বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের সেরা ঠিকানা! ‘নেপাল’

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১

জাল ওষুধ, LSD, নকল বাটরা, জপযন্ত্র, ক্যাসিনো, পশুপতিনাথ আর মগনলাল মেঘরাজ। বইপোকা আর টোটো কোম্পানির বাঙালির কাছে এই কয়েকটি শব্দ মানেই একটি নামই মাথায় আসবে। কাঠমাণ্ডু। আর এই কাঠমাণ্ডু যে দেশের রাজধানী তার নাম হল নেপাল।

বছর কয়েক ধরে রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে নেপালের একটা মন কষাকষি চলছিল। তাতে অবশ্য থোড়াই কেয়ার করে পর্যটকের দল। তার উপর প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনার কারসাজি তো লেগেই আছে। রাজনীতি আটকাতে না পারলেও করোনার পোকা পর্যটকদের পায়ে শিকল বেঁধে দিয়েছিল। ভারতীয়দের জন্য নেপালের দরজা ছিল বন্ধ। তা সে নেই নেই করেও রোগ এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি বটে। তবে পর্যটকদের জন্য নেপালর দরজা খুলে গেছে। তাই বাঙালির মুখে এখন কান এঁটো করা চওড়া হাসি।

যেতে পারি কিন্তু কীভাবে যাব এবং ঘোরার সেরা সময়

– পকেট গরম থাকলে বিমানে চড়ে নেপাল পৌঁছে যান। কলকাতা থেকে সরাসরি কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়া যায়।

– শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে মোটামুটি তিন ঘণ্টার মধ্যেই নেপাল পৌঁছোনো যায়।

– বাসে গেলে সময় বেশি লাগে। তবে কম খরচে বাসে যেতে চাইলে শিলিগুলি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস থেকে কাঠমাণ্ডু যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।

– কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দর থেকে প্রিপেইড ট্যাক্সি পাওয়া যায়। বাস টার্মিনাসের কাছেও ট্যাক্সি পাবেন। রয়েছে একাধিক ট্র্যাভেল এজেন্সি।

– তবে কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে নেপালে প্রবেশ করতে হবে। RT-PCR পরীক্ষা এবং করোনার টিকা নেওয়ার পরই ছাড়পত্র মিলবে নেপাল প্রবেশের।

সেরা সময়

নেপাল ঘোরার সেরা সময় অক্টোবর-নভেম্বর মাস। এই সময় সেখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারির দিকে গেলে বরফ দেখা যায়। মার্চ এপ্রিলের মাঝামাঝি নেপালে অফ সিজন। সেই সময় ভিড় কম হয় এবং জিনিসপত্র, গাড়ি, হোটেল ভাড়াও তুলনামূলক সস্তা হয়। সেপ্টেম্বরের দিকে বৃষ্টির কারণে বিসেষ ঘোরাঘুরি করা যায় না।

নেপাল সফর

– নেপালের তৃতীয় ঐতিহ্যবাহী শহর হল ভক্তপুর। কাঠমাণ্ডুর পাশেই অবস্থিত এই শহরটি। এখানে প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। এই শহরের প্রাচীন রাজ প্রাসাদটি ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইটের অনুমোদনপ্রাপ্ত। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে ভক্তপুরের দরবার স্কোয়্যারের বেশিরভাগ মন্দিরগুলিই ভেঙে গেছে।

– গৌতম বুদ্ধে জন্মস্থান লুম্বিনি ঘুরতে যাওয়া একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। কাঠমাণ্ডু থেকে লুম্বিনির দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। বুদ্ধদেবের জন্মস্থানটিতে রয়েছে তাঁর মায়ের নামের মায়াদেবী মন্দির।

– লাংতাং জাতীয় অভয়ারণ্য দেখতে গেলে লাংতাং প্রদেশে যেতে হবে। পাহাড়ের মাঝে লাংতাং-এর রোডোডেনড্রনের জঙ্গল দেখে মুগ্ধ হবেন। পাহাড়ি গ্রাম ঘুরে দেখতে দারুণ লাগবে।

– অন্নপূর্ণা সার্কিটের পুন পাহাড় দেখে আসুন। ঘুরে ঘুরে দেখুন আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

– কাঠামাণ্ডু নেপালের রাজধানী হলেও পোখরা এদেশের পর্যটন রাজধানী। শহরের হ্রদের ধারে ধারে ঘুরে দেখুন। এখানেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে পারেন। পুরোনো পোখরার মন্দিরগুলি দেখতেই হবে। এখানকার ছোটো তিব্বতি বাজার ঘুরে ঘুরে শপিং করতে ভালোই লাগবে।

– ঘুরে আসুন কাঠমাণ্ডু থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরের নাগরাকোট হিমালয়ের ১৩ খানা রেঞ্জের মধ্যে এটি অষ্টম রেঞ্জ। হিমালয়ের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে পাবেন এই নাগরাকোট থেকে।

– নেপালে ঘোরার অনেক আকর্ষণীয় স্থান আছে। তবে একবারে সবকিছু ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। পর্যটন সংস্থার প্যাকেজ অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পারেন।

পেট-রক্ষা

– ব্রেক ফাস্ট শুরু করতে পারেন মোমো দিয়েই। সাত সকালে গরম গরম মোমো আর স্যুপের কোনও তুলনা হয় না।

– লাঞ্চে ডাল, ভাত, তরকারি পাবেন। সবজির মদ্যে আমাদের শীতকালের প্রায় সব ধরনের সবজিই পাবেন এখানে। খাবার দাবার বেশ মশলাদার। রাতে আটা, ভুট্টা কিংবা বার্লির রুটি পাওয়া যায়। মুরগি কিংবা মটন পাবেন। পাবেন মাছও। পর্ক খাওয়ার প্রচলনও এদেশে আছে। সাধারণ দোকানের খাবারের দাম নাগালের মধ্যেই।

– চা পানের অভ্যাস এদেশে যথেষ্ট রয়েছে। চায়ের সঙ্গে থাকে নানা ধরনের স্ন্যাকস্। দার্জিলিং ডুয়ার্সের খাবার দাবারের সঙ্গে নেপালি খাবারের বেশ মিল রয়েছে।

– নেপালের চমরী গাইযের দুধের চিজ বেশ সুস্বাদু এবং বিখ্যাত।

– নেপালের স্পেশাল বাফেলো রেসিপি খেতে ভুলবেন না যেন। রেস্তোরাঁয় গিয়ে ‘বাফ’ রেসিপি বললেই হবে।

– নেপালের ঘরে ঘরে তৈরি হয় রকসি নামের এক ধরনের মদ। এটি প্রধান সেদেশের দেশি মদ। দামে খুব কম। বর্তমান নেপালে বিয়ার উপাদনের হার অনেকটাই বেড়েছে।

– তবে রাস্তার কলের জল একেবারেই খাবেন না। তেষ্টা পেলে জল কিনে খান।

নেপালি সংস্কৃতি

নেপালিরা নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশ আবেগপ্রবণ। তাই নেপাল ভ্রমণ করতে গেলে সেগুলি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

– ভারতীয়দের মতো নেপালিরাও হাত জোড় করে নমস্কার করেন।

– মহিলাদের দিদি এবং পুরুষদের দাই বলে ডাকলে তাঁরা খুশি হন।

– আধুনিক পোশাকে নেপালিরা অভ্যস্ত হলেও শরীর ঢাকা পোশাকই তাঁরা পছন্দ করেন।

– নেপালিদের বাড়িতে প্রবেশের সময় আমাদের মতোই জুতো খুলে ঘরে ঢুকতে হয় এবং হাত পা মুখ ধুয়ে নিতে হয়।

– নেপালের জাতীয় ভাষা নেপালি। তবে প্রায় সকলেই হিন্দি ভাষায় দক্ষ। তাই হিন্দি মোটামুটি বলতে পারলেই নেপাল ঘোরা সহজ হয়ে যায়। এমনকি কিছু কিছু বাংলা শব্দও তাঁরা বুঝতে এবং বলতে পারেন।

– অন্য প্রজাতিদের ঠাট্টা করা বাঙালিদের অনেকটা জন্মগত অভ্যাস। কিন্তু বেড়াতে গিয়ে মনে রাখবেন যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার মানুষকে সম্মান না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। নেপালিরা এমনিতে ঠান্ডা প্রকৃতির হন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে ঠাট্টা, তামাশা বা টিটকিরি তাঁরা সহ্য করেন না।

– নেপালের ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু। প্রায় ১০ শতাংশ বৌদ্ধ এবং বাকিরা দশ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

– হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের এক অসাধারণ মেলবন্ধনের সাক্ষী হিমালয় কন্যা নেপাল।

– কারও মাথায় হাত দেওয়া, বাঁ হাতে জিনিস দেওয়া নেওয়া করা কিংবা তর্জনি উঁচিয়ে কথা বলা নেপালিদের কাছে অত্যন্ত অপমানজনক।

– আর নেপালে রাজনীতি নিয়ে বিশেষ কথা না বলাই ভালো। শান্ত পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

কেনাকাটা

– দরদাম করার প্রবল ক্ষমতা থাকলে থামেলের বাজারে চলে যান। হরেক রকম মনলোভা জিনিস পাবেন সেখানে। সুন্দর ডিজাইনের গরম জামা, ঘর সাজানোর জিনিস ইত্যাদি পাবে।

– নেপালে গেলে সবাই আর কিছু কিনুক না কিনুক একখানি জপযন্ত্র আর একটি তিব্বতি প্রার্থনা পতাকা কিনেই থাকেন। বন্ধু, পরিচিতদের উপহার হিসেবে এগুলি বেশ ভালো।

পর্বতে আরোহণ

নেপালে গিয়ে খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা, শহর ঘোরা সবই তো হবে। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা যদি একবার পর্বারোহণ না করেন তাহলে তো ঘোরাটাই বিস্বাদ হযে যাবে। গাইড সঙ্গে নিয়ে ছোটোখাটো পর্বতে খানিকটা উঠতেই পারেন। অজানা অচেনা জায়গায় ভুলেও একা যাবেন না। পেশাদার পর্বতারোহীদের কথা অবশ্য আলাদা। নেপালে পবর্ত আরোহণের জন্য কিছু সংস্থা রয়েছে সেগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করে নিতে পারেন।

মাউন্ট এভারেস্ট দর্শন

মাউন্ট এভারেস্ট নেপালেই আছে। তবে সেখানে উঠতে গেলে দম লাগবে। ভুলেও ওসব করতে যাবেন না। তাছাড়া অনুমতিও পাবেন না। তার চেয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গটিকে কাছ থেকে দেখতে চাইলে ছোট বিমান ভাড়া করতে পারেন। বিমান ভাড়া দেওয়ার বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডুতে।নাগরকোট গিয়েও মাউন্ট এভারেস্ট দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঠমান্ডু থেকে বাসে করে যেতে হবে নাগরকোটে।

সতর্কতা

– নেপালে প্রচুর ভুয়ো গাইড এবং পর্যটন সংস্থা রয়েছে। কখন এবং কীভাবে যে এরা পর্যটকদের বোকা বানিয়ে টাকা হাতিযে পালায় বুঝতে পারবেন না। তাই সতর্ক থাকুন।

– অতিরিক্ত গায়ে পড়া লোকদের এড়িয়ে চলুন। এরা প্রথমে খুব ভদ্র শান্ত মিষ্টি ব্যবহার করে। তারপর ভ্রমণ শেষ হলে প্রচুর টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে হাতাহাতি পর্যন্ত করে। এদের দলে গুন্ডাস্থানীয় লোকও অনেক থাকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com