শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

কম দামে বিমানের টিকেট কেনার কিছু কৌশল

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

উচ্চশিক্ষা, চাকরি ও ভ্রমণসহ নানা কাজে বিদেশ যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিমানের টিকেট কেনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এবং সবচেয়ে কম সময় লাগে বলে বিদেশগামী মানুষ ভ্রমণের জন্য আকাশপথ বেছে নেয়। কিন্তু বিমান ভাড়ার চওড়া মূল্যের কারণে বাজেট-সচেতন ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাটি খুব একটা সুখকর হয় না। তাই ব্যয়বহুল যাত্রাপথের চাপ এড়াতে আগে থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।

সাশ্রয়ী বিকল্পের এই অনুসন্ধান অর্থসংকটের বিড়ম্বনা অনেকটাই লাঘব করতে পারে। চলুন, অপেক্ষাকৃত কম দামে ফ্লাইট বুকিং দেওয়ার দশটি কার্যকর কৌশল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

স্বল্পমূল্যে বিমানের টিকেট কেনার ১০টি টিপস

অগ্রিম টিকেট বুকিং

বিমান ভাড়ায় খরচ বাঁচানোর সাধারণ এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে অগ্রিম ফ্লাইট বুক করা। এয়ারলাইন্সগুলোর সাধারণত প্রস্থানের সর্বোচ্চ ১১ মাস আগ পর্যন্ত টিকেট প্রকাশ করে। যত আগে টিকেট সংগ্রহ করা যায় ততোই ভালো। তবে এর সর্বনিম্ন সময়সীমা হলো ভ্রমণের তারিখের ন্যূনতম ১ থেকে ৩ মাস। এই শেষ সময়ের আগেই বুকিং দেওয়া হলে নিজের পছন্দসই সিট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

টিকেট ছাড়ার সময় থেকে চালু হওয়া প্রচারণামূলক ভাড়া এবং ছাড়ের সুবিধাগুলোর মেয়াদ সাধারণত এই সময়ে এসেই শেষ হয়। এই সুযোগগুলো পাওয়ার জন্য যেকোনো উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা রাখা উচিত।

ইন্টারনেট ব্রাউজারের ‘ইনকগনিটো’ মুড ব্যবহার করা

অনেক ট্রাভেল ওয়েবসাইট যাত্রীদের টিকেট খোঁজার বা কেনার ইতিহাস ট্র্যাক করে। কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোনো এয়ারলাইন্সের একই ফ্লাইট বা রুট বারবার সার্চ করলে এই অনুসন্ধান কুকিজ আকারে তার ব্যবহৃত ব্রাউজারে জমা হয়। এতে করে সেই এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীর সার্চ করা রুটগুলো দেখে তার চাহিদা বুঝতে পারে। ফলে তারা সেই নির্দিষ্ট রুটে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে ভাড়া আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই সেই যাত্রী দ্রুত টিকেট কিনে ফেলার জন্য তাগাদা অনুভব করেন। এমন মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার বশবর্তী হয়ে অধিকাংশরাই টিকেট কিনেও ফেলেন।

কিন্তু “ইনকগনিটো” মুডে গিয়ে এই সাইটগুলো ব্রাউজ করলে সেই ট্র্যাকিং সিস্টেম আর কাজ করে না। ফলে একজন ব্যবহারকারী যেকোনো সময়ের স্বাভাবিক দামটি দেখতে পারেন। এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে কয়েকটি টিকেট বিক্রি প্লাটফর্মের দামগুলো পক্ষপাতহীনভাবে যাচাই করা যায়।

এই সুবিধাটি পাওয়ার জন্য যেকোনো ব্রাউজারের একদম ওপরে ডান কোণে উল্লম্বভাবে থাকা তিনটি বিন্দুতে ক্লিক করতে হবে। অতঃপর ড্রপডাউন লিস্ট থেকে বাছাই করতে হবে “নিউ ইনকগনিটো উইন্ডো”। অথবা কিবোর্ড থেকে এক সঙ্গে প্রেস করতে হবে কন্ট্রোল+শিফট+এন (N) বোতাম। এরপর নতুন যে উইন্ডোটি ওপেন হবে এখানেই পাশাপাশি একাধিক ট্যাবে ওপেন করা যাবে বিভিন্ন ট্র্যাভেল ওয়েব পোর্টাল।

ভ্রমণের জন্য বিকল্প তারিখ বিবেচনায় রাখা

ফ্লাইটের দামগুলো মূলত চাহিদার সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। নির্দিষ্ট দিন এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যও প্রায় ক্ষেত্রে উচ্চ ভাড়া ঠিক করা হয়। যেমন শুক্রবার বা শনিবারের ফ্লাইটের তুলনায় সোমবার বা বুধবারের ফ্লাইটগুলো তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হয়। তাই আগে থেকে টিকেট বুকিং দেওয়ার ক্ষেত্রে এই দিনগুলোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

অবশ্য প্রয়োজনীয়তা বিশেষে এই সিদ্ধান্ত ভিন্ন রকম হতে পারে। যাদের যথেষ্ট আগে থেকে পরিকল্পনা গ্রহণের উপায় থাকে না তাদের জন্য এই বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ নেই। তাদের বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট তারিখে ভ্রমণের ব্যাপারে অবিচল থাকতে হয়। তবে সুযোগ থাকলে অবশ্যই একটু নমনীয় থেকে যাত্রার দিনক্ষণ নির্বাচন করা উচিত।

একাধিক টিকেট বুকিং সাইটগুলো যাচাই করা

শুধু একটি প্ল্যাটফর্মে না খুঁজে দুই বা ততোধিক সাইটে আকাশপথে যাত্রা পরিষেবা খোঁজ করা উচিত। এক্ষেত্রে অনেকগুলো মূল্য তালিকা থেকে সেরা দামটি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ইন্টারফেসের দিক থেকেও কোনো কোনোটি একে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

যেমন ওয়েবসাইটে যত বেশি সংখ্যক ফিল্টার সুবিধা পাওয়া যায় ততোই ভালো। এই ফিল্টারগুলোর মধ্যে থাকতে পারে ফ্লাইটের সময়কাল, মূল্যের সীমা, ও ট্রানজিটের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো। এগুলোর মাধ্যমে অনুসন্ধান আরও কার্যকর হয় এবং তাতে কম সময় লাগে। বিশেষ করে গুগল ফ্লাইটস, স্কাইস্ক্যানার এবং কায়াক পর্যাপ্ত সংখ্যক এয়ারলাইন্স এবং বুকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যাবলির সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা।

উপরন্তু, এগুলো যাচাইয়ের পরপরই সরাসরি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট চেক করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কিছু কিছু এয়ারলাইন্স রয়েছে, যারা শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব সাইটের মাধ্যমে সরাসরি বুকিং নিয়ে থাকে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

কম মূল্যের টিকেট অ্যালার্ট চালু রাখা

অনেক ট্রাভেল সাইট এবং অ্যাপ নির্দিষ্ট রুট এবং তারিখের জন্য ফ্লাইটের দাম ট্র্যাক করার সুবিধা দেয়। এক্ষেত্রে ভাড়া কমে গেলে সে খবর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে যায়। এই উপায়ে একাধিক ফ্লাইটের মূল্য যাচাই আরও সহজতর হয় এবং সবচেয়ে উপযুক্ত সময়ে টিকেট বুক করা যায়।

এই অ্যালার্ট একাধিক রুটের জন্য চালু করা যায়, যেগুলো ই-মেইল বা ডেস্কটপ পুশ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে আপডেট জানায়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সাইট ব্রাউজ করার সময় পপআপ ম্যাসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে নোটিফিকেশন দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়। সেখানে সম্মতি জ্ঞাপন করলেই চালু হয়ে যায় অ্যালার্টটি।

এয়ারলাইন্স মাইলস বা পয়েন্ট সংক্রান্ত ছাড়গুলো ব্যবহার করা

অনেক এয়ারলাইন্স যাত্রীর বেশি বেশি ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে তাকে পরবর্তী যেকোনো ফ্লাইটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাড় দেয়। এখানে মূলত যাত্রী যত মাইল ভ্রমণ করেন তার অ্যাকাউন্টে ততো পয়েন্ট জমা হয়। অতঃপর একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জনের মাধ্যমে তিনি কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। ছোট ছোট ডিসকাউন্ট থেকে শুরু করে এখানে এমনকি বিনামূল্যে ফ্লাইট পর্যন্তও পাওয়া যায়।

তাছাড়া ক্রেডিট কার্ডগুলোতেও থাকে এই পয়েন্টের মাধ্যমে ছাড় পাওয়ার ব্যবস্থা। এখানে পয়েন্ট হিসেব হয় টিকেট ক্রয় করা অর্থ পরিমাণের ভিত্তিতে।

বাজেট-বান্ধব এয়ারলাইন্স খোঁজা

প্রসিদ্ধ বিমান প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ছোট ছোট অনেক ফ্লাইট কোম্পানি কম ভাড়ার যাতায়াতের প্রচারণা চালান। এদের সেবাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য। এরা টিকেটের জন্য কম চার্জ করে বটে। কিন্তু অনেক সময় লাগেজ চেকিং, পছন্দসই সিট নির্বাচন এবং ইন-ফ্লাইট খাবারের মতো পরিষেবাগুলোতে অতিরিক্ত ফি থাকতে পারে। তাই অপ্রত্যাশিত খরচ এড়াতে হিডেন চার্জগুলো খতিয়ে দেখে নেওয়া উচিত।

গন্তব্যের আশপাশে বিকল্প বিমানবন্দর খোঁজা

পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে প্রসিদ্ধ বিমানবন্দরের পাশাপাশি ছোট ছোট বা অপেক্ষাকৃত কম জনাকীর্ণ বিমানবন্দর থাকে। মূল গন্তব্যের আশেপাশে ল্যান্ডিং-এর জন্য এই স্থানগুলোকে নির্বাচনের মাধ্যমে খানিকটা সঞ্চয় হতে পারে। যেমন নিউইয়র্ক সিটির যাত্রীরা জন এফ কেনেডি বা লাগার্ডিয়ার পরিবর্তে নিউইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কম ভাড়া পেতে পারেন। অবশ্য বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছানোর খরচের বিষয় রয়েছে। খরচের ব্যবধানটা অল্প হলেও তা সরাসরি গন্তব্যে বিমান ভাড়ার থেকে কম।

এয়ার কানাডার একটি বিমান/সংগৃহীত

দুটি ওয়ান ওয়ের পরিবর্তে রাউন্ড ট্রিপের জন্য টিকেট বুক করা

একটি এয়ারলাইন্স বা প্লাটফর্ম; যেকোনো স্থান থেকে টিকেট সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইট সবসময়ই সাশ্রয়ী। উদাহরণস্বরূপ, লস অ্যাঞ্জেলস থেকে মিয়ামি পর্যন্ত একটি রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইট বাবদ খরচ হতে পারে ৪৫০ মার্কিন ডলার বা ৫৩,৭৬৪ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১১৯.৪৮ বাংলাদেশি টাকা)। সেখানে একবার লস অ্যাঞ্জেলস থেকে মিয়ামি এবং পরবর্তীতে মিয়ামি থেকে লস অ্যাঞ্জেলস ফিরতে মোট খরচ ৫০০ মার্কিন ডলার (৫৯,৭৩৮ টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই কৌশলটি যাত্রীদের একাধিক এয়ারলাইন্স, রুট বা প্লাটফর্ম নিয়ে গবেষণার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

অফ-পিক বা কার্যদিবস চলাকালীন ভ্রমণ করা

গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন উৎসব এবং জাতীয় দিবসগুলোতে বিমান ভাড়ার দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া এ সময়গুলোতে যাত্রীদের প্রচুর চাপও থাকে। অপরদিকে অফ-পিক মৌসুমে ভিড় কমে যাওয়ায় দামটাও পড়ে যায়। যেমন জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের প্রথম দিকে বা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শুরুর দিকে যাত্রীরা প্রায়ই উল্লেখযোগ্যভাবে কম ভাড়া পেতে পারেন। বিজোড় ঘণ্টার নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো, যেমন খুব ভোরে বা গভীর রাতে ফ্লাইট মূল্য সস্তা হতে থাকে।

শেষাংশ

সাশ্রয়ী মূল্যে বিমানের টিকেট কাটার এই কৌশলগুলো অর্থ সংকটকে পাশ কাটিয়ে বিদেশ গমনের পথকে সুগম করতে পারে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া নিয়ে তুলনামূলক গবেষণার ভিত্তিতে ডিসকাউন্ট নিয়ে অগ্রিম টিকেট বুকিং উৎকৃষ্ট পন্থা। ইন্টারনেট ব্রাউজারের ইনকগনিটো মুড ব্যবহার এবং এয়ার টিকেট প্ল্যাটফর্মগুলোতে কম মূল্যের অ্যালার্ট সেট করে রাখা যথেষ্ট সহায়ক। এখানে ভ্রমণের সময়টাও একটি মুখ্য বিষয়। কেননা অফপিক মৌসুমগুলোতে বিমান ভাড়া অনেকটা কমে আসে। তাই তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু আপস করার প্রয়োজন পড়ে। সর্বোপরি, টেকঅফ থেকে শুরু করে ট্রানজিট এবং ল্যান্ডিং পর্যন্ত পুরো যাত্রাপথটা যাচাই করলে স্বল্প মূল্যের বিকল্পগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com