বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

কাছ থেকে অন্নপূর্ণা দর্শন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫

চোখ বুজলেই ফ্লাশব্যাকের মতো ঝকঝকে সাদা বরফের পাহাড়ের ছবি ভেসে উঠছে মনে। অনেক দিন ধরে শুধু নেপালের বরফের পাহাড় অন্নর্পূণার সৌন্দর্যের গল্প শুনেছি। হিমালয় পর্বতমালার মাছাপুচ্ছুরে পর্বতের ওপর সূর্যোদয় সকাল-বিকেল একই মুগ্ধতা নিয়ে শুনেছি এসব কথা। গল্প শুনে, ছবি দেখে দেখে মনে মনে আমিও যাব বলে ঠিক করে ফেলি।

কাঠমান্ডুতে যে অবিন্যান্ত বিল্ডিং ও অপরিচ্ছন্ন শহর দেখছি, পোখারা প্রবেশ করে সেই ধারণা পাল্টালো। সুন্দর সাজানো-গোছানো পরিপাটি শহর পোখারা। পাহাড়ের মাঝে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ নীল পানির লেক দেখে মন জুড়িয়ে গেলো। বিল্ডিংগুলো দেখে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে ওঠার ছাপ সুষ্পষ্ট। সন্ধ্যায় হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম থেকে ভোরে উঠে অন্নপূর্ণা পর্বতশৃঙ্গ দেখার জন্য বের হই।

অন্নপূর্ণা

মঙ্গলবার ভোররাত ৪টায় হোটেল থেকে অন্নপূর্ণা পর্বতশৃঙ্গ দেখার জন্য রওনা দেই। কুয়াশাঘেরা পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়ক। সেজন্য চালক ধীরগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভোর ৫টায় গিয়ে আমরা সারাংকোট পৌঁছায়। নেপালের পোখারা সারাংকোট চূড়া। পুরো আকাশ ছেয়ে আছে কালো-সাদা মেঘ। তীব্র শীত। পাহাড়ি সড়ক বেয়ে প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু সারাংকেট চূড়া।

এ পথ বেয়ে ওঠার উদ্দেশ্য হিমালয়ের বুক চিরে সূর্যাদয় দেখা। আর ভোরের সূর্যের আলোয় হিমালয়ের অন্নপূর্ণা, ফিশটেইল ও ধবলগিরি শৃঙ্গের জ্বলে ওঠা দেখা। সারাংকোট পাহাড়ের চূড়া থেকে ভোরের সূর্যোদয় দেখার সবচেয়ে ভালো স্থান।

বরফে ঢাকা পর্বতগুলো কখনো মেঘের ফাঁকে উঁকি দিয়ে, কখনোবা কিছু অংশসহ একেক রূপে হাজির চোখের সমানে। প্রায় ২০০০ ফুট উপরের একেকটি ভিউ পয়েন্ট বেছে নিয়ে অস্পষ্ট-স্পষ্ট অন্নপূর্ণা, ফিশটেইলের সৌন্দর্য উপভোগ! অন্নপূর্ণার এ যেন আরেক মায়া।

হিমালয় যেন বিস্ময়। ভোরের আলোয় হিমালয়ের চূড়া স্বর্ণের খনি। তবে ভোরের আলোয় অন্নপূর্ণা পবর্তের সোনার বরণ রূপ দেখতে প্রয়োজন সূর্য দেবতার স্বয়ং কৃপা। বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরাও কেউ হাত ছড়িয়ে, কেউবা আঙুল নির্দেশ করে, ভি চিহ্ন দেখিয়ে ধারণ করছেন মুহূর্তটাকে। আবার যা দেখছেন সেটুকু ধারণ করছেন ভিডিও ক্যামেরায়। সময় যখন শেষ, তখন সূর্যের এমন হাসি চূড়ান্ত মশকরাই মনে হচ্ছিল।

সময়ের ব্যবধানে কুয়াশার ফাঁকে সূর্যের মৃদু আলো বিচ্ছুরণ। আলোর আস্তরণ অন্নপূর্ণার চূড়া ও ফিশটেইলের ওপর পড়ে। সাদা বরফ ঢাকা এই শৃঙ্গগুলো চিক চিক করে স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। সকালের মৃদু আলোয় অন্নপূর্ণা চূড়ার এই রূপ।

সকাল সাড়ে ৭টায় ঝলমল করে ওঠে সারাংকোটের পুরো আকাশ। ততক্ষণে সময় শেষ, স্বর্ণ বরণ অন্নপূর্ণা চূড়ার মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার। তাই তো, সূর্যের এমন হাসি চূড়ান্ত মশকরাই মনে হলো হচ্ছিল তখন। আমি সকাল সাড়ে ৬টায় কয়েকটি ছবি ফ্রেমবন্দি হয়েছি মুঠোফোনে।

এরপর পোখারা লেক ঘুরতে গেলাম। পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাইডের মজাও উপভোগ করা যাবে এখানে। সে জন্য যেতে হবে পোখারার ফেওয়া লেকে। এখানে আছে ক্যানোইং, নৌকা চালানো, সাঁতার কাটা, সেইলিং, মাছ ধরা, কায়াকিং ও বিভিন্ন পাখির সমারোহ।

ফেওয়া হ্রদের মাঝখানে বারাহি নামের একটি মন্দির আছে। পোখারা বিমানবন্দর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অদ্ভুত সুন্দর একটি ঝরনা হলো ডেভিস ফল। ফেওয়া লেকের পানি থেকে সৃষ্ট এই ঝরনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রহস্য।

পোখারার সৌন্দর্য উপভোগ করে অবশেষে হোটেল ফিরে খাওয়া দাওয়া করে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে আবার পোখারা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে একটি গাড়ি রওনা দেই। রাত ১১টার দিকে কাঠমান্ডু থামেলের পাশে আমাদের হোটেলে উঠলাম। রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন বুধবার ঘুম থেকে ওঠে কেনাকাটা করার জন্য শহরের অলি-গলিতে গেলাম। জিনিসপত্র কেনার পর আমরা হোটেলে ফিরে আসি। বলে রাখা ভালো, তীব্র শীত। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা নেপালে। সাধারণত আবহাওয়া পরির্বতনের কারণে আমাদের অনেকের সর্দি ও জ্বর দেখা দেয়।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল নাগরকোট। সেজন্য আগে থেকে গাড়ি চালককে বলে রেখেছি। যে চালক আমাদের কাঠমান্ড শহর ঘুরে দেখিয়েছেন, তিনি আমাদের নাগরকোট ঘুরে দেখাবেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় হোটেল স্টাফের কল। গাড়ির চালক নিচে চলে এসেছে। নাগরকোট যাওয়ার জন্য বের হতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com