বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন

এস আলমের ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি: ৬ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৯৫ হাজার কোটি টাকা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

প্রথমে শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল। তারপর নতুন-পুরাতন কোম্পানি দেখিয়ে ঋণের পর ঋণ। এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। বলা হচ্ছে, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছিল তারা। নিয়ম-নীতি ভেঙে ছয়টি ব্যাংক থেকে এস আলম সংশ্লিষ্টরা বের করে নিয়েছেন ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এসব অপকর্মে গ্রুপটির সহযাত্রী ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ৯৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।

এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নন-এসি বাস সার্ভিসের জন্য পরিচিত গ্রুপটি সরকারি জনতা ব্যাংক থেকেও নিয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রণে রাখা ব্যাংকগুলো থেকেও কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ বা বেনামে সরিয়েছে এস আলম।

ব্যাংক থেকে তারা কীভাবে বের করলেন এসব টাকা? বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর পর্ষদে নিজের লোক বসিয়েছেন আগে। পরে তারাই পথ বের করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বোর্ডকে দিয়ে ঋণ পাশ করিয়েছে। এগুলো একটাও তো বৈধ না। বোর্ডে যেহেতু সব এস আলমের লোকজন ছিল, সুতরাং ওরা বোর্ড থেকে পাশ করিয়ে বৈধভাবে নিয়ে গেছে। তারা আইনগতভাবে দেখাবে, বৈধভাবে পাশ করিয়েছে। কিন্তু বোর্ডে তো সব ওদেরই লোক।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সমস্ত নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজেরাই প্রভাবিত করে ঋণ দিচ্ছে। এইটা করে পুকুর চুরির মতো ব্যবস্থা করেছে।

এস আলম সরাসরি নিজেদের নামে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও নিয়েছে। তাতেও থামেনি, তৈরি করে ছায়া কোম্পানি। আর বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডই হয়েছে নিয়ম লঙ্ঘন করে। অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, তারা আসলে যেগুলো করেছেন, এর উদ্দেশ্যটা তো ঠিক না। ওরা যে টাকা বের করে নিছে, সবগুলো এনপিএল, তা ফেরত না আসলে কী হবে? ফান্ড তো ঘুরে আসবে না। মূলধনের ওপর চাপ পড়বে। লাভের ওপর চাপ পড়বে। সমস্ত দিক থেকে চাপের মুখে পড়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত অনিয়ম-লুটপাট কি শুধু এস আলম আর তাদের পুতুল পর্ষদ দিয়েই সম্ভব ছিল? জবাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মোটেই না। জেনে-বুঝেও উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো সহযোগিতা করেছেন সাবেক দুই গভর্নরসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকে লুটপাট হচ্ছে, নিয়ন্ত্রকরা কোথায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোথায়, কী করেছে তারা? কেউ তো থামানোর জন্য কিছু করে নাই। তারা কোনো পদক্ষেপ নেই, সহযোগিতা করেছে।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব বিষয় কারও না কারো তো দেখার কথা ছিল, কেউ যদি বন্ধ করার চেষ্টা করতো, তাহলে তাকে বলা হতো, আপনি চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। সেটা তো করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বরং তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য যেভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেভাবে সেভাবে সাকুর্লার দিছে।

সঠিক হিসাব বের হলে এস আলমের নামি-বেনামি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। আর জালিয়াতির পথ এখন বন্ধ করে দেয়ায় সামনে আসবে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com