প্রথমে বলে রাখছি কানাডায় দুর্নীতি বা ঘুস খাওয়ার মাধ্যমে রাতারাতি কেউ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নও দেখতে পারেন না। এখানে মানুষ যতবেশিই আয় করুক না কেন এক সঙ্গে কেউ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার জমাতেও পারেন না। তবে হ্যাঁ, যারা $100 thousand CAD বা তার বেশি ইয়ারলি ফ্যামিলি বা একক ইনকাম করেন তারা তো কিছু জমাতেই পারেন। কিন্তু মিনিমাম ওয়েজ পাওয়া বা সাধারণ বেতন পাওয়া মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব না। তাছাড়া চলমান অবস্থায় মানুষের জীবনধারণ অনেক কষ্টকর হয়ে ওঠেছে কানাডার অনেক প্রভিন্সে বিশেষ করে টরন্টোতে।
তারপরেও মানুষ কিন্তু মিলিয়ন CAD এর মালিক হয়ে যাচ্ছেন। কেমন করে?
সোজা কথায় বাড়ি বেচাকেনা করে। আমি আমার নিজের নাম ধরে যদি সত্যটা তুলে ধরে উদাহরণ দিই তাহলে আপনারা যারা পড়েন তাদের কারোর কারোর হাতে একটা তীর থাকে। তীরটা সরাসরি আমার বুকে মেরে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর বলেন, আমি গর্ব করছি, আমি আমারটা আপনাদের দেখানো বা শোনানোর জন্য বলছি। অথচ আমি কীভাবে একটা টাকাও বাংলাদেশ থেকে না এনে এখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একটা টানলের মধ্যে দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছি সেটা বোঝাতে গেলেই আপনারা তীরটা ছুড়ে মারেন। এটা কোনো গর্ব না আল্লাহর রহমত। তবে কোনো বাঙালি যদি বাড়ি কেনেন, ভালো গাড়ি কিনতে পারেন মোট কথা ভালো থাকতে পারেন আমার কিন্তু সেই বাঙালির জন্য গর্ব হয়। তার কথা কিন্তু আমি আপনাদের জানাতে চাই। পৃথিবীর অন্যান্য জাতি যখন ভালো কিছু করতে পারে তাদের মধ্যে সেসব নিয়ে কোনো হিংসে হয় না। কিন্তু বাঙালি জাতি যদি একটা ভালো জামাও পরে তাহলে অন্য বাঙালি সেটা টেনে খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাহলে জাতি হিসেবে আমরা সমষ্টগতভাবে কীভাবে উন্নতি করব সেটা ভেবে দেখার বিষয়। আবার কেউ কোনো প্রফেশনে ভালো করছে বলে আমি যদি প্রশংসা করি অনেকে নোংরা মন্তব্য ছুড়ে মেরে বলেন, আমি ঐ মানষটার দালালি করছি। আমি নাকি কমিশন পাব! হায়রে বাঙালি জাতি। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও এই নোংরা মানসিকতা কখনোই ধ্বংস হবে না।
এখন বলি কানাডায় মানুষ কীভাবে মিনিয়নিয়ার হচ্ছে। আমার এক পরিচিত বাঙালি আপা 2012 সালে একটা টাউনহাউজ (টাউন হাউজ মানে সেপারেট কোনো বাড়ি না। একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে থাকা দুই-তিন তলা বিশিষ্ট বাড়িগুলোকে টাউন হাউজ বলা হয়।) কিনেছিলেন। সে সময় তিনি কিনেছিলেন 5 hundred thousand CAD দিয়ে। এক সপ্তাহ আগে তিনি টাউন হাউজটা বিক্রি করেছেন। বর্তমান বাজার দরে ওনার বাড়ির দাম পেয়েছেন 1.1 মিলিয়ন CAD। তাহলে উনি কতো লাভ করলেন? 5 hundred 1 thousand CAD. তাছাড়া এই ১১ বছরে উনি মর্টগেজ হিসেবে যত পে করেছেন সবই তার কাছে ফিরে এসেছে। যা এপার্টমেন্টে ভাড়া দিয়ে থাকলে ফিরে আসত না।এই বাড়িটা যে দামে কিনেছিলেন বিক্রি করে যত বেশি পেলেন এটা টাকার মধ্যে তো এক বিন্দু কোনো অসৎ বা অন্যায় করা টাকা না।
আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। আরেক বাঙালি একটা বাঙলো কিনেছেন 2014 সালে 5 hundred 40 thousand CAD দিয়ে। বতর্মান টরন্টোর বাজার মূল্যে তার বাড়ির বিক্রি দাম 1.4 মিলিয়ন CAD। যে দাম চাওয়া হয় তারচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বেশিরভাগ সময়ে। তাহলে হিসেব করেন ৯ বছরে একটা বাড়িতে প্রায় 1 মিলিয়ন CAD লাভ! এটা কিন্তু যেমন তেমন কথা না। ১১ কেন ২২ বছর ধরে কষ্ট করে চাকরি করে কানাডায় 1.2 মিলিয়ন CAD জমানো কারোর সাধ্য নেই সোজা কথায়।
আবার 2014 সাল থেকে বাড়িটার মর্টগেজ শোধ করা হয়েছে প্রায় $200 thousand CAD. তাহলে বাড়িটা মর্টগেজ 2023 সালে $300 thousand CADএর কিছু বেশি বাকি আছে শোধ করতে। বাড়িটা যখন $1.4 মিলিয়ন CAD দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে তখন টোটাল টাকা ফিরে আসছে লাভের ধরেন 1 মিলিয়ন CAD+ শোধ করা $200 thousand CAD. মোট তিনি
পাচ্ছেন 1 মিলিয়ন 2 hundred thousand CAD.
আর এই অতিরিক্ত টাকার মধ্যে কোনো অসৎভাবে আয় করা বা কাউকে ধোঁকা দিয়ে নেওয়া টাকা নেই।
এক দাদা আমার পাশে থাকেন। তিনি একটা বাড়িতে থাকেন। আর পাঁচটা বাড়ি কিনে ভাড়া দিয়েছেন। যদিও তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে আছে। পুরোনো বাড়ি কেনেন। সেটা মেরামত করে চলমান রেটে বিক্রি করেন। ভালো লাভ হয়। এ কথা শুনে আবার আপনারা বেগম পাড়া বলে আঙ্গুল তুলবেন না। এখানে অনেক বাঙালি কষ্ট করে ইনকাম করে ধীরে ধীরে এসব করেছেন।
এখানে বাড়ি কেনার পর বাড়ির মর্টগেজ শোধ করতে হয়। ব্যাংকের একাউন্ট থেকে সরাসরি মর্টগেজ কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করা থাকে। সেই পরিমাণ অর্থ আগেই ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। মর্টগেজ না দিতে পারলে ব্যাংক বাড়ি নিয়ে নেয়। তাই সবাইকেই আয় করতে হয় বাড়ির টাকা শোধ করতে। ব্যাংক কারোর এমনিতেই টাকা লোন দিয়ে বসে থাকে না।
যাই হোক আগে যারা বাড়ি কিনেছেন এখন তারা বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন। বাড়ির দাম গতবছর অনেক বেশি ছিল। এ বছর একটু কম। তবে Bank of Canada দুদিন আগে আরেক দফা ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে 4.75 হয়েছে। তাই বাড়ির দাম একটু কম হলেও ইন্টারেস্ট বেশি হওয়ায় মর্টগেজ বেশি দিতে হবে। তবুও বাড়ি বেচাকেনা থেমে নেই জীবনধারণের তাগিদে।
কাজী হালিমা আফরীন
টরন্টো, কানাডা।
Like this:
Like Loading...