বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ অপরাহ্ন

কম খরচে নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা, রয়েছে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নিউজিল্যান্ড বা আগুটেয়ারোয়া। ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন সিলভার ফার্ণের এই দেশটি পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এই দেশকে শ্রভ্র মেঘের দেশও বলা হয়ে থাকে। চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিমণ্ডিত পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ দেশ নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের পরিবেশের মতই উচ্চশিক্ষার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে বিশ্বব্যাপী । ফলে প্রতি বছর শুধু বাংলাদেশ থেকেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্যক শিক্ষার্থী নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়।

নিউজিল্যান্ড নিয়ে কিছু কথা
আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে পলিনেশিয়ান বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টি তাসমান সাগরের কোল জুড়ে থাকা এই দেশটিকে আবিষ্কার করে। ছোট ছোট সেসব জাতিগোষ্টি একটা সময় সেখানে স্বতন্ত্র মাওরি (Maori) সংস্কৃতি গড়ে তোলে, যারাই নিউজিল্যান্ডিয় আদিবাসী হিসেবে পরিচিত। ১৬৪২ সালে সর্বপ্রথম ইউরোপিয়ান অভিযাত্রী হিসেবে ‘আবেল তাসমান’ এখানে নোঙর ফেলেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে সেখানে শ্বেতাঙ্গদ্যের আধিক্য দেখা দেয়। ১৮৪০ সালে ব্রিটিশরা স্থানীয় মাওরিদের সাথে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ১৮৪১ সাল থেকে নিউজিল্যান্ড একটি ব্রিটিশ কলোনির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৩০ এর দশকে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের (কালচারাল রেনেসাঁ) পর থেকে দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এরপর থেকে বর্তমান অবধি এখনো নিউজিল্যান্ডিয়ান রাজনীতি কল্যাণমুখী এবং উদারনীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। তবে উল্লেখ্য হলো, আজও দেশটির রাষ্ট্র প্রধান গ্রেট ব্রিটেইনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যদিও দেশটির রাজনীতিতে রাণীর কোনো প্রভাব নেই। নিউজিল্যান্ডে আজও বেঁচে আছে ঐতিহ্যবাহী মাওরি সংস্কৃতি।

কেন যাবেন নিউজিল্যান্ডে?
পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এই দেশটি ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতই অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যতম এক ধনী রাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড । মানুষের গড় মাথাপিছু আয় $৩১,০৬৭ ডলার। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের দ্বিতীয় নিরাপদ দেশ । এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১২টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে ৬ঠ স্থানে রয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিদেশীদের সঙ্গে তাদের আচরণও একই রকমের। এর পাশাপাশি খুব সহজেই স্থায়ী নাগরিকত্ব লাভ করা যায়। শিক্ষা মান আর বিভিন্ন সূচক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অতুলনীয় . OS Ranking এবং Times Higher Ranking মতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। উচ্চশিক্ষা পরবর্তী চাকুরির ক্ষেত্রেও নিউজিল্যান্ডের বাজার অত্যন্ত ঈর্ষনীয়। শতাংশের হিসেবে প্রায় ৯৩% ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে সরাসরি চাকুরিতে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। যা নিউজিল্যান্ডকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে অন্যতম দেশ হিসেবে আলাদা করে রাখে।

কম খরচে মানসম্পন্ন জীবনযাপন:-
নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী লোকেরা উচ্চবিলাসী হলেও আপনি চাইলে সল্প খরচেই সবকিছু চালিয়ে নিতে পারবেন । কারণ নিউজিল্যান্ডের বসবাসের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। শিক্ষার্থীরা সে দেশে মাসে ৩০ হাজার টাকারও কমে নিজেদের ভরণপোষণ করতে পারে। এছাড়া, খণ্ডকালীন চাকরি থেকে মাসিক খরচের চেয়ে বেশি পরিমাণ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।

পিএইচডি ও কাজের সুযোগ:-
নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা থাকলে সেখানে পিএইচডি শুরু করা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সেখানে স্থায়ী বসবাসের জন্য অনুপ্রাণিতও করছে দেশটি। পিএইচডি করার সময় সেখানে শিক্ষার্থীদের সীমাহীন ঘন্টার জন্য কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়াও, ডিগ্রি অর্জনের জন্য আপনার নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি এবং পরীক্ষায় বসার কোনো চাপ নেই। অনলাইনে সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাসে একবার সাক্ষাতের মাধ্যমে আপনি কোর্স শেষ করতে পারবেন। পিএইচডি শেষ করার পরে আপনাকে নিউজিল্যান্ডে কাজ করার জন্য অতিরিক্ত দুই বছর সময় দেওয়া হবে, যা আপনার অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে তুলবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পশ্চিমা দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পিএইচডি করা বেশ ব্যয়বহুল। তবে, এই ধরনের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড ব্যতিক্রম।তারা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না। আপনি বছর ৪ হাজার ডলার খরচে পিএইচডি করতে পারবেন। পিএইচডি চলাকালীন আপনার বাইরে কাজের সুযোগ তো থাকছেই আবার বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকার থেকে তহবিল মঞ্জুর করলে আপনাকে সেখানে টিউশন দিতে হবে না।

পার্টটাইম চাকরি:-
নিউজিল্যান্ডে স্নাতক এবং মাস্টার্স অধ্যায়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক গড়ে ২০ ঘন্টার মত কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আর আপনি যদি একজন পিএইচড ‘র শিক্ষার্থী হন তবে সেখানে আপনি যতক্ষণ ইচ্ছা কাজ করতে পারবেন।

উচ্চশিক্ষা শেষে কাজ ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ:-
নিউজিল্যান্ড সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থী ভিসাকে কাজের ভিসাতে পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করে থাকে। নিউজিল্যান্ডই একমাত্র দেশ যেখানে মাত্র দুই থেকে তিন বছর থাকার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ পায়।

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার স্তর:-
নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ধরণ অনেকটাই ইউরোপীয় ধাঁচের। এখানে নিচের স্তর ভেদে উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করা যায়ঃ

• ব্যাচেলর্স ডিগ্রি
• মাস্টার্স ডিগ্রি
• ডক্টরাল ডিগ্রি
• ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স
• ফাউন্ডেশন বা কালচারাল কোর্স
• স্বল্প মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স ডিপ্লোমা কোর্স
• ডিপ্লোমা কোর্স

আপনি কি কি বিষয়ে অধ্যায়ন করতে পারবেন:-

• এপ্লায়েড সায়েন্স
• টেকনোলোজি ইঞ্জিনিয়ারিং
• বিজনেস ম্যানেজমেন্ট
• ম্যাথেম্যাটিক্স
• এগ্রিকালচার ডিজিটাল ডিজাইন
• ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন
• ফুড এন্ড হসপিটালিটি

যে যে যোগ্যতার প্রয়োজন হয়ে থাকে:-

PhD / Doctoral ডিগ্রির জন্যঃ-
• ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা।
• মাস্টার্স ডিগ্রি সনদ (থিসিস সহ)।
• ব্যাচেলর্স ডিগ্রি সনদ (থিসিস সহ) ।
• গবেষণা পত্র।
• উচ্চ মাধ্যমিক সনদ।
• মাধ্যমিক সনদ ।
• রেকমেন্ডেশন লেটার।
• IELTS Band Score কমপক্ষে 6.5 ।
• SOP বা Statement of Purpose (যেখানে অবশ্যই Extra-Curricular কাজগুলির উল্লেখ থাকতে হবে) ।
• CV বা Resume ।

মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য:-
• ব্যাচেলর্স ডিগ্রি সনদ (থিসিস সহ)।
• গবেষণা পত্র (যদি থাকে) ।
• উচ্চ মাধ্যমিক সনদ ।
• মাধ্যমিক সনদ ।
• IELTS Band Score কমপক্ষে 6.0 ।
• রেকমেন্ডেশন লেটার ।
• SOP বা Statement of Purpose (যেখানে অবশ্যই Extra-Curricular কাজগুলির উল্লেখ থাকতে হবে)।
• CV বা Resume।

ব্যাচেলর্স ডিগ্রির জন্য:-
• উচ্চ মাধ্যমিক সনদ ।
• মাধ্যমিক সনদ ।
• IELTS Band Score কমপক্ষে 5.5 ।
• রেকমেন্ডেশন লেটার ।
• SOP বা Statement of Purpose (কেনো পড়তে যাচ্ছি এবং কেনো ঐ বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করেছি, সেটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে) ।
• CV বা Resume ।

ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য:-
• উচ্চ মাধ্যমিক সনদ ।
• মাধ্যমিক সনদ ।
• IELTS Band Score কমপক্ষে 5.5।
• রেকমেন্ডেশন লেটার ।
• SOP বা Statement of Purpose (কেনো পড়তে যাচ্ছি এবং কেনো ঐ কোর্স পছন্দ করেছি, সেটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে)।
• CV বা Resume ।

নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন স্কলারশিপ:-
নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর নানা ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ প্রদান করে থাকে । যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই ফুল-ফ্রি বা আংশিক মুল্যে প্রদানের মাধ্যমে সহজেই নিজের পড়াশোনা শেষ করতে পারে। এছাড়া পার্টটাইম চাকুরি তো থাকছেই । নিউল্যান্ডের কিছু উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপগুলি হলো –

• New Zealand International Scholarship.
• UC International First Year Scholarship.
• University of Auckland International Student Excellence Scholarship.
• ADB Scholarships at University of Auckland .
• Tongarewa Scholarship.
• Wellington Master’s by Thesis Scholarship.
• Wellington Doctoral Scholarships.
• University of Otago International Research Masters Scholarships .
• University of Otago Doctoral Scholarships.
• University of Waikato International Excellence Scholarships.
• University of Waikato Doctoral Scholarships.

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com