একটি ছবিই বদলে দিল ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র নায়িকার জীবন
আপডেট সময়
বুধবার, ১০ মে, ২০২৩
ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। তাই পড়াশোনা করলেও মন ছিল অভিনয়ের দিকেই। শৈশবের স্বপ্নপূরণ করতে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার পথে হেঁটেছিলেন উত্তরপ্রদেশের কন্যা। দশ বছর পর একটি ছবিই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এক লহমায় যেন সাফল্য দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলির মধ্যে যে সিনেমাটি বর্তমানে সমালোচনা এবং বিতর্কের মধ্যমণি হয়ে উঠেছে, সেই সিনেমায় মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন সোনিয়া বালানি।
দশ বছর ধরে অভিনয় করছেন সোনিয়া। কিন্তু কোনও দিন সে ভাবে প্রচারে আসেননি তিনি। বলিউডে অভিনয় করলেও সে ছবি ফ্লপ হয়েছে বক্স অফিসে। কিন্তু একটি ফিল্মেই চর্চায় এসে গিয়েছেন সোনিয়া।
বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে অভিনয় করে কেরিয়ারে বড় সাফল্য পেয়েছেন সোনিয়া। ৭ বছর আগে বলিপাড়ায় পা দেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে মাত্র তিনটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন সোনিয়া।
২০১৬ সালে সোনিয়াকে প্রথম দেখা যায় ‘তুম বিন ২’ ছবিতে। মুক্তি পাওয়ার পর এই ছবি বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি। তার ঠিক দু’বছর পর ‘বাজার’ ছবিতে অভিনয় করেন সোনিয়া। এই ছবিতে সইফ আলি খান এবং রাধিকা আপ্তের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান তিনি।
সইফ এবং রাধিকার সঙ্গে অভিনয় করলেও ‘বাজ়ার’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে ছিলেন বলে সেই অর্থে দর্শকের নজর কাড়তে ব্যর্থ হন সোনিয়া। বলিউডে ভাগ্য না খুললেও ছোট পর্দার পরিচিত মুখ তিনি।
‘বড়ে আচ্ছে লগতে হ্যায়’, ‘তু মেরা হিরো’ এবং ‘ডিটেকটিভ দিদি’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে ছোট পর্দায় নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন সোনিয়া। তার পর বড় পর্দায় দেখা যায় নায়িকাকে।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিতে আসিফার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে সোনিয়াকে। ছবিটি নিয়ে যতই বিতর্ক হোক না কেন, খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের নজর কেড়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিতে কাজ করে ৩০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেেন সোনিয়া। এই ছবির ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই ধীরে ধীরে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। কিন্তু ছবি মুক্তির পর তা রাজনৈতিক বিতর্ক এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিতর্কের জালে জড়িয়ে পড়ে।
কংগ্রেস এবংসিপিএমের মতো দলগুলি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটিকে ‘রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা’ আখ্যা দিয়েছে। আবার বিরোধীদের দাবি, এই ছবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই তৈরি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেও কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে।
কিন্তু ছবিকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার আঁচ পড়েনি সোনিয়ার কেরিয়ারে। বরং ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি অভিনেত্রীর দশ বছরের শ্রম এবং অধ্যবসায়কে সার্থক করে তুলেছে।
খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের পর নিজস্ব অনুরাগীমহলও তৈরি করে ফেলেছেন সোনিয়া। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে ৭৯ হাজারের গণ্ডি পার করে ফেলেছে সোনিয়ার অনুরাগীর সংখ্যা।
১৯৯১ সালে উত্তরপ্রদেশের আগরায় জন্ম সোনিয়ার। সেখানেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেছেন তিনি। অভিনয় করবেন বলে আগরা থেকে মুম্বই আসেন সোনিয়া।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনিয়া তাঁর কেরিয়ার শুরুর অভিজ্ঞতা জানান। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বই আসেন তিনি। তার পর বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দেওয়া শুরু করেন তিনি।
সোনিয়া বলেন, ‘‘২০১৩ সালের মার্চ বা এপ্রিল মাসের ঘটনা। একটি বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দিতে গিয়েছি। তখন এক একটি অডিশন দুই থেকে তিন দিন ধরে হত। আমি অডিশন দিতে গিয়ে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু বসে থাকতাম।’’
একই স্ক্রিপ্ট হওয়া সত্ত্বেও এক এক জন এক এক রকম অভিনয় কী করে করতেন, অডিশন দিতে গিয়ে সেটাই অবাক হয়ে দেখতেন সোনিয়া। কিন্তু তাঁকে যখন মঞ্চে ডাকা হয়, তিনি নাকি খুব ভয় পেয়ে যান বলে জানান সোনিয়া।
সোনিয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি অডিশন দিতে গিয়ে এতই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, পরের দিন আসার নাম করে সেখান থেকে পালিয়ে যাই। স্ক্রিপ্ট নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে এসেছিলাম আমি। তার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভ্যাস করেছিলাম।’’
পরের দিন অবশ্য আবার বিজ্ঞাপনের অডিশন দিতে যান সোনিয়া। মঞ্চে গিয়ে এক নিশ্বাসে সমস্ত সংলাপ বলে ফেলেন তিনি। কিন্তু পারফর্ম করার পর সোনিয়া বুঝতে পারেন যে, তিনি ভাল অডিশন দিতে পারেননি। কিন্তু সে দিন হার মানেননি সোনিয়া। দশ বছর অভিনয়জগতে থাকার পর সাফল্য পেয়েছেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র নায়িকা।