বাংলাদেশের সবথেকে বড় পর্যটন শহর কক্সবাজার। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিবছর কক্সবাজার ভ্রমণ করেন লাখো পর্যটক। কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার জুড়ে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। আজকের এই লেখাটি মুলত কক্সবাজার পর্যটন স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে।
১৬১৬ সালে মুঘলরা অধিগ্রহণের আগে পর্যন্ত চট্টগ্রামের একটি বড় অংশসহ কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এর পরে ত্রিপুরা, আরকান, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। কক্সবাজারের পূর্বনাম ছিলো পালংকি, হলুদ রঙের ফুলের আধিক্যের ফলে এই অঞ্চলকে একসম প্যানোয়া নামেও অবহিত করা হতো। প্যনোয়া অর্থ হলুদ ফুল।
পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসার হিরাম কক্স এখানে ১৭৯৯ খ্রিঃ একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন যা সকলের কাছে কক্স সাহেবের বাজার নামে পরিচিতি লাভ করে। এই কক্স সাহেবের বাজার থেকে পরবর্তিতে ১৮৫৪ সাথে কক্সবাজারা থানা এবং ১৮৬৯ সালে কক্সবাজার পৌরসাভ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কক্সবাজার যেতে সড়ক, আকাশ ও রেলপথ সবগুলোই ব্যবহার করতে পারেন তবে কক্সবাজারের সাথে এখনও সরাসরি রেল যোগাযোগ না থাকায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক পথে যেতে হবে। কক্সবাজার যাওয়ার সবগুলো পথ সম্পর্কে নিচে আপনাদের ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ করার জন্য সবথেকে দ্রুত ও আরামদায়ক উপায় আকাশ পথ ব্যবহার করা। ঢাকা থেকে আকাশপথে মোট ৩০৬ কিলোমিটার অতিক্রম করতে সময় লাগবে গড়ে ৫৫ মিনিট থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা। আর এই রুটে প্রতিদিন বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থার ৭ থেকে ৮ টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। আকাশ পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়া সাধানরণত চাহিদার উপরে ওঠাানামা করে, তবে টিকিটের শ্রেণ্রীভেদে নিয়মিত ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। ঢাকা কক্সবাজার ঢাকা সহ দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ভাড়া এবং বুকিং সংক্রান্ত তথ্য
সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার মোট ৪১৪ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সাধারণত সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। এই রুটে মুলত দেশের সব পরিবহন সংস্থারই বিলাস বহুল বাস সার্ভিস রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে সাধারণ শ্রেণীর পরিবহনও। রাজধানী ঢাকার সায়দাবাদ, গাবতলী, কলাবাগান, আরামবাগ এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসগুলো ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পৌছায়। বিভিন্ন পরিবহনের নন এসির ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা এবং বিলাসবহুল সার্ভিসগুলোর ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
রেলপথে ভ্রমণ সবসময়ই সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক তবে, বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ না থাকায় চট্টগ্রামে নেমে বাকি পথটুকু সড়কপথে ভ্রমণ করতে হবে। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ চালু হতে হয়তো আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে কক্সবাজার যেতে পরিবহন ভেদে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। তাই ট্রেন থেকে নেমে আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নিন।
ট্রেন থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনে নামার পরে স্টেশনের সামনে থেকেই কিছু পরিবহন পাবেন যেগুলোর রাস্তায় আরো স্টপেজ থাকায় সময় একটু বেশি লাগবে। আর যদি ৪ ঘন্টায় কক্সবাজার পৌছাতে চান তবে চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার সরাসরি যে বাসগুলো চলাচল করে সেগুলোতে উঠতে হবে। সেক্ষেত্রে স্টেশনের সামনে থেকে সিএনজি অথবা রিক্সা নিয়ে চলে যান চট্টগ্রাম নতুন ব্রীজ বাস কাউন্টার, ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং সময় লাগবে খুব বেশি হলেও ২০ থেকে ৩০ মিনিট।
ক্লোজডোর পরিবহনের মধ্যে রয়েছে মারসা পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া ও স্টার লাইন পরিবহন। তবে ক্লোজডোর সার্ভিসের মধ্যে সব থেকে ভালো মারসা পরিবহনের বাসগুলি। নতুন ব্রিজ কাউন্টার থেকে ১০ মিনিট পর পর মারসা পরিবহনের বাস পাবেন। ননএসি ক্লোজডোর এই বাসগুলোর ভাড়া পড়বে ২৫০ টাকা এবং সময় লাগাবে সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা। ক্লোজডোর ছাড়া যে সার্ভিসগুলো আছে সেগুলোতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা বা তারও বেশি আর ভাড়া পড়বে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।
ফেরার সময় ক্লোজডোর বাস সার্ভিস পেতে আপনাকে চলে আসতে হবে কক্সবাজার বাস টামির্নালে। তবে সব জায়গাতেই একটু সময় লাগলেও যে বাসে যেতে চান তার কাউন্টার খুজে বার করুন এবং কাউন্টার থেকে টিকিট করে বাসে উঠুন। রাস্তায় পরিবহনের কোন এজেন্টের কাছে অন্য কোন পরিবহনের কাউন্টারের ঠিকানা জানতে চাইলে বিভ্রান্তই হবেন শুধু।
পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অনেক আবাসিক হোটেল। পঁচ তারকা তেকে শুরু করে কম মুল্যের হোটেলও আছে এখানে, সবগুলো মিলিয়ে ধারণক্ষমতা মোটামুটি ১ লক্ষ ৫০ হাজারের উপরে। এখানে যেমন রয়েছে বেসরকারি মালিকানার ভাল হোটেল আবার পাশাপশি রয়েছে বাংলাদেশ সরকারে পর্যটন বিভাগ কতৃর্ক নির্মিত ও পরিচলিত মোটেল। কক্সবাজারে হোটেল অবস্থান করে আপনি সব পর্যটন স্পটগুলো দর্শন করতে পারবেন।
ভাল হোটেল ও মোটেলগুলো বেশিরভাগই সৈকতের নিকটে পেয়ে যাবেন। আর একটু কম ভাড়া খুজতে আপনাকে সৈকত থেকে একটু দুরে থাকতে হবে। এগুলো সবই মোটামুটি ভাল মানের ও আধুনিক। অফ সিজনে স্থান সংকুলানের কোন সমস্যা হবে না কিন্তু পর্যটন মৌসুমে অগ্রিম বুকিং দিয়ে যাওয়াটাই ভাল।
সবধরণের খাবার এবং সবধরনের খাবার হোটেল পাবেন কক্সবাজারে। তবে সকলের জন্য চলনসই যে হোটেলগুলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: নিরিবিলি, ধানসিঁড়ি, রোদেলা, ঝাউবন, পৌষি, ইত্যাদি। পর্যটকের চাপ অনুযায়ী হোটেল ভাড়ার মত খাবারের দামও এখানে কম বা বেশী হয়ে থাকে। তবে একটি স্ট্যন্ডার্ড আইডিয়া আপনাদের জন্য আমরা শেয়ার করছি। তবে খাবার আগে অবশ্যই খাবারের দাম জেনে তার পরে অর্ডার করবেন।
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সমুদ্র-পাহাড়-নদীর এক অপূর্ব সহাবস্থান রয়েছে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী হিসাবে পরিচিত কক্সবাজার। পর্যটন কেন্দ্রিক সব আকর্ষণই এখানে আছে যেমন, ওয়াটার বাইকিং, বিচ বাইকিং, প্যারাসেলিং, কক্স কার্নিভাল সার্কাস শো, ইকোপার্ক, স্থাপত্য নিদর্শন, ফিউচার পার্ক, শিশুপার্ক সহ অসংখ্য ফোটোসুট স্পট।
আরো আছে রাতে উপভোগের জন্য নাইট বিচ কনসার্ট। রয়েছে আলোকিত সৈকতে রাতের বেলায় সমুদ্র উপভোগের সুযোগ। নিমির্ত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সী-একুরিয়্যাম, ক্যাবল কার এবং ডিজনি ল্যান্ড। আসুন পরিচিত হওয়া যাক কাক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে।
কক্সবাজার ভ্রমণ এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। শহর সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টকে মুলত প্রধান সমুদ্র সৈকত ধরা হয়ে থাকে। পর্যটকদের কেন্দ্র করে লাবনী পয়েন্টে রয়েছে হস্তশিল্পের মাকের্ট, এখানে পাবেন হস্ত শিল্প থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য। এছাড়াও শহর সংলগ্ন বিচের মধ্যে কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ রোডস এন্ড হাইওয়ের অধীনে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভটি নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার ভ্রমনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান এই মেরিন ড্রাইভ রোড। এই রোডের এক পাশে সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে পাহাড়।
মেরিন ড্রাইভ ধরে যেতে যেতে চোখে পড়বে বিশাল বিস্তৃত সৈকতে মেঘ আর রোদ্দুরের লুকোচুরির সাথে জেলেদের সাগরে মাছ ধরার দৃশ্য। খোলা জিপ, মাইক্রোবাস বা অটোরিকশায় যেতে পারবেন হিমছড়ি ও ইনানী। যাত্রপথে সাগড় পাড়ে একটু বসে সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্টে।
দক্ষিণে গেলে দেখা পাবেন হিমছড়ি। একপাশে বিস্তৃত পাহড়ে সবুজ আর একপাশে বিশাল সমুদ্র সৈকত এক অন্যরকম আবাহ তৈরি করবে মনে। আর যদি সমুদ্রকে আরো বিশালভাবে দেখতে চান তবে উঠে যান হিমছড়ির পাহাড়ের চুড়ায়।
এখান থেকে সাগরের সুবিশাল অংশটা পর্যটকদের চোখে একটু আলাদাভাবে ধরা পড়বে এটা নিশ্চিত। এছাড়াও হিমছড়িতে একটি মিঠা পানির জলপ্রপাত রয়েছে যা বর্ষার সময় পানি থাকলেও অন্যান্য সময় থাকে শুষ্ক। তবুও প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে হিমছড়ি পর্যটকদের কাছে অনন্য এক আকর্ষণ।
হিমছড়ি থেকে আরো ০৫ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে দেখা পাবেন সারি সারি প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। এটাই ইনানী বিচ, দেখতে অনেকটা কক্সবাজার সৈকতের মতই। তবে এখানে সাগর অনেক শান্ত, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত বড় বড় ঢেউ বেলাভুমিতে আছড়ে পড়ে না। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ভাটার সময়েই দেখা পাবেন বিশাল এলাকা জুড়ে প্রবাল পাথর। এখানে গোসল কিম্বা বেশী লাফালাফি করা খুবই বিপদজনক। কারন প্রবাল পাথরে লেগে থাকা ধারালো শামুক-ঝিনুকে যেকোন সময় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভানা বেশি।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। স্থানীয় নাম ‘নারকেল জিঞ্জিরা’ ও ‘দারুচিনিদ্বীপ’। সৈন্দর্যে ভরা এই দ্বীপটির বর্তমান আয়তন প্রায় ০৮ বর্গ কিমি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটার গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার। বিশ্বে মধ্যে বিরল এবং বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকটি জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবালের প্রাচীর।
দ্বীপটির অবস্থান কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার এবং টেকনাফ শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দুরে বঙ্গপোসাগরের মধ্যে নাফ নদীর মোহনায়। ১লা নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমন করার সুযোগ থাকে। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি জাহাজ ছেড়ে যায় টেকনাফের ‘দমদমিয়া’ জাহাজ ঘাট থেকে সকাল ৯:৩০ থকে ১০ টার মাধ্যে।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত যেতে সাধারনত সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে খুব ভোরে টেকনাফের বাস ধতে হবে নতুবা টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের নির্জনতা উপভোগ করে রাতে থেকে পরের দিন সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জাহাজ ধরতে হবে।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে কোথা থেকে কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন, কিভাবে জাহাজ ও হোটেল বুকিং করবেন এ সকল তথ্য জনাতে
জনশ্রুতি আছে আরাকানের রাম রাজবংশের নামানুসারে এই এলাকার নামকরণ হয় রামু। কক্সবাজারে প্রবেশের আগে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান রামু। ১৬৬৬ সালে মুঘলরা যখন চট্টগ্রাম বিজয় করে তখন রামুতে গৌতম বুদ্ধের ১৩ ফুট উঁচু একটি ব্রোঞ্জমূর্তি পাওয়া যায়। যেটা এযাবৎকালে বাংলাদেশে উদ্ধারকৃত গৌতম বুদ্ধের সর্ববৃহৎ মূর্তি।
রামুতে প্রায় ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে যেগুলোকে ক্যাং বা জাদী বলা হয়। এগুলো মাধ্যে উল্লেখযোগ্য রামুর লামারপাড়া ক্যাং, কেন্দ্রীয় সীমা বিহার (১৭০৭), শ্রীকুলের মৈত্রী বিহার (১৯৮৪), অর্পন্নচরণ মন্দির। অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীতে নতুন করে নির্মিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সীমাবিহার। দক্ষিণে লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধবিহার ছাড়াও আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট ও বড় বৌদ্ধবিহার।
১০০ ফুট লম্বা গৌতম বুদ্ধের সিংহশয্যা মূর্তি রয়েছে উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় যা দেখে পর্যটকদের দৃষ্টি থমকে যাবেই। বলা হয়ে থাকে এটিই এশিয়ার মধ্যে সবথেকে বড় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
কক্সবাজার থেকে কাছে হওয়ায় পর্যটকরা সাধারণত কক্সবাজার এসে সেখান থেকেই রামু বৌদ্ধ বিহার গুলো দেখতে যায়। তাই সহজ উপায় হলো আপনাকে প্রথমেই কক্সবাজার চলে আসা। কক্সবাজার শহর থেকে রামু ঘুরতে চাইলে আপনার উচিৎ হবে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে নেওয়া। এতে করে আপনি দ্রুত সহজে জনপ্রিয় স্থান গুলো দেখে আসতে পারবেন।
মোটামুটি ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় নিয়ে একটি গাড়ি রিজার্ভ করে বেড়িয়ে পড়ুন রামু বৌদ্ধ বিহারগুলো ঘুরে দেখতে। এছাড়াও সিএনজি বা অটোরিক্সা নিয়েও যেতে পারেন জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৪০ টাকা করে। আর যদি অটোরিক্সা রিজার্ভ করে নেন তাহলে যাওয়া আসা ও ঘুরে দেখার জন্য খরচ করতে হবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
কক্সবাজার শহর থেকে সাগরের মধ্যে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মহেশখালী দ্বীপ। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ মহেশখালীতে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। সাগরের মধ্যে হাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দিরটি সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি মহা পবিত্র স্থান।
মহেশখালীর এই আদিনাথ মন্দিরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮৫.৩ মিটার উচুঁতে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, একজন কৃষক এই দ্বীপের মধ্যে মহাদেবের মূর্তি পান। এরপর মহাদেবের নামে তিনি একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ওই বিগ্রহটি স্থাপন করেন। কালের বিবর্তনে মহাদেবের নামানুসারে এই দ্বীপটির নামকরন হয়ে যায় মহেশখালী। উল্লেখ্য যে, দেবতা মহাদেবেরই আর একটি নাম মহেশ।
কক্সবাজারের ৬ নং জেটি বা কাস্তুরী ঘাট থেকে আপনাকে মহেশখালী যেতে হবে। সিএনজি বা অটো রিক্সা করে চলে যান কস্তুরী ঘাটে, এখান থেকে স্পিডবোটে করে মহেশখালী জনপ্রতি ৮০ টাকা করে ভাড়া নেবে সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। চাইলে আপনি ইঞ্জিন নৌকা বা স্পিডবোট রিজার্ভ করেও মহেশখালী যেতে পারবেন।
জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং চকরিয়া থানা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটির অবস্থান। দক্ষিণ বন বিভাগের ফাসিয়াখালি রেঞ্জের ডুলাহাজারা ব্লকে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে। ৯০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই সাফারি পার্কটি প্রতিষ্ঠা করে।
কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলা অন্তর্গত সোনাদিয়া দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৈন্দয্যে ভরপুর একট জায়গা। তিন দিকের সমুদ্র সৈকতের বলিয়াড়ি সাগর লতায় ঢাকা। এখানে রয়েছে কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, অসংখ্ ছোট-বড় খাল এবং প্যারাবন। ভিভিন্ন প্রজাতির জলচর পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি দ্বীপটিকে আরো বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। দ্বীপের পশ্চিমাংশের বেলাভুমিতে প্রচুর পরিমানে ঝিনুক পাওয়া যায়। দ্বীপটির মোট আয়তন ৯ বর্গ কিলোমিটার।
উপজেলার পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া নাফ নদের নামানুসারে এই অঞ্চলটির নামকরণ হয়েছে টেকনাফ। কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্ব কোনায় কক্সবাজার থেকে ৮৬ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই উপজেলাটি। এখানকার সৈকতটি অনেটা নির্জন আর অকৃত্তিম। সাগর আর প্রকৃতির সাথে নির্জন সময় কাটাতে হলে একটু সময় করে ঘরে যেতে পারেন টেকনাফের এই সৈকতটি।
এছাড়াও টেকনাফে দর্শণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, মাথিনের কূপ, বাংলাদেশ-মায়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাট, কুদুমগুহা, টেকনাফ নেচার গেম রিজার্ভ, মারিশবনিয়া সৈকত, শিলখালী চিরহরিৎ গর্জন বাগান ইত্যাদি।