ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচিতি : কানাডায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। আর প্রতি বছরই এই দেশটি ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। যদিও অন্যান্য উন্নত দেশের মতো কানাডার মার্কেট পরিধি তেমন বৃহৎ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ না। তবুও বিভিন্ন অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও কানাডার ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থিতিশীল ছিলো। বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম সেরা পাঁচটি শিল্পক্ষেত্র হলো, কৃষি , শক্তি , প্রযুক্তি, পরিষেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং।
চাকরি : একটি দেশে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চাকরির পদ ও কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু চাকরি রয়েছে যেগুলো অস্থায়ী, বিভিন্ন মৌসুমীকে কেন্দ্র করে, এ ধরনের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে হসপিটালিটি এবং ট্যুরিজম ক্ষেত্রের চাকরিগুলো সাধারণত অস্থায়ী হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে কর্মজীবন শুরু করতে, তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। আপনি ইচ্ছা করলে, খুব সহজেই এসব চাকরিতে যোগদান করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি স্থায়ী চাকরি খোঁজ করেন এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় কাজ করতে ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার যথার্থ পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমেই শুধুমাত্র এসব স্থায়ী চাকরিগুলোতে নিয়োগ পেতে পারেন। কানাডার অধিবাসীদেরকে সাধারণত এসব স্থায়ী চাকরিতে যোগদান করতে উৎসাহিত করা হয়।
তবে বিদেশী নাগরিকদেরও এ ধরনের চাকরিক্ষেত্রে কাজ করার অপার সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। ব্যাংকিং, ইন্সুরেন্স, রিটেইল ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই, কানাডার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থায়ীভাবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
কাজের ভিসা : ব্রিটিশ নাগরিকদের কানাডায় প্রবেশের জন্য সাধারণত ভিসার প্রয়োজন হয় না। তবে আপনি যদি বিমানযোগে কানাডায় প্রবেশ করতে চান। তবে ইলেকট্রনিক ট্রাভেল ভিসার প্রয়োজন হবে। ১৮ থেকে ৩০ বছরর বয়সী যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য ওয়ার্কিং ট্রাভেল ভিসা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ভিসা পেতে হলে অবশ্যই ভিসার আবেদনের পূর্বেই একটি চাকরি নিশ্চিত করতে হবে।
আর আপনি যদি ব্রিটিশ নাগরিক না হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে কাজের জন্য অবশ্যই একটি ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা পেতে হলে পূর্বেই আপনাকে একটি চাকরির বন্দোবস্ত করতে হবে। আর আপনি যদি স্থায়ীভাবে থাকতে চান, তবে স্থায়ী স্থান নির্বাচন করে ভিসার জন্য আবেদন করুন। আপনি একটি চাকরি পেয়ে গেলে, কাজের জন্য ভিসা পেতে আপনাকে তেমন কোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে না। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আপনি ভিসার জন্য আবেদন করলে, কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই আপনি কানাডায় কাজের জন্য ভিসা পেয়ে যাবেন।
উপার্জন : কানাডায় পূর্ণ কর্মঘণ্টার একটি চাকরি করে গড়ে বছরে ৩০ হাজার পাউন্ড আয় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশর মুদ্রার হিসাবে অনুযায়ী প্রায় ৩১ লাখ টাকা। আয় মূলত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং কাজের ধরনের ওপরে নির্ভর করে। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে কানাডায় বেশ উচ্চ বেতনের চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন।
সুযোগ-সুবিধা : কানাডায় যদি আপনি কাজ ও বসবাস করেন। তবে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। যেমন : উন্নত মানের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাবেন, নিরাপদভাবে বসবাস করতে পারবেন, উন্নতমানের জীবনযাপন করতে পারবেন, প্রথম শ্রেণির স্বাস্থ্য সেবা পাবেন, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের সঙ্গে বসবাস করার সুযোগ পাবেন এবং বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
কীভাবে চাকরি পাবেন : কানাডায় চাকরি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এছাড়াও সহজে চাকরি পেতে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
গবেষণা করুন : কানাডা একটি বৃহৎ দেশ এবং এ দেশের মধ্যে কাজ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তাই আপনাকে গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে, আপনার জন্য উপযুক্ত কাজ ও স্থান কোনটি। এজন্য কানাডার বিভিন্ন স্থান ও কাজ সম্পর্কে পূর্বেই ধারণা অর্জন করতে হবে। যেমন: আপনি যদি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করতে চান, তবে অটোয়া আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান। আবার যদি তেল ও গ্যাস শিল্পে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে চান, তবে টরেন্টো আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে। তাই আপনি কোন কাজের জন্য উপযুক্ত, কানাডার কোথায় আপনি আপনার পছন্দের কাজ পাবেন এবং বসবাসের জন্য আপনার উপযুক্ত স্থান কোনটি হতে পারে, এগুলো গবেষণা ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে খুঁজে বের করুন।
নেটওয়ার্ক : চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আপনার শক্তি নেটওয়ার্ক থাকলে, খুব সহজেই ভালো চাকরি পেয়ে যেতে পারেন। তাই আপনি কানাডায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করুন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করুন : দেশের ভিন্নতা অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত তৈরির ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই আপনি চাকরিতে আবেদন করার আগেই কানাডিয়ান স্টাইলে জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে ফেলুন। এতে আপনার চাকরি পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এসব বিষয় ছাড়াও আপনি কানাডিয়ান ক্রেডেনশিয়াল অর্জনের চেষ্টা করুন এবং আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি খোঁজ করুন। তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার পছন্দের চাকরি পেয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা করা যায়। এসব বিষয়ে প্রতি খেয়াল রেখে কর্মপন্থা গ্রহণ করলে, আপনি খুবই সহজে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ পাবেন এবং সফল ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হবেন।