ভোরের আলো ফুটতেই পুরো বিলজুড়ে ফুটে ওঠে লাল শাপলা। একই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দে প্রকৃতি তার রূপের সঙ্গে নিজেই যেন বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনাধারা ছড়িয়ে দেয়। এই সৌন্দর্য দেখতে আপনাকে দেশের বাইরে কোথাও যেতে হবে না।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিকি বিলে গিয়ে নিজের চোখ জুড়িয়ে আসতে পারেন। এই বিলের ডানে তাকালে চোখে পড়বে মেঘালয়ের পাহাড়।
যেন প্রকৃতি তার সৌন্দর্যকে মেলে ধরেছে। শাপলার এমন সমারোহ ভালো করে দিতে পারে যে কারো মন। শাপলা ফুলের এ লালরাজ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বিকি বিলটি কাশতাল গ্রামে অবস্থিত। হলহলিয়ার চক ও দীঘলবাঁক মৌজার প্রায় ১৪ দশমিক ৯৫ একর জায়গা নিয়ে বিকি বিলের অবস্থান।
কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রাম বিকি বিলটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে, যার পাশেই মেঘালয়ের সীমান্ত। কোনো রকম চাষাবাদ ছাড়াই ৩০বছর ধরে এ বিলে লাল শাপলা ফুলের বিপুল সমারোহ দেখা যায়।
বছরের ছয় মাস এ বিলে পানি থাকে। তাই এ ছয় মাসই বিলে লাল শাপলার এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন দর্শনার্থীরা। তবে পাহাড় আর হাওরের পাশাপাশি বিকি বিলের লাল শাপলার এমন সৌন্দর্য স্থানীয়দের পাশাপাশি মুগ্ধ করছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদেরও।
পাশাপাশি লাল শাপলার এই বিল ঘিরে কর্মসংস্থানও বেড়েছে ওই অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের।
ঘুরতে আসা পর্যটক ফজু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসাধারণ সৌন্দর এই লাল শাপলার বিলটি।
চারদিকে লাল আর লাল। যে কেউ এই লাল শাপলার প্রেমে পড়বে।’
ঘুরতে আসা পর্যটক আরমান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাত ৪টার দিকে সুনামগঞ্জ থেকে রওনা দিয়ে এই লাল শাপলার বিলে এসেছি। ভোরের আলো ফুটতেই দেখি অসাধারণ এক দৃশ্য।’
‘এক দিকে পাহাড় তার উপরে মেঘ আনাগোনা আর নিচে লাল শাপলার মেলা। সত্যিই আমি এই লাল গালিচার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ।’
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই লাল শাপলার বিলকে ঘিরে আমাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে। প্রতিদিন এখানে পর্যটকরা আসলে আমরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের নৌকায় নিয়ে ঘুরি।’
এদিকে তাহিরপুর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু চৌধুরী বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এরই মধ্যে বিকি বিলের যে লাল শাপলা এটি সকলের নজর কেড়েছে। এই পর্যটন স্পটকে সরকারিভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে কি ভাবে দৃষ্টিনন্দন করা যায়।’
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই বিকি বিলে লাল শাপলা ফোটে। যা সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে।