বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন
Uncategorized

কাতার

  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১

কাতারের সরকারী নাম “স্টেট অফ কাতার”। এটি পারস্য উপসাগরের একটি দেশ। এটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত কাতার উপদ্বীপে অবস্থিত। কাতারের দক্ষিণে সৌদি আরব এবং এর পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত।

আরব উপদ্বীপের মত কাতারও একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। এখানে ভূ-পৃষ্ঠস্থ কোন জলাশয় নেই এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যাও যৎসামান্য। তবে দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ আছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্তও এটি একটি তুলনামূলকভাবে দরিদ্র দেশ ছিল। ঐ সময় দেশটিতে পেট্রোলিয়ামের মজুদ আবিষ্কৃত হয় এবং এগুলি উত্তোলন শুরু হয়। বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি।

১। ১৯শ শতকের শেষভাগ থেকে আল-থানি গোত্রের লোকেরা কাতার অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দেশটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৯৭১ সালে এটি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।

২। ১১ হাজার ৫১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ২৬ লাখ ৪১ হাজার মানুষের বাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৫৮ তম বৃহত্তম দেশ।

৩। আরবি ভাষা কাতারের সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় ৫৬% লোক আরবি ভাষাতে কথা বলেন। প্রায় এক-চতুর্থাংশ লোক ফার্সি ভাষায় কথা বলেন। বাকীরা ভারতীয় উপমহাদেশের ও ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য ভাষাতে কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

৪। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে, ১৩.৮ শতাংশ খ্রিস্টধর্মে, ১৩.৮ শতাংশ হিন্দুধর্মে এবং ৩.১ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী।

৫। কাতারের রাজধানী হচ্ছে দোহা। এই দেশের বেশিরভাগ লোক শহরে, বিশেষত রাজধানী দোহাতে বসবাস করে।

Source: https://skyticket.com

৬। কাতারের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ এই দেশের স্থানীয় বাসিন্দা আর বাকি ৮৫ শতাংশ চাকরির জন্য এসেছে এই দেশে।

৭। কাতারে জনসংখ্যায় নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এই দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে নারীর সংখ্যা সাত লাখের কম। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাতারে হঠাৎ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

৮। প্রচুর তেল ও গ্যাসের মজুদ থাকা দেশ কাতার পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয়ের দেশও। গত বছর এক জরিপে দেখা গেছে, কাতারে মাথাপিছু আয় প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজার ডলার। যা দুই নম্বরে থাকা  ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গের থেকে প্রায় ২০ হাজার ডলার বেশি।

৯। গত এক দশকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রচুর সম্পদ কিনেছে কাতার। কয়েকমাস আগে কাতারের অর্থমন্ত্রী বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, যুক্তরাজ্যে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫ থেকে ৫১ বিলিয়ন ডলারের মতো। শুধু তাই নয়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও ৫ বিলিয়ন পাউন্ডের মতো সম্পদ ক্রয়ের ইচ্ছা রয়েছে দেশটির।

১০। কাতারের সম্পদ বণ্টন বেশ অসামঞ্জস্য। দেশটির সাবেক আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানির সম্পদের পরিমাণ ২.৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু কাতারে একজন অভিবাসী শ্রমিকের মাসিক আয় ৩৫০ ডলার।

১১। কাতারের মানুষদের কোন রকম ট্যাক্স দিতে হয়না। এবং এই দেশের ১ শতাংশেরও কম মানুষ বেকার।

১২। কাতার একটি রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশটি শিল্পকলার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। ২০১১ সালে নিউইয়র্কে এক নিলাম থেকে প্রায় সাত মিলিয়ন ডলার খরচ করে সুইজারল্যান্ডের একজন ভাস্করের তৈরি প্রায় ২০টন ওজনের একটি ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তি ক্রয় করে কাতার সরকার।

১৩। বিশ্বে ইসলামপন্থীদের প্রথম মানসম্পন্ন টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা কিন্তু কাতারের। প্রতিষ্ঠানটির করা সর্বশেষ ‘ক্রুসেড সিরিজটা’ বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছে। এ ছাড়া খেলাধুলার জনপ্রিয় চ্যানেল ‘বিএন’ও তাদের।

১৪। ফুটবল ক্লাব পিএসজির নাম তো আপনারা অবশ্যয় শুনেছেন। এই ক্লাবটির মালিকও কিন্তু কাতার।

১৫। এই দেশেই ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে।

১৬। বর্তমানে বিশ্বে কাতার এয়ারওয়েজ বিমান ভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ এয়ারলাইন্স।

Source: https://www.scmp.com

১৭। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত দা এস্পায়ার টাওয়ার এই দেশের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং।

১৮। কাতারে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদন হয়। যার অন্যতম প্রধান কারন এই দেশে কোন বনভূমি নেই। বিশ্বে কোন বনভূমি নেই এইরকম দেশের সংখ্যা মোট ৪ টি। যার বাকি ৩ টি দেশ হলও সান মারিনো, গ্রীনল্যান্ড এবং ওমান।

১৯। কাতার পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলির মধ্যে একটি।

২০। ঐতিহ্যবাহী কাতারি খাবার ভারতীয় এবং ইরানী রান্না দ্বারা প্রভাবিত। কাতারি স্পেশাল ডিশগুলির মধ্যে রয়েছে ঘুজি, মোটাবেল, বিরিয়ানী, টাবৌল্লহ এবং হুমুস।

২১। কাতারে কোন পাহাড় নেই। এই দেশের উঁচু জায়গাগুলির গড় উচ্চতা মাত্র ২৮ মিটার।

২২। হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ২০১৪ সালে তৈরি হয়েছিল। প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন যাত্রীকে পরিচালনা করার ক্ষমতা রয়েছে এই বিমানবন্দরটির। হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের নবম বৃহত্তম।

২৩। কাতারের  তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে।

২৪। কাতারের আমীর হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান। আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি ২০১৩ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

২৫। কাতারে ২ ধরনের আইন প্রচলিত আছে। প্রথম ছিভিল আইন আর ২য় শরীয় আইন। শরীয় আইন খুবই শক্ত আর কঠিন। শরীয় আইন উনুজায়ি যদি আপনি ধর্মকে নিন্দা করেন তাহলে ৭ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

২৬। কাতারের মুদ্রার নাম হচ্ছে রিয়াল। ১ কাতারি রিয়াল বাংলাদেশি টাকাই প্রায় ২৩ টাকার সমান।

২৭। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ১৮৩.৮০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

২৮। কাতারের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৯৭৪।

খালিদ হাসান

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com