শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ওয়েলস

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১

ওয়েলস যুক্তরাজ্যের একটি ছোট দেশ। গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের পশ্চিম দিকের একটা ছোট অংশে ওয়েলস অবস্থিত। এর পূর্বে ইংল্যান্ড, উত্তর-পশ্চিমে আইরিশ সাগর এবং দক্ষিনে ব্রিস্টল চ্যানেল অবস্থিত।

ওয়েলসবাসীর জাতিগত অনুভুতি বেশ শক্ত, নিজেদের ভাষা নিয়ে গর্বেরও শেষ নেই। ইংল্যান্ড থেকে যে তারা অনেকটাই আলাদা এবং স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে, নানাভাবেই তা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আছে তাদের আচার আচরণে। একইসাথে ওয়েলস এই পৃথিবীর সুন্দরতম দেশগুলোর কাতারে ওপরের দিকেই থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশটিতে রয়েছে উঁচু-নিচু টিলা, নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ। প্রকৃতি এখানে অবারিত দ্বার খুলে বসে আছে। সমুদ্র আছে, পরিপাটি টিলার মাঝে অতি পুরাতন স্থাপত্যশৈলীর মনোমুগ্ধকর আভিজাত্যও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে কেউ কোনো কিছু ধ্বংস করছে না। প্রকৃতিকে তার মতো চলতে দিয়ে চলছে জীবন অবারিত।

তাহলে বন্ধুরা চলুন, ওয়েলস সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১। ব্রিটিশদের প্রথম কলোনি হচ্ছে এই ওয়েলস। আলাদা দেশ হলেও এখনো গ্রেট ব্রিটেনেরই অংশ তারা। ১৫৩৬ সালে ইংল্যান্ডের সাথে ওয়েলস যুক্ত হয়। রাজা অষ্টম হেনরি কর্তৃক প্রণীত একটি বিলের মাধ্যমে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস মিলে একটি দেশ গঠন করে এবং তখন থেকে দেশ দুইটি একই আইনের আওতায় পরিচালিত হয়। তবে ১৯৯৭ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে দেশটিতে জাতীয় পরিষদ তৈরি করা হয়। তখন থেকেই দেশটি স্বায়ত্তশাসিত।

২। ২০ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৩২ লাখ মানুষের বসবাস।

৩। ওয়েলস একটি দ্বিভাষিক দেশ। দেশটির সরকারী ভাষা দুইটি- ওয়েলশ এবং ইংরেজি

৪। দেশটির শতকরা প্রায় ৫৭ ভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয় এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ। এবং বাকিরা প্রায় সবাই মুসলিম।

৫। এই দেশের রাজধানীতেই ইউরোপের মধ্যে সর্বপ্রথম মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

৬। ওয়েলসে বর্তমানে মোট ছয়টি শহর আছে। কার্ডিফ ওয়েলসের রাজধানী এবং সর্ববৃহৎ শহর। শহরটি একইসাথে যুক্তরাজ্যের ১১ তম বৃহত্তম শহর। কার্ডিফ দেশটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র। ২০১৭ সালে প্রায় ২ কোটিরও অধিক মানুষ এই শহরে ঘুরতে আসেন। ৫৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বাস।

৭। ওয়েলসের আবহাওয়া হালকা এবং পরিবর্তনশীল। দেশটিতে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং শীতকালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর আশেপাশে।

৮। বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় ওয়েলসের প্রতি বর্গ মাইলে সবচেয়ে বেশি দুর্গ রয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বড় দুর্গটির নাম হচ্ছে ক্যাফিলি। এটি উইন্ডসর দুর্গের পর ইউরোপের ২য় বৃহত্তম দুর্গ। তবে দুর্ভাগ্যবশত, এ সকল দুর্গই বানানো হয়েছিল ওয়েলসের নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

৯। ব্রিটিশ রাজপরিবার তাদের বিয়ের আংটি তৈরির জন্য ওয়েলসের সোনা ব্যবহার করে থাকে।

১০। লন্ডন থেকে সড়কপথে বা ট্রেনে করে দেশটির রাজধানী কার্ডিফে যেতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা।

১১। ফেলিনফোয়েল ব্রুয়ারি যা দক্ষিণ ওয়েলসে অবস্থিত দেশটির সবচেয়ে পুরাতন বার। এবং আমেরিকার বাইরে এখানেই সর্বপ্রথম ক্যানে করে বিয়ার বিক্রির প্রথা চালু করা হয়।

১২। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মধ্যবর্তী প্রথম সীমানা ৭৮৪ সালে রাজা অফার শাসনকালে নির্মাণ করা হয়েছিল। এবং এই সীমানাটির নাম দেওয়া হয় “অফাস ডাইক”

১৩। এই দেশেই রয়েছে বিশ্বের ২য় সবচেয়ে বড় নামের যায়গা। জায়গাটির নাম হচ্ছে “Llanfairpwllgwyngyllgogerychwyrndrobwllllantysiliogogogoch”

১৪। রাগবি ওয়েলসের জাতীয় খেলা। ১৮৮১ সালে ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে রাগবির প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ফুটবলও দেশটিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। হালের তারকা গেরেথ বেলের জন্মস্থান কিন্তু এই ওয়েলস।

১৫। ১৯০৮ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডকে পরাজিত করার মাধ্যমে ওয়েলসই সর্বপ্রথম রাগবি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে।

১৬। দেশটির সবচেয়ে উঁচু পর্বতটির নাম হচ্ছে স্নোডন। এটি স্নোডনিয়া ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এবং এর উচ্চতা ১,০৮৫ মিটার।

১৭। ডিলান থমাস, একজন বিশ্বখ্যাত কবি এবং “আন্ডার দ্য মিল্ক উড” এর লেখক, ১৯১৪ সালে ওয়েলসে জন্মগ্রহণ করেন।

১৮। উনিশ শতকেও এখানকার শিশুরা ওয়েলস ভাষায় স্কুলে কথা বললেই ইংরেজদের শাস্তির মুখে পড়তে হতো। সময়টা বদলেছে। ইংরেজির আধিপত্য এখন অন্যভাবে। সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি ওয়েলশ ভাষাতেও লেখা আছে নির্দেশনা। ওরকম কট্টর শাসনও অবশ্য নেই।

১৯। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমানে ওয়েলসের অধিকাংশ নাগরিক তাদের নিজস্ব এবং অপূর্ব সুন্দর এই ভাষা ওয়েলস এ কথা বলেন না বা বলতেই জানেন না।

২০। ইংল্যান্ডের সীমানা পার হয়ে ওয়েলসে ঢুকতে সেভার্ন ক্রসিংয়ে প্রশস্ত নদী পার হতে গিয়ে চোখে পড়বে প্রিন্স অব ওয়েলস সেতু। এই সেতুই ইংল্যান্ড-ওয়েলসকে যুক্ত করেছে। প্রিন্স অব ওয়েলস মানে প্রিন্স চার্লস। তার নামই জুড়ে দেওয়া হয়েছে এখানে। এই নদীর বুকে বাদবাকি সব সেতুও নাকি ব্রিটিশ রাজপরিবারের নানান সদস্যের নামে। অথচ দেশ হিসাবে ওয়েলসের কত ঐতিহ্য, কত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস আছে। ওয়েলসের মানুষদের আক্ষেপ, সেসব বাদ দিয়ে কেন সব কিছু রাজ পরিবারের নামে হবে? তো নামের রাজনীতি তাহলে এখানেও আছে!

২১। মাউন্ট এভারেস্টের নাম ওয়েলসের নাগরিক স্যার জর্জ এভারেস্টের নামে রাখা।

২২। ওয়েলসের সরকারী মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিং বা জিবিপি

২৩। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৬২ বিলিয়ন পাউন্ড। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড।

২৪। ওয়েলসের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৪৪।

খালিদ হাসান

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com