো আবেদনপত্র প্রয়োজন হতে পারে। ব্যবসা বা পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে বারবার কানাডা যাওয়ার প্রয়োজন হলে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেয়া হয়। কেবল একবার প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার মাধ্যমে।
বিমানের যাত্রা বিরতি বা ফ্লাইট বদলের জন্য ৪৮ ঘণ্টার কম সময় কানাডা অবস্থানের প্রয়োজন হলে ট্রানজিট ভিসা দেয়া হয়। ভিসা আবেদনের সাথে একটি সাক্ষরিত কনসেন্ট ফর্ম বা সম্মতিপত্র দিতে হয়, এটি ছাড়া ভিএফএস ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করা হয় না।
ভিসা আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর একটি রসিদ দেয়া হয় এই রসিদে এটি ট্র্যাকিং নম্বর থাকে যেটি ব্যবহার করে অনলাইনে আবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়।
পাসপোর্ট জমা দেয়া: আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর কানাডা সরকারের তরফ থেকে পাসপোর্ট জমা দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট লেটার পাঠানো হবে, এই রিকোয়েস্ট লেটারসহ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। আবেদনকারী নিজে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ভিসা আবেদন কেন্দ্রে গিয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে পারে।
পাসপোর্ট সংগ্রহ: আবেদনকারী নিজে গিয়ে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেখে নিয়ে কানাডার ভিসা অফিস থেকেও পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যায়।
সার্ভিস চার্জ জমা দেয়ার পদ্ধতি: কানাডার ভিসা আবেদন কেন্দ্রে কেবলমাত্র নগদ টাকার মাধ্যমে এসব সেবা মাশুল জমা দেয়া যাবে। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক গৃহীত হয় না।
ভিসা ফি জমা দেয়া: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ভিসা আবেদন ফি জমা দেয়া যায়। এছাড়া ভিএফএস কেন্দ্রে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি বুথ রয়ছে সেখান থেকেও ব্যাংক ড্রাফট সংগ্রহ করা যায়। এজন্য সার্ভিস চার্জ হিসেবে ২৮০.৩০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। আবার কানাডার কোন ব্যাংক থেকেও “রিসিভার জেনারেল ফর কানাডা” বরাবরে কানাডিয়ান ডলারে ব্যাংক ড্রাফট করে জমা দেয়া যায়।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়: ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন ক্যামেরা, অডিও/ভিডিও ক্যাসেট, কম্প্যাক্ট ডিস্ক, এমপিথ্রি প্লেয়ার, ফ্লপি, ল্যাপটপ, পোর্টেবল মিউজিক প্লেয়ার ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ ভিসা আবেদন কেন্দ্র প্রবেশ নিষেধ।
ট্রাভেল ব্যাগ, ব্যাক প্যাক, ব্রিফকেস, স্যুটকেস, চামড়া, পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ইত্যাদি সাথে নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। কেবল ভিসা আবেদনপত্র নেয়ার জন্য একটি প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। সীল করা প্যাকেট বা এনভেলপ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায় না।
ম্যাচ বাক্স, লাইটার বা অন্য কোন দাহ্য বস্তু নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। ছুরি, কাঁচি জাতীয় ধারালো বস্তু এবং অস্ত্র বা বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। এসব ছাড়া আরও কোন সামগ্রী নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করলে সেটা নিয়ে প্রবেশে বাধা দেয়া হতে পারে।
আবেদনকারী ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয় না, তবে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সাহায্যকারীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সাথে অনুবাদক প্রবেশ করতে পারে। ভিসা আবেদন কেন্দ্রে প্রবেশের সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই সরকারি পরিচয়পত্র দেখাতে হবে, এটা পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড হতে পারে।
ব্যাগ বা যেসব জিনিসপত্র নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না তা গেটে রেখে প্রবেশের কোন ব্যবস্থা নেই। সেগুলো নিজ দায়িত্বেই বাইরে রেখে প্রবেশ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: দেশে বিদেশে