আপনি কি বিমান চালনায় ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন? কিন্তু চাইছেন অন্যরকম কিছু করতে? যদি আপনি বৈমানিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পড়াশোনা করে থাকেন, তাহলে বিমান চালনায় একজন কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। চলুন দেখে আসি, কীভাবে একজন কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
একজন কমার্শিয়াল পাইলটকে কার্গো পাইলট, ট্যুর পাইলট কিংবা ব্যাক কান্ট্রি পাইলট হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। তিনি বিভিন্ন ফ্লাইট ইন্সট্রাকশনের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির বিভিন্ন ধরণের ডকুমেন্ট ও জিনিসপত্র আদান প্রদান করে থাকেন। একজন র বাৎসরিক বেতন ৫০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু এর বিপরীতে আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হবে। সঠিক নেটওয়ার্কের মধ্যে কাগজপত্র ও জিনিসপত্রের আদানপ্রদান করা, যেকোনো স্থানের বিভিন্ন ধরণের রুট সম্পর্কে জানা, যেকোনো সময় যেকোনো জিনিস আদানপ্রদানসহ আরো অনেক ধরণের কাজ রয়েছে একজন কমার্শিয়াল পাইলটের।
সুতরাং ভেবে দেখুন এই পদে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন কিনা। এই পদটি আপনার প্যাশন ও দক্ষতার সাথে কতটুকু উপযুক্ত, তা নিয়েও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
একজন কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পূর্বে আপনি, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার, কার্গো পাইলট, ম্যানুফ্যাকচারার, অ্যাভিয়েশন ইনস্পেক্টর, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অথবা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি দ্বারা ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। উপরোক্ত পদগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে কমার্শিয়াল ইঞ্জিনিয়ার অথবা এয়ারক্র্যাফট হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
একজন কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে, আপনাকে যে সকল বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তা হচ্ছে,
১. টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।
২. অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা থাকতে হবে।
৩. ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর বেশ ভালো দক্ষতা থাকতে হবে।
৪. বিভিন্ন ধরণের হার্ডওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের উপর দক্ষ হতে হবে।
৫. কম্পিউটার ও আইটি ইথিকসের উপর পারদর্শী হতে হবে।
৬. ক্রিয়েটিভ থিংকিং করার দক্ষতা থাকতে থাকবে।
৭. নিত্যনতুন টেকনোলজির সাথে আপডেটেড থাকতে হবে।
৮. অসাধারণ স্ট্র্যাটেজিক ও প্ল্যানিং করার দক্ষতা থাকতে হবে।
৯. ইলেক্ট্রনিক সার্কিট অ্যানালাইসিস, ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক্স ইক্যুইপমেন্টের উপর দক্ষ হতে হবে।
১০. ফ্লায়িং রুট সম্পর্কে জানতে হবে।
১১. বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য তৎক্ষণাৎ ইক্যুইপমেন্ট তৈরি করার দক্ষতা থাকতে হবে।
১২. কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের এম্বেডেড সিস্টেমস সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।
Source: epicflightacademy.com
উপরের দক্ষতাগুলো ছাড়াও, একজন কমার্শিয়াল পাইলট কিছু সাধারণ দক্ষতা থাকা উচিৎ। সেগুলো হচ্ছে,
১. জটিল বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার দক্ষতা থাকতে হবে।
২. বিভিন্ন সমস্যায় দ্রুত সমাধান বের করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৩. যেকোনো বিষয়ে আস্থা রাখার মতো মন মানসিকতা থাকতে হবে।
৪. বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা থাকতে হবে।
৫. অসাধারণ যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে।
৬. যেকোনো বিষয়ে বিচক্ষণতার সাথে নেগোসিয়েশন করার দক্ষতা থাকতে হবে।
৭. অসাধারণ ইন্টারপার্সোনাল দক্ষতার অধিকারী হতে হবে।
যদি আপনি কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে কোনো কোম্পানি থেকে ইন্টার্নি করে থাকেন, তাহলে ছোটোখাটো কোম্পানিতে কাজ করার প্রয়োজন পড়বে না। আর যদি আগে কোথাও ইন্টার্নশিপ না করে থাকেন, তাহলে বড় কোম্পানিতে পাইলট হিসেবে কাজ করার পূর্বে ছোটোখাটো কোম্পানিতে কাজ করুন। এতে অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা দুইই লাভ করতে পারবেন।
ছোটোখাটো কোম্পানিতে চাকরি করার পর, বড় বড় কোম্পানির দিকে চলে আসুন। তবে খেয়াল রাখবেন, যেন কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা দুইই বজায় থাকে। অনেক সময়েই দেখা যায়, ছোটোখাটো কোম্পানিতে কাজ করার জন্যে যেসকল দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে, বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, বড় কোম্পানিগুলোতে কাজের ক্ষেত্রও বড় হয়।
বড় বড় কোম্পানিগুলোতে কাজ পাওয়ার জন্যে লিংকডিন, মনস্টার, গ্লাসডোরের মতো ওয়েবসাইটগুলোতে চাকরী খুঁজতে পারেন। এগুলোতে প্রফেশনালি চাকরি খোঁজা যায়। তবে মনে রাখবেন, বড় কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে হলে আপনাকে আরো বেশি জানতে হবে। কার্যপদ্ধতি ও কৌশলে আরো পারদর্শী হতে হবে।
কমার্শিয়াল পাইলটদের জন্য অনলাইনে অনেক ধরণের প্রফেশনাল অরগানাইজেশন, কমিউনিটি ও ফোরাম রয়েছে। সেগুলোতে যোগদান করতে পারেন। যদি কখনো রুট, হার্ডওয়্যার ম্যানেজমেন্টের নিয়মকানুন, ফ্লায়িং সিস্টেম, পেমেন্ট মেথড কিংবা অন্য যেকোনো কিছু নিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে সেসব ফোরাম থেকে সাহায্য পেতে পারবেন। তাছাড়া অনলাইন ফোরাম এবং কমিউনিটির মিটআপে যোগদান করলেও অনেক শিক্ষা এবং দক্ষতা অর্জন করা যায়।
একজন কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার পূর্বে, আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্স, হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এন্ড ডিজাইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন খাতের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর কমপক্ষে ২ থেকে ৪ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
প্রযুক্তির এই যুগে কমার্শিয়াল পাইলট উপর অনেক কোম্পানিই নির্ভর করছে। আর তাই, প্রতিনিয়তই কোম্পানিগুলোতে বৈমানিক খাতে বিভিন্ন ধরণের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে কমার্শিয়াল পাইলট, কার্গো পাইলট, ব্যাক কান্ট্রি পাইলট, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি অন্যতম। কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন যেসব কারণে,
১. প্রায় প্রত্যেক বড় বড় কোম্পানিতেই ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়বস্তু প্রেরণ করার জন্য কমার্শিয়াল এয়ার সার্ভিসের প্রয়োজন পড়ে।
২. এই খাতে কাজের শেষ নেই।
৩. এই কাজে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবেন ও নতুন নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন।
৪. নিজের ইচ্ছেমতো নিজের কাজকে সাজিয়ে তুলতে পারবেন।
৫. পাইলটদের ফোরামটাই অন্যরকম হয়। তাই কমিউনিটিতেও শেখার অনেক কিছুই থাকছে।