রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

এক যুগ ধরে পড়ে আছে ১২ উড়োজাহাজ, যেকোনও সময় নিলাম

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে থাকা অচল ১২ উড়োজাহাজ বিক্রির জন্য নিলামের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।

দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে পার্কিংয়ে পড়ে থাকা এসব উড়োজাহাজ গলার কাঁটা হয়ে আছে। চার কোম্পানির এসব উড়োজাহাজের জন্য পার্কিং সারচার্জের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো এই টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ায় এসব বিমানকে অবশেষে নিলাম করেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালালের পার্কিংয়ে পড়ে আছে ইউনাইটেডের ৮টি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজির একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি করে উড়োজাহাজ। প্রায় এক যুগ ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে এসব উড়োজাহাজ। এগুলো সরিয়ে নিতে মালিকপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পার্কিং ও সারচার্জ জমা দেওয়ার ভয়ে তারা সরিয়ে নেয়নি

সূত্র আরও জানায়, গত ১১ বছরে এই ১২টি উড়োজাহাজের পার্কিং ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। জিএমজির কাছে ৩৬০ কোটি টাকা পায় বেবিচক। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে জিএমজি এয়ারলাইন্স। এরপর আর কখনও আকাশে ডানা মেলেনি। আর রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ২০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। তবে তার আগেই বেশ কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। এর বাইরে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া ৩৫৫ কোটি টাকা।

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র উড়োজাহাজ কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বন্ধ আছে ২০১৬ সাল থেকে। এখন এসব এয়ারলাইন্স থেকে পাওনা টাকা আদায়ে উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বেবিচক।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির জন্য যে যে ধাপ রয়েছে, সেগুলো শেষ। আর এসব উড়োজাহাজ এখন উড়তে পারবে না, এ বিষয়ে টেকনিক্যাল মিটিং করেছি। আমাদের জব্দ তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি বেবিচক চেয়ারম্যানের দফতর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব উড়োজাহাজ থেকে যে আমাদের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি তা জানানো হয়েছে।’

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন কার্গো এরিয়াতে আমদানি-রফতানি বাড়বে। এ জন্য প্রচুর জায়গা দরকার। তাই তৃতীয় টার্মিনাল চালুর আগেই যাতে এ উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রি করতে পারি, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে নির্ধারণ করে নিলাম ডাকবে বেবিচক।’

বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিত্যক্ত ১২ উড়োজাহাজ আমাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এগুলোর কারণে বিমানবন্দর পরিণত হয়েছে বিশাল এক ডাম্পিং স্টেশনে। ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কার্গো ভিলেজ এলাকায়। পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নেওয়া হলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। একই সঙ্গে কার্গো উড়োজাহাজে মালামাল ওঠানামাও সহজ হবে।’\

জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। তবে কোনও আগাম ঘোষণা ছাড়াই ২০১৬ সালে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে তাদের বহরে থাকা আটটি উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত ইউনাইটেড থেকে সারচার্জসহ অন্য খরচ বাবদ ওই পরিমাণ টাকা পাওনা রয়েছে বেবিচকের। গত কয়েক বছর ধরে পাওনা আদায়ে বারবার চিঠি দিয়েও এখন পর্যন্ত কোনও অর্থ আদায় করতে পারেনি।

২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে নতুন সাত জন স্বতন্ত্র পরিচালক বসিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই সাত জনের মধ্যে অ্যাভিয়েশন ও ভ্রমণবিষয়ক সাময়িকী ‘বাংলাদেশ মনিটর’ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়।

গত বছরের ৩ জানুয়ারি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে সাত বছরের (২০১৬-২০২২) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এজিএমে যত দ্রুত সম্ভব এয়ারলাইন্সটিকে অপারেশনে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের সদস্যরা।

তখন তারা বলেছিলেন, প্রথম ধাপে কার্গো অপারেশন, পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে (২০২৬) কমার্শিয়াল ফ্লাইট শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কিন্তু গত এক বছর চার মাসে এ বিষয়ে তাদের কাজের কোনও অগ্রগতি নেই। এমনকি নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ।

জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালানা পর্ষদের সদস্যরা জানান, ইউনাইটেডের কার্যক্রম ফের শুরু করতে হলে এয়ার অপারেটিং সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়ন করতে হবে। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না করায় এওসি দিচ্ছে না বেবিচক।

বেবিচক সূত্র জানায়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল দেনা ৫৫ কোটির মতো, বাকি টাকা সারচার্জ। এই টাকা পরিশোধ না করলে এওসি ইস্যু করা যাবে না। যদিও ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে সারচার্জ মওকুফের অনুরোধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দিয়েছে। ফলে ইউনাইটেডের জন্য আর কোনও দরজা খোলা রইলো না।

এসব বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা ৩০০ কোটি টাকা সারচার্জ মওকুফের জন্য আবেদন করেছিলাম। আর মূল বকেয়া ৫৫ কোটি টাকা এয়ারলাইন্স চালু হওয়ার পর ক্রমান্বয়ে দেবো বলেছিলাম। এ প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়নি। ফলে এয়ারলাইন্স পরিচালনায় এওসি নবায়ন করতে পারিনি।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com