অভিবাসন সংস্কার আইন পাশ না করেই কংগ্রেসে অর্থ আইনের আওতায় লাখ লাখ অভিবাসীদের অভিবাসন সুবিধা প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দল বাজেট রিকন্সিলিয়েশন নামের কংগ্রেসীয় পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন দেয়া এ সুবিধায় কয়েক লাখ লোকজন গ্রীন কার্ড পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট দলের আইন প্রণেতারা আসছে বাজেট রিকন্সিলিয়েশন আইন প্রস্তাবে অভিবাসন সুবিধার বিষয়টি আলাদা করে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ প্রস্তাবের ফলে চার ধরনের অভিবাসীদের গ্রীন কার্ড পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছে তারা গ্রীন কার্ড পেয়ে যাবে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে যারা আমেরিকার জরুরী কাজে নিয়োজিত ছিল, এমন এসেনশিয়াল কর্মিদেরও গ্রীনকার্ড দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহামারির সময়ে এসব কর্মজীবীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে জরুরী কাজ করেছেন, তাদের গ্রীন কার্ড দেয়ার ব্যাপারটিকে একটি মানবিক অভিবাসন উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারীতে যাদের টেম্পোরারি প্রটেকশন স্ট্যাটাস ছিল, তাদেরও বিশেষ ব্যবস্থায় গ্রীন কার্ড দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে যেসব নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ২০২১ সালের ১ জানুয়ারীতে বিলম্বিত বিতাড়ন স্ট্যাটাস (ডেফার্ড এনফোর্সম্যান্ট স্ট্যাটাস) ছিল, তাদের গ্রীনকার্ড প্রদান করা হবে।
যারা ১৮ বছরের কম বয়সে আমেরিকায় প্রবেশ করেছে এবং টানা আমেরিকায় বসবাসের প্রমাণ আছে তাদের গ্রীন কার্ড দেয়া হবে। ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেস নেতাদের এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারী পর্যন্ত এসব অভিবাসীদের সশরীরে আমেরিকায় উপস্থিতি থাকতে হবে। এছাড়া, কোন পোষাকীয় আমেরিকান বাহিনীতে কাজ করা, কোন কারিগরি স্কুল, কলেজে দুই বছরের জন্য ভর্তি হওয়া বা গ্র্যাজুয়েশন করা সহ এসব আবেদনকারীদের টানা তিন বছরের আয় করার প্রমাণ থাকতে হবে।জরুরী কর্মীদের বেলায় ২০০১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে আমেরিকায় সশরীরে ধারাবাহিক উপস্থিতির প্রমাণ জমা দিতে হবে আবেদনের সাথে।
ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসের এ প্রস্তাবের ফলে আমেরিকায় ৭০ লাখের বেশী লোকজনের গ্রীন কার্ড প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ অভিবাসন সুবধার জন্য আবেদনকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হবে। কোন অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকবে না এবং
দন্ডত নয় এমন লোকজনই ১৫০০ ডলারের ফি প্রদান করে সংশ্লিষ্টদের আবেদন করতে হবে।
পর্যটন বা নন ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় আমেরিকায় আসা লোকজনও অন্যসব ক্ষেত্রে প্রাক যোগ্যতা অনুযায়ী এ অভিবাসন সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবে। রিনকনসিলিয়েশন বাজেট প্রস্তাবে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় অতীতে আরোপিত নানা নিয়ম বদলে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ডিভি লটারিতে বিজয়ী লোকজনের মধ্যে যাদের মহামারীর কারনে ভিসা প্রদান করা হয়নি, তাদের ভিসা প্রদানের কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরগুলোতে অব্যবহৃত ভিসার কৌটা সমন্বয় করার কথাও বলা হয়েছে এ প্রস্তাবে।
প্রস্তবাবটি কংগ্রেসে পাশ হওয়ার পর সিনেটে যাবে আলোচনার জন্য। রিকন্সিলিয়েশন পদ্ধতির কারনে হওয়ার ফলে এ প্রস্তাব গ্রহনের জন্য দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতার প্রয়োজন নেই। সিনেটে যাওয়ার পর আইন প্রস্তাবটিতে সংযোযন , বিযোজনের ঘটনা ঘটতে পারে।
আমেরিকার ভেঙ্গে পড়া অভিবাসন ব্যবস্থায় কংগ্রেসীয় বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে গ্রহণ করা উদ্যোগের প্রশংসা করেছে অভিবাসীগ্রুপগুলো।
ক্ষমতা গ্রহনের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকায় একটি মানবিক অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি অভিবাসন নিয়ে সমন্বিত সংস্কার আইন প্রনোয়নের জন্য আইন প্রণেতাদের আহ্বানও জানিয়েছেন।
গত অর্ধ শতাব্দী থেকে আমেরিকায় অভিবাসন নিয়ে রাজনীতি হয়েছে প্রচুর। সমন্বিত কোন সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট দল। মহামারি পেরুনো আমেরিকায় অভিবাসন সঙ্কট চরমে উঠেছে। এমন বাসবটাকে মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকান আইন প্রণেতারা কোন অবস্থায়ই এক হতে পারছেন না। কংগ্রেসের বাজেট প্রস্তাবের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন বভাগের জন্য দুই দশমিক আট বিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জমে থাকা সব অভিবাসন আবেদন, রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সুরাহা করার জন্য অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন অভিবাসন আব্দেওন বিবেচনার জন্যও রিকন্সিলিয়েশন বাজেট প্রস্তাবের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।