বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন

কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশে’ চলছে হাহাকার

  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার মারকুইস স্ট্রিট ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত। কারণ, এই এলাকায় গড়ে ওঠা সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো কাস্টমার মূলত বাংলাদেশিরা। কিন্তু সাম্প্রতিক অস্থিরতায় কলকাতার এই মিনি বাংলাদেশে হাহাকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশিদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। ফলে অনেককেই আধপেটা খেয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানা গেছে

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটের ফুটপাতের ধারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ বিক্রি করেন নিজামুল। কিন্তু দেখলে মনে হবে, সেই বিক্রির বারোটা বেজে গেছে। কাস্টমার নেই। কেন নেই প্রশ্ন করতেই নিজামুল বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা জানেন না? সেপ্টেম্বর থেকেই এই হাল। মহাজনের কাছে বেশকিছু ধারবাকি হয়ে গেছে। মাল বিক্রি হচ্ছে না একদম।’

একই সুর ফুটপাতের এক খাবার বিক্রেতার কণ্ঠে। সন্ধ্যা হলেই গমগম করতো চারপাশ। গত চার মাস একেবারে সুনসান। ইদানিং তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে দেন রিয়াজ।

পালাবদলের জের

স্থান মারকুইস স্ট্রিট। কলকাতার মৌলালি থেকে নোনাপুকুরের দিকে গেলে বামহাতে একটি রাস্তা পড়ে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই রাস্তা ধরে এগোলে পৌঁছানো যায় এক চৌমাথায়। চৌমাথা পেরোলেই শুরু মারকুইস স্ট্রিট। অনেকে বলেন কলকাতার বুকে ‘মিনি বাংলাদেশ।’ এটা বলার কারণও আছে। বাংলাদেশ থেকে যারা কলকাতা আসেন, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখানেই থাকেন।

এখানকার ব্যবসায়ী নাগরিকরাও তথৈবচ। বাংলাদেশিদের আসা-যাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে তাদের ব্যবসা। কিন্তু আগস্ট মাস থেকেই বদলে গেছে গমগমে পথঘাটের চিত্রটা। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে এসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনা ‘পালিয়েছেন’ দেশ ছেড়ে। তারপর থেকেই ধস নেমেছে ব্যবসায়।

কী বলছেন হোটেল মালিকরা

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, মারকুইস স্ট্রিট মিলিয়ে গড়ে ওঠা মিনি বাংলাদেশ এলাকায় ২ শতাধিক হোটেল রয়েছে। আগস্ট মাস থেকে তাদের বাজার মন্দা। কথা হচ্ছিল হোটেল আফসারের মালিকের সঙ্গে।

হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, ব্যবসার ভীষণ খারাপ হাল। গত সেপ্টেম্বর থেকেই এখানে বাংলাদেশিদের আনাগোনা কমে গেছে। আমাদের হোটেলে ৪০টি রুম। কিন্তু বর্তমানে ১০-১৫টির বেশি রুম ভর্তি থাকে না। এভাবে চলতে থাকলে অনেকের ব্যবসা উঠে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে, যা তাদের কণ্ঠে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

চিকিৎসার কারণেই শুধু আসছেন

হোটেল গুলিস্তানের মালিক আবার দুষছেন ভারতের টুরিস্ট ভিসা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে। তার কথায়, ‘টুরিস্ট ভিসা উঠে যাওয়ার পর থেকে কাস্টমার অনেকটাই কমে গেছে। আমাদের ব্যবসার বেশিরভাগটাই চলে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে। এখন মেডিকেল ভিসা যারা পাচ্ছেন, তারাই এখানে আসছেন। কিন্তু তাতে পোষাচ্ছে না। কারণ এত হোটেল! সেই সংখ্যায় মানুষ খুব কম।’

রেস্তোরাঁয় কমেছে রান্না

শোচনীয় অবস্থা শুধু যে হোটেলমালিকদের, তাই নয়। বরং সমস্যার ছবি স্পষ্ট বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেও। মারকুইস স্ট্রিটের বিখ্যাত একটি রেস্তোরার ব্যবসা গত এক যুগ ধরে। রেস্তোরাঁর মালিকের কথায়, ‘এমন মন্দা এই প্রথম দেখছি। এর আগেও নানা সময় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। কিন্তু এতটা নয়।’

বাংলাদেশি স্টাইলে রান্নাবান্না থেকে সংস্কৃতিকে অনুকরণ করেও বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ওই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ রেস্তোরাঁর দাবি, তারা খাবারের আইটেমের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছেন। কারণ রান্না করেও লাভ হয় না। যে কয়েকজন কাস্টমার আসেন, সাধারণ খাবারই বেশি খান। বেশি পয়সা বাঁচাচ্ছেন অনেকেই।

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাংলাদেশিরা?

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বেশ টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ও পরবর্তী ঘটনাক্রমে সীমান্তের দুই পাশেই উত্তেজনা তৈরি করেছে। চিন্ময় দাস প্রভুর গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বাড়ছে বিদ্বেষমূলক পোস্ট। এই অবস্থায় নিজেদের কতটা নিরাপদ মনে করছে মিনি বাংলাদেশ?

সেখানকার এক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস সংস্থার কর্মকর্তা হাফিজুলের কথায়, ‘গত চার মাসে ব্যবসা ডাউন হলেও ওরকম ভয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশে যা চলছে তা আমরাও মেনে নিচ্ছি না।’

এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন হোটেল আফসারের মালিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে হিন্দু-মুসলিম বলে আলাদা কিছু নেই। মানুষই শেষ কথা। অনেকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এসব করে লাভ হবে না।’

হিন্দুস্তান টাইমসের সরেজমিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মিনি বাংলাদেশ ঘুরে বোঝাই যাচ্ছে, সেখানকার ব্যবসায়ীদের মাছি তাড়ানোর হাল তৈরি হয়েছে। ফুটপাতে যারা ব্যবসা করেন, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কারণ, অনেকেরই আধপেটা খেয়ে কাটছে দিন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, চাইছেন সকলেই। পেট খালি থাকলেও সম্প্রীতির ধর্ম থেকে সরতে নারাজ তারা!’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com