কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী এবং নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রী মার্কো ই. এল মেন্ডিসিনো ৯০ হাজারের ও বেশি প্রয়োজনীয় কর্মী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একটি অভিনব পথ ঘোষণা করেছেন।
এই বিশেষ পাবলিক নীতিগুলির মধ্যে অস্থায়ী কর্মী এবং আন্তর্জাতিক স্নাতকদের যারা স্থায়ীভাবে কানাডায় রয়েছেন এবং যারা করোনা মহামারীর সঙ্গে লড়াই করতে এবং কানাডার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তাদের স্থায়ী মর্যাদা দেওয়া হবে।
আবেদনে যোগ্য হওয়ার জন্য, শ্রমিকদের হেলথ কেয়ার পেশায় বা অন্য কোনো ও প্রাক-অনুমোদিত প্রয়োজনীয় পেশায় কমপক্ষে এক বছরের কানাডীয় কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক স্নাতকদের অবশ্যই শেষ ৪ বছরের মধ্যে একটি যোগ্য কানাডিয়ান পোস্ট-সেকেন্ডারি প্রোগ্রাম সম্পন্ন করতে হবে এবং তা জানুয়ারী ২০১৭ এর আগের নয়।
২০২১ সালের ৬ মে থেকে ইমিগ্রেশন, শরণার্থী এবং নাগরিকত্ব কানাডা (আইআরসিসি) নিম্নলিখিত ৩টি স্ট্রিমের আওতায় আবেদন গ্রহণ করতে শুরু করবে। এরমধ্যে স্বাস্থ্যসেবাতে অস্থায়ী কর্মীদের জন্য ২০ হাজার আবেদন, অন্যান্য নির্বাচিত প্রয়োজনীয় পেশায় অস্থায়ী কর্মীদের জন্য ৩০ হাজার আবেদন এবং কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ হাজার আবেদন।
সম্প্রতি দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধরে রাখতে বার্ষিক অভিবাসন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডার অভিবাসন দপ্তর।
দেশটিতে এ বছর এরইমধ্যে ৭০ হাজার অভিবাসীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন। যদিও এ বছর ৪ লাখেরও বেশি অভিবাসীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কানাডা সরকার।
তবে, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি আপাতত সম্ভব না হওয়ায়, দেশটির অভ্যন্তরে অস্থায়ীভাবে বসবাসরতদের স্থায়ী অভিবাসনের অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কানাডা সরকার। গত বছর প্রায় এক লাখ ৮৫ হাজার অভিবাসীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয় কানাডা সরকার।
গত বছরে ৩০ অক্টোবর কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্কো মেন্ডিচিনুর ২০২১–২৩ সালের মধ্যে ১২ লাখ ৩৩ হাজার অভিবাসী আনার ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় বড় বড় সিটির বাইরে সুনির্দিষ্ট কম জনবহুল এলাকায় সেখানকার সুনির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য ইমিগ্রান্টদের আনা হবে। আগামী তিন বছরে ৬০ শতাংশ নেওয়া হবে দক্ষ অভিবাসী-এক্সপ্রেস এন্ট্রি, পিএনপি, অ্যাগ্রিফুড পাইলট প্রোগ্রাম, রুরাল অ্যান্ড নর্থার্ন ও মিউনিসিপাল পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে। ফ্যামিলি ক্লাস, রিফিউজি স্পনসরশিপ, হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যান্ড কম্পাশনেট ও অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
এ বছরের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পাওয়া যাবে।
বিশিষ্ট কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, কানাডার অভিবাসন নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর কানাডা বিভিন্ন পেশায় যেভাবে প্রবাসীদের স্থায়ী আবাসিক হওয়ার অনুমোদন দেয় ৯০ হাজার স্থায়ী অভিবাসনের প্রক্রিয়াটি তা থেকে ভিন্ন কিছু নয়। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পতম সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি, কিছু পেশায় বেশি সংখ্যক আবেদন অনুমোদনের সম্ভাবনা ছাড়া এতে আর কোনো নতুনত্ব নেই। বাংলাদেশিদের এ প্রোগ্রাম থেকে বিশেষভাবে লাভবান হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাসরত বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রুপক দত্ত বলেন, নতুন এবং দক্ষ জনশক্তি বিশেষ করে এর মধ্যে যারা বাংলাদেশী রয়েছেন তারা কানাডায় স্থায়ী নাগরিকত্ব অর্জন করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটাই আমার বিশ্বাস।
কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সাবেক ছাত্রনেতা কিরন বণিক শংকর বলেন, আমার ৩০ বছরের কানাডিয়ান জীবনের অভিজ্ঞতায় এই প্রথম এ ধরনের একটি আশানুরূপ সংবাদ পেলাম। বাংলাদেশিদের জন্য এটি খুবই সুসংবাদ। অভিবাসন মন্ত্রীর এই ঘোষণা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে-এমনটাই আমার প্রত্যাশা।