1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
কয়েক টাকা বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন, ভারতে বেড়েছে ‘ফ্যান্টাসি গেমের’ জনপ্রিয়তা
শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
কক্সবাজারের আকাশে রোমাঞ্চকর প্যারাসেইলিং বিয়ের টোপ দিয়ে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মহিলাদের যৌন ব্যবসায় নামাচ্ছেন চিনা পুরুষেরা যুক্তরাষ্ট্রে পুরো স্কলারশিপ পেয়েও ভিসা আবেদন নিয়ে অনিশ্চয়তায় স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর বিমানে চালু হচ্ছে ‘স্ট্যান্ডিং অনলি’ আসন, কমবে খরচ নেপালের দরবার স্কয়ার যেন এক জীবন্ত জাদুঘর দুবাইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু, প্রতিদিন ১০ হাজার আবেদন গ্রহণ পাইলটের বুদ্ধিমত্তায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ১৮০ বিমানযাত্রী বেতন বছরে ৩০ কোটির বেশি, দুনিয়ায় সবচেয়ে সুখের চাকরি, তবুও কেউ করতে রাজি নয় হাডসন ইয়ার্ডসে গ্রীষ্মে বেড়েছে পর্যটকদের ভিড় কেন দেশ ছাড়ে মার্কিনরা, কোন দেশে বেশি স্থায়ী হয়

কয়েক টাকা বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন, ভারতে বেড়েছে ‘ফ্যান্টাসি গেমের’ জনপ্রিয়তা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ১৭ই মে থেকে আবার শুরু হওয়ায় বেশ উচ্ছ্বসিত। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে আইপিএল স্থগিত করা হয়েছিল। তবে আইপিএল-এর প্রতি মি. গৌতমের এই আবেগের পিছনে শুধুমাত্র ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা নয়, অন্য কারণও রয়েছে।

আসলে, বিশ্বের অন্যতম অর্থশালী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ হিসেবে বিবেচিত আইপিএল চলাকালীন এই দুই মাসই তার কাছে এমন একটা সুযোগ এনে দেয়, যে সময় তিনি ‘ফ্যান্টাসি অ্যাপ’-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

পেশায় গাড়ির পার্কিং লট সামলান ধর্মেন্দ্র গৌতম। তিনি বলেন, “খেলার রোমাঞ্চ আর জেতার আশা আমাকে আকর্ষণ করে।”

‘ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপ্লিকেশন’গুলোতে যে কেউ বাস্তব খেলোয়াড়দের নিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো দল তৈরি করতে পারেন। এই খেলোয়াড়রা আসল ম্যাচে যেমন যেমন পারফর্ম করেন, সেই অনুযায়ী অ্যাপ ব্যবহারকারীরা পয়েন্ট পান।

এই পয়েন্টগুলোর ভিত্তিতে অ্যাপ ব্যবহারকারীরা লিডারবোর্ডে শীর্ষস্থানগুলোতে চলে আসতে পারেন এবং নগদ পুরষ্কার জিততে পারেন। এই গেমে প্রবেশের জন্য ‘এন্ট্রি ফি’ এক টাকা হতে পারে এবং এই টাকা দিয়েই ব্যবহারকারীরা লক্ষ লক্ষ টাকা জেতার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।

মি. গৌতমের মতো অনেক ভারতীয়ের জন্যই, ‘ফ্যান্টাসি ক্রিকেট অ্যাপ’ এমন একটা সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে তারা তাদের প্রিয় খেলা দেখতেও পারেন আবার তার মাধ্যমে অর্থও উপার্জন করার সুযোগ পান।

ভারতে ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তার ফলে এই জাতীয় ‘ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপ’গুলোকে ইতিমধ্যে একটা লক্ষ লক্ষ ভক্তের বড়সড় ভাণ্ডার তৈরি করে দিয়েছে।

ভারতে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। একই সঙ্গে টেলিকম সংস্থাগুলোর মধ্যে সস্তা ইন্টারনেট প্ল্যান চালু করাকে কেন্দ্র করে একটা প্রতিযোগিতাও শুরু হয় যা ‘ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপ’গুলোকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।

সহজলভ্য ইন্টারনেট কানেকশন খেলার ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ এবং ‘ফ্যান্টাসি অ্যাপ’ দু’টোকেই সাধারণ মানুষের মোবাইলের স্ক্রিনে পৌঁছে যেতে সাহায্য করেছে।

বহুজাতিক সংস্থা কেপিএমজি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৬ সালে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ৫৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ওই একই সময়ে ‘ফ্যান্টাসি স্পোর্টস অপারেটর’দের সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ।

পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ, ২০১৯ সালে ‘ড্রিম ১১’ ‘ইউনিকর্ন স্ট্যাটাস’ লাভ করে। অর্থাৎ ওই কোম্পানির সম্পদমূল্য এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। এটাই প্রথম ভারতীয় ফ্যান্টাসি গেমিং প্ল্যাটফর্ম যে এই স্ট্যাটাস অর্জন করে।

এর পরে ২০২১ সালে ‘মোবাইল প্রিমিয়ার লিগ’ (এমপিএল ) এবং ২০২২ সালে ‘গেমস ২৪x৭’ শত কোটি ডলার ব্যবসার ঘরে পৌঁছে যায়।

‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ফ্যান্টাসি স্পোর্টস’ বিবিসিকে জানিয়েছে, ভারতে এখন ২২.৫ কোটির চেয়েও বেশি মানুষ ‘ফ্যান্টাসি স্পোর্টস অ্যাপ’ ব্যবহার করেন। ডেলয়েট-এর সহযোগিতায় পরিচালিত এক গবেষণা থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।

‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ফ্যান্টাসি স্পোর্টস’-এর তথ্য অনুযায়ী, এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন খেলায় অর্থ বিনিয়োগের অনুমতি দেয়, কিন্তু ৮৫% ব্যবহারকারীদের আগ্রহ শুধুমাত্র ক্রিকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

‘ফ্যান্টাসি অ্যাপ’-এর প্রতি এই ব্যাপক আকর্ষণের কারণ খুব সহজ- এর মাধ্যমে দ্রুত টাকা আয় করার আশা।

দিল্লির ক্রীড়া সাংবাদিক সিদ্ধান্ত আনে বলছেন, “এই গেমগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে লোকে ভাবে যে তারাই জিতবে। ভারতে মূলত ক্রিকেটের সঙ্গে এই অ্যাপগুলোর সম্পর্ক ছিল কিন্তু এখন অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রেও তা দেখা যাচ্ছে। এই অ্যাপের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো দ্রুত টাকা পাওয়ার লোভ।”

উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরেজ স্থানীয় আদালতে কেরানির কাজ করেন দয়ারাম। তার গল্প ‘ফ্যান্টাসি গেম’-এর প্রতি ব্যবহারকারীদের মুগ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তিন কোটি টাকা জিতেছিলেন দয়ারাম। ‘লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস’ এবং ‘পাঞ্জাব কিংস’-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত একটা আইপিএল ম্যাচে, তিনি ‘ড্রিম ১১’ অ্যাপ-এর লিডারবোর্ডে শীর্ষে ছিলেন।

তার কথায়, “গত দুই বছর ধরে খেলছি, কিন্তু এটাই আমার প্রথম বড় ধরনের জয়। আমি খুব খুশি, এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।”

দয়ারাম আরও জানান, এই টাকা দিয়ে তিনি পরিবারের জন্য একটা বাড়ি তৈরি করতে চান।

দয়ারাম বলেছেন, “আমার আর খেলার কোনও পরিকল্পনা নেই। এখানে আপনি হেরেও যেতে পারেন।”

‘ফ্যান্টাসি স্পোর্টস’-এর ক্ষেত্রে জেতা বা হারার বাস্তব চিত্রটা অবশ্য দয়ারামের গল্প থেকে ঠিক ফুটে ওঠে না।

দিল্লির মহম্মদ রকিবের অভিজ্ঞতা বরং এই জেতা-হারার গল্পে বাস্তবের ছোঁয়া আনে। কন্ট্রাক্ট কর্মী (চুক্তিবদ্ধ কর্মী) হিসাবে নিযুক্ত মহম্মদ রাকিবের কথায়, “আমি প্রতিটা আইপিএল ম্যাচের জন্য ফ্যান্টাসি টিম তৈরি করি। কিন্তু কখনও কোনও পুরস্কার জিতিনি।”

ধর্মেন্দ্র গৌতমও বিশ্বাস করেন যে ‘ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপ’গুলোতে জেতার সম্ভাবনা খুব কম। ঠিক তার পরেই তিনি ব্যাখ্যা করেছেন বাস্তবে কোন বিষয়টা তাকে এই খেলার সঙ্গে বেঁধে রেখেছে।

“আপনি না-ই জিততে পারেন কিন্তু এই খেলায় যে উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চ রয়েছে যা অন্যন্য। আপনি হয়ত এবার জিততে পারেননি কিন্তু মনে হবে যে পরের বার নিশ্চয়ই জিতবেন,” বলেছেন মহম্মদ রাকিব।

“আমি হয়তো তিন কোটি টাকা জিততে পারব না, কিন্তু আমি লোককে ৩০০ টাকা বা ৫০০ টাকা জিততে দেখেছি।”

কেপিএমজি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, যাদের বার্ষিক আয় তিন লক্ষ টাকার কম, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ সপ্তাহে পাঁচবারের বেশি ‘ফ্যান্টাসি স্পোর্টস’ খেলেন। আবার যাদের আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি, তাদের ১২ শতাংশের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে।

এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যাদের আয় বছরে তিন লক্ষ টাকার কম, তাদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ জানিয়েছেন, এই খেলায় অংশ নেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল টাকা জেতার সুযোগ।

ইনস্টাগ্রামে বিবিসি বাংলা ফলো করতে ক্লিক/ট্যাপ করুন এখানে

তবে এই ‘গেমিং অ্যাপ্লিকেশন’ এবং সেটা ঘিরে তৈরি আশার করুণ পরিণতিও দেখা গেছে। ‘ফ্যান্টাসি গেম’-এ বড় ধরনের হারের পর আত্মহত্যার ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে।

গত মার্চ মাসে বিহারে ৩৮ বছরের এক ব্যক্তি দুই কোটি টাকা খোয়ানোর পর আত্মহত্যা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটা নোট উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই নোটে তিনি তার আসক্তির জন্য ফ্যান্টাসি ক্রিকেটকে দায়ী করেছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, কোভিডের সময় থেকেই এই খেলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি।

চিকিৎসক মনোজ কুমার শর্মা, ‘সার্ভিস ফর হেলদি ইউজ অফ টেকনোলজি’ নামে একটা মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালান। তার মতে কোভিডের পর থেকে ‘ফ্যান্টাসি স্পোর্টস’-এর প্রতি আকর্ষণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে।

ডা. কুমার বলছেন, “একটা বিভ্রম কাজ করে যে সবকিছু (ব্যবহারকারীর) নিয়ন্ত্রণে আছে। মানুষ ভাবতে থাকে যে সে জিততে পারে। কিন্তু বারবার হেরে যাওয়া মানসিক এবং ব্যবহারিক সমস্যার কারণ হতে পারে।”

আত্মহত্যার ঘটনার পর কয়েকটা রাজ্য ‘গেমিং অ্যাপ্লিকেশন’গুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছিল।

২০২২ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন গেমিং অ্যাপ-এর বিরুদ্ধে এই জাতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটা বিশেষ কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওই বছরই মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র জানান, তার সরকার ‘অনলাইন গেমিং’ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে ‘ফ্যান্টাসি গেমিং’কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এর সঠিক নিয়ন্ত্রণের অভাব। সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com