ভারতে সমপ্রেমে বিয়েতে এখনো আইনি স্বীকৃতি নেই। অর্থাৎ পুরুষে-পুরুষে কিংবা নারীতে-নারীতে বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। দেশটির সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে মামলা চলছে। সেসবের তোয়াক্কা না করেই ভালোবেসে ঘর বাঁধলেন দুই তরুণী। যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
একজন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা এলাকার বাসিন্দা মৌমিতা মজুমদার (সোনু), অন্যজন কলকাতার চিংড়িঘাটার বাসিন্দা মৌসুমী দত্ত।
সামাজিক মাধ্যমে তাদের দু’জনের পরিচয়। এরপর নিয়মিত কথাবার্তা হত। দেখা থেকে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। মৌমিতাই প্রথমে বিয়ের প্রস্তাব দেন মৌসুমীকে। মৌসুমীও তাতে সাড়া দেন।
গত রবিবার বাগদা থেকে কলকাতায় মৌসুমী দত্তের কাছে ছুটে আসেন মৌমিতা। সোমবার রাতে চুপিসারে বিয়ে কাজ সারেন দু’জনে। বরের পোশাকে ছিলেন মৌমিতা, কনের সাজে মৌসুমী। হিন্দু রীতি মেনে গঙ্গার ঘাট লাগোয়া একটি কালী মন্দিরে গিয়ে তারা সিঁদুরদান ও মালাবদল করেন।
বিয়ের পর তারা দুজনেই বাগুইহাটির কাছে একটি বাসায় থাকছেন।
জানা গেছে এর আগেও মৌসুমীর বিয়ে হয়েছিল, তার দুটি কন্যাও আছে। কিন্তু সেই দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। ফলে স্বামীকে ত্যাগ করে আলাদা থাকতেন মৌসুমী।
মৌসুমী জানিয়েছেন গত দু মাস আগেই ইন্সটাগ্রামে পরিচয় হয় মৌমিতা মজুমদারের সাথে। তারপর থেকেই শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং। এরপর তারা জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। তবে তাদের এই সম্পর্ক মানতে পারছে না তাদের পরিবার।
মৌমিতা মজুমদার বলেন ‘আমি মৌসুমিকে ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না, জল ছাড়া যেমন গাছ বাঁচে না আমি মৌসুমিকে ছাড়া তেমনি আমি বাঁচবো না। আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম আমি ওর কাছে যাব কিন্তু তারা রাজি হননি। তারা আমাদের সম্পর্ক মানবে না, তাই বাড়ি থেকে নিরুপায় হয়ে পালিয়ে এসেছি। এখন ওর পরিবার না মানলে আমরা দুজন অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করবো।’
মৌমিতা আরো জানান ‘গতকাল রাতেই মা কালীকে সাক্ষী রেখে আমরা একে অপরকে মালা বদল করে তার সিঁথিতে সিঁদুর তুলে আমি বিয়ে করেছি। আমরা জানি, সমাজ আমাদের মানবে না। কিন্তু আমি ওর সঙ্গেই থাকতে চাই। বাঁচলেও ওর সঙ্গে, মরলেও ওর সঙ্গেই থাকবো।’
‘পুলিশ প্রশাসন যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায় তাহলে আমাদের দু’জনকে একসঙ্গে মেরে ফেলতে হবে। আর যদি বাঁচিয়ে রাখতে চায় তাহলে দুজনকেই রাখতে হবে।’ বলেছেন মৌমিতা।
দুই তরুণীর এই বিয়ে দুই পরিবারেই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দুজনই জানিয়েছেন যদি কোন রকম বড় ধরনের বাধা আসে দু’জন একসাথে হাতে হাত রেখে লড়াই করব। আমরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচবো না।