ঈদ, পূজা পার্বণ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। চৈত্র সংক্রান্তি, বৈশাখী, রোজা-রমজানসহ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুর সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সমাজব্যবস্থার সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয়। আর এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই, ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ আত্মাহুতি দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডের জন্ম দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, শকুনের শ্যন দৃষ্টিতে মাঝে মাঝেই শহীদের সেই স্বপ্ন কালো মেঘে ঢেকে যায়। কক্সবাজারের রামু, কুমিল্লার নানুয়ার দীঘি, সুনামগঞ্জের শাল্লা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু এলাকা বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছে। হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্যে কলঙ্ক তিলক একে দিয়েছে। এমন দুঃসহ বেদনার স্মৃতিগুলো যখন আমাদের মানসপটে, সেই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বরূপটি কেমন?
অক্টোবর মাস, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে। এমন হাড়কাঁপানো শীতে দুর্গোৎসবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রন! সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবের আয়োজন চলবে তিনদিন। বঙ্গীয় পূজা পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা পরিষদ আর আমরা সবাই আয়োজিত শারদীয় দুর্গোৎসবের অনিন্দ্য সুন্দর এই আয়োজন, বিশাল আয়তনের তিন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে। বঙ্গীয় পূজা পরিষদের পক্ষে অভিভাবক তুল্য প্রিয় সুহৃদ কিরণ বনিক শংকর দার আমন্ত্রণ, ‘আমরা সবাই’ এর পক্ষে উৎসব উদযাপন কমিটির কর্ণধার, সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, কমিউনিটির অতি আপনজন রুপক দা’র বিনয়ী আবেদন, কোনটি-ই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। প্রকৌশলী সুব্রত বৈরাগীর নেতৃত্বে আয়োজিত পূজা পরিষদের আমন্ত্রণ- এটিতে অংশগ্রহণও সামাজিক দায়িত্ববোধের মধ্যেই পড়ে। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, অনুসন্ধিৎসু হৃদয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।
জেনেসিস সেন্টারের বিশাল হল রুম। কয়েক হাজার দর্শক অনায়াসে যেকোনো অনুষ্ঠান স্বাচ্ছন্দে উপভোগ করতে পারে। প্রতিমা মন্দির তো আছেই, সঙ্গে রংবেরঙের নানারকম দেশীয় খাবারের স্টল, পাশেই বিশাল আকারের অনুষ্ঠান মঞ্চ। সেখানেই বঙ্গীয় পূজা পরিষদের দুর্গোৎসবের আয়োজন। ক্যালগেরি শহরের পূর্ব দক্ষিণে সাউথ ভিউ কমিউনিটি হল। বঙ্গীয় পূজা পরিষদ সেখানে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছে। উপাদেয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথিদের। তিন দিনব্যাপী চলে নানারকম অনুষ্ঠান মালা। পূজা মানেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্ব মণ্ডলে ছড়িয়ে দেওয়ার এ যেন এক প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
দুটো সংগঠনের নামের সাথে ‘পূজা’ শব্দটি থাকলেও একটি ধর্মীয় সংগঠনের ‘আমরা সবাই’ নামটি আমাকে ভীষণ হতবাক করেছে। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে ভাবছিলাম নামটি এমন হলো কেন? চেষ্টারমেয়ার লেকের পাড়ে বিশাল হলরুমে প্রবেশ করতেই বিস্ময়ের ঘুর কাটতে শুরু করলো। কে নেই সেখানে? হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সবাই আছে। হাজার হাজার জনতার সমাবেশে পূজা অর্চনা যেমন আছে, সেই সাথে আধুনিক, দেশাত্মবোধক, লালনগীতি, ভাটিয়ালিসহ এ যেন বাঙালি সংস্কৃতির এক জমজমাট আসর। স্থানীয় জন প্রতিনিধি, এমপি, মন্ত্রী সবাই আছে। না আছে ধর্মের বিভাজন, না আছে বর্ণ, গোত্রের বৈষম্য! না আছে ক্ষমতাবানদের অযাচিত প্রদর্শনীর নির্লজ্জ কোন প্রতিযোগিতা! সংগঠনটির ধারাবাহিক গৃহীত সব কর্মসূচি-ই ‘আমরা সবাই’ নামটিকে সার্থক করে তুলে।
প্রতিযোগিতা, প্রতিহিংসা এসব বিশেষণ সব সময় আমাদের বাংলাদেশি সংগঠনগুলোর নামের সাথে জড়িয়ে থাকে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন তিনটি আলাদা স্থানে দুর্গোৎসবের আয়োজন করলেও, একে অন্যের অনুষ্ঠানে প্রত্যেকের উপস্থিতি, আপ্যায়ন আর অংশগ্রহণের দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। দুর্গোৎসবের ধারাবাহিকতায় সরস্বতী পূজা, কালীপূজা, চৈত্র সংক্রান্তি আর বাংলা বর্ষবরণেও ছিল এমন জমকালো আয়োজন। ‘আমরা সবাই’ আয়োজিত বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানটি দেখে তো কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত চরণটি-ই মনে পড়ে যায়, ‘গাহি সাম্যের গান-যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান’।
ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলবার্টা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা নিউজ পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে আয়োজন করে ব্যতিক্রমী এক সংবর্ধনা ও স্মারক সম্মাননা অনুষ্ঠান। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগঘন স্মৃতিচারণে হলভর্তি দর্শক শ্রোতারা যেন, একাত্তরের সেই দিনগুলোতেই ফিরে গিয়েছিল। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিসিএওসি আয়োজন করে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। চিত্রাঙ্কন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যালেগেরি প্রবাসী বাংলাদেশিরা মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথাকে তুলে ধরে।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস। বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরি (বিসিএওসি) এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। এ শহরে বাংলাদেশিদের অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকলেও মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে বিসিএওসির দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধ বনিতার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ সেন্টার ছিল মুখরিত। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয় ও প্রাদেশিক সরকারের জন প্রতিনিধিরা।
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক গণ হত্যা দিবস। বিসিএওসিসহ সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটিকে উদযাপন করে। নগর ভবনে সেদিন মেয়রের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। বিসিএওসির আলোচনা সভায় দলমত নির্বিশেষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। সকল অনুষ্ঠানেই কানাডার মূলধারার রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটির গুরুত্ব অনুধাবনে অনুসন্ধানী গবেষক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢেকে থাকে কানাডার জনপদ। বসন্তের আগমনী বার্তায় রূপ পাল্টাতে শুরু করে। বহুজাতিক সংস্কৃতির দেশে কমিউনিটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজস্ব ভাষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধগুলোকে তুলে ধরতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। এই নববর্ষকে উদযাপন করতে গিয়ে এবারের বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির এক ব্যতিক্রমী জমকালো আয়োজন যেন শহরটির দৃশ্যপটকেই পাল্টে দেয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় ফুটে ওঠে হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতির নান্দনিক ঐতিহ্য। সেই সাথে সপ্তাহ জুড়ে অপরাপর বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে ক্যালগেরি শহরটি যেন বাঙালিদের শহরে পরিণত হয়ে যায়!
জাগরণের কবি নজরুলের জন্মদিনকে ঘিরে দুজন সৃষ্টিশীল মানুষের সৃজনশীল আয়োজন তো বাঙালির সাংস্কৃতিক জগতের ধারণাটিকেই পাল্টে দেয়। বরাবরের মতো ইকবাল রহমান ও রুবেল খন্দকারের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট আর মেধাবী চিত্র শিল্পী মাসুদের অঙ্কন চিত্রে ফুটে ওঠে বাংলাদেশ। একুশে পদক জয়ী খায়রুল আনাম শাকিলের গানে গানে আয়োজিত নজরুল সন্ধ্যায় সাম্য আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে।
কী নেই পাশ্চাত্যের শেষ সীমানার এই রূপনগরে! নজরুল প্রেমী যেমন আছেন, রবীন্দ্র ভক্তদের সংখ্যাটিও কম নয়। তাই তো গড়ে উঠেছে টেগোর সোসাইটির মতো সৃজনশীল সংগঠন। মনমাতানো জনপ্রিয় শিল্পী আর কলাকুশলীদের সংখাটিও কম নয়। নিজ নিজ পেশার পাশাপাশি বাংলার গান আর সংস্কৃতির অনবদ্য সেবায় ক্যালগেরি শহরকে মাতিয়ে রাখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গর্ব সৃজনশীল শিল্পী, কণ্ঠ সাধক বন্ধুবর সোহাগ হাসান, ক্লাসিক শিল্পী সেলিম রেজা, রবীন্দ্র দূত রীতা কর্মকার, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু গানের জনপ্রিয় শিল্পী মিলি, মঞ্চ মাতানো সুরের যাদুকর বাণী, অনু, গুরুপ্রসাদ চৌধুরীর মতো গুণী শিল্পীরা।
নৃত্য, শিল্পকলায় আমাদের সংস্কৃতিকে সদা জাগ্রত রাখে মুক্ত বিহঙ্গের মতো নাট্যগোষ্ঠী। আর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সেবায় নেপথ্যে থেকে প্রাণভরে আলো সঞ্চার করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাহফুজুল হক মিনুর মতো গুণীজন। সেই সাথে লেখালেখি আর বুদ্ধি বৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজ, সাহিত্য আর আমাদের জাতীয় মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করতে নিয়মিত কাজ করেন প্রকৌশলী আবদুল্লা রফিক, সাইফুল ইসলাম রিপন, বায়াজিদ গালিব, অধ্যাপক কাজী খালিদ হাসানসহ একদল সৃজনশীল কলম সৈনিক। তাই তো আলবার্টা রাইটার্স ফোরামের মতো বুদ্ধি বৃত্তিক চর্চার সুমহান প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হতে দেখা যায়।
শুধু সামাজিক আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই নয়; কৃতি বাঙালিদের ব্যক্তিগত অর্জনেও গর্বিত হয় এ শহরের বাংলাদেশি কমিউনিটি। তাই তো জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে জুবায়ের সিদ্দিকীর হাতে কুইন এলিজাবেথ সম্মানসূচক এওয়ার্ড তুলে দেয় আলবার্টা সরকারের কর্মসংস্থান, অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ব্রায়ান জিন, প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির এপেকের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়ে আলবার্টার প্রকৌশল জগতে বাংলাদেশিদের কৃতিত্বকে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সেন্টারের লাগোয়া বায়তুল মোকাররম মসজিদে এক ঝাঁক ধর্মপ্রাণ মানুষের, বছরব্যাপী মানবিক মানুষ তৈরির প্রচেষ্টা দেখে বিমোহিত না হয়ে উপায় নেই!
কানাডার অর্থনীতির প্রাণ আলবার্টা প্রদেশ। এ প্রদেশের অর্থনীতির মূলে রয়েছে তেল ও খনিজ সম্পদ। বৃহত্তম রাজস্বের এই সেক্টরে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও ভূতাত্বিকদের অবদান তো সর্বজন স্বীকৃত। শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য সেবা, স্থানীয় সরকার, ব্যাংক বীমা, সেবা প্রশাসন, তথ্যপ্রযুক্তি, রিয়েল এস্টেট ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল সেক্টরেই আজ কৃতি বাঙালিদের সুস্পষ্ট অবস্থান দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। চিকিৎসা ও ওষুধ সেবা খাতের এক ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে, ড.ইব্রাহিম খান ও তার পরিবার তো এখন আমাদের গর্বিত কমিউনিটির আদর্শ। শিক্ষা উদ্যোক্তা ড. বাতেনকে অনুসরণ করে বাংলাদেশিদের ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে দু’দুটি কমিউনিটি কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা ও গবেষণায়ও বীরদর্পেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির মেধাবী সদস্যরা।
গ্রীষ্মে জেগে উঠে শীতের দেশ কানাডা। বাংলাদেশিদের বৃহত্তম সংগঠন বিসিএওসিসহ সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরি, চট্টগ্রাম সমিতি, বগুড়া অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা সমিতি, কুষ্টিয়া সমিতি, কুমিল্লা সমিতি, নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও পেশাজীবী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইগুলোর নানা রকম কর্মসূচিকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠছে ক্যালগেরির সবুজ শ্যামল মুক্তাঞ্চল। সেই সাথে কমিউনিটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে কৃতি গবেষক ও অধ্যাপক ড. রঞ্জন দত্ত ও ড. জেবুন্নেসা চপলার শিশু সন্তান পৃথিবী, প্রার্থনা আর প্রকৃতির গায়ে লাল সবুজের মানচিত্র, আর কন্ঠে বাংলার গানের সাথে আমাদের ঐতিহ্যের নৃত্য যেন হতাশায় নিমজ্জিত দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে আশার শিহরণ জাগিয়ে তোলে। জেরিন আর্ট স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের রংতুলিতে বাংলার রং, মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলার শস্য প্রান্তরের প্রতিচ্ছবি, কবি আবীরের কন্ঠে ‘স্বাধীনতা তুমি’ এর সবই তো বাংলাকে ভালোবাসার এক জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি।
এতসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড! তবে কি আমাদের তথাকথিত রাজনীতির রেশ এখানে নেই? সেটিও আছে! আওয়ামী লীগ, বিএনপির রাজনীতি যেমন আছে, আড়ালে আবডালে জামাতীদের কর্মকাণ্ডও আছে। তবে সুখের কথা, রাজপথ দখল, আক্রমণ, প্রতি আক্রমণের তথাকথিত রাজনীতির রেশ এখানে নেই। কিছু কিছু সুধীজন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাসকে ধারণ করলেও, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রবাসে আমাদের জাতিসত্ত্বার ঐতিহ্যকেই মহান করে তুলে।
ক্যালগেরির বাংলাদেশি কমিউনিটির গৌরবোজ্জ্বল অর্জন এখন শুধুমাত্র প্রদেশটির মূল ধারাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যপ্তি এখন বাংলা ভাষাভাষী বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিস্তৃত। মাদার অর্গানাইজেশান হিসেবে বিসিএওসিসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন যেমন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য নিরলস কাজ করছে, তার পাশাপাশি সাংবাদিক আহসান রাজীব বুলবুল’ এর অনবদ্য প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত বাঙালিদের গৌরবগাঁথা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শিরোনাম হচ্ছে। ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’ সহ এক গুচ্ছ জাতীয় গণমাধ্যম কমিউনিটির হয়ে সব গৌরবগাঁথাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে। সত্যিই, সবকিছু মিলিয়ে এ যেন পাশ্চাত্যের কাঙ্ক্ষিত এক মিনি বাংলাদেশ!
লেখক: মো: মাহমুদ হাসান কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক