বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ন

এই বর্ষায় চলনবিলে

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩

একেক ঋতুতে তার সৌন্দর্যে যোগ হয় একেক রং। শীতে যেমন ঘন সবুজ আর হলুদ, বর্ষায় তেমনি রুপালি। গ্রীষ্ম আর শীতে ফসলের সমারোহ দেখে বোঝার উপায় নেই, বর্ষায় ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরে। ঈশান কোণে মেঘ দেখা দিলেই শুরু হয় মাঝিদের সতর্কতা। এর নাম চলনবিল। বইয়ে পড়া হয়েছে বটে, মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের বিরাট জায়গা এটি। কিন্তু এর যে একই অঙ্গে অনেক শোভা, সে কথা লেখা নেই তেমন কোথাও।

টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো কদর এখনো পায়নি চলনবিল। তাই বলে কোনো অংশে তার রূপের খামতি নেই। বর্ষাকালে সেই রূপের পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের ডাকছে চলনবিল। দেশের বৃহত্তম বিল এটি। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার অনেক ছোট বিল আর ৪৭টি নদী নিয়ে চলনবিল। বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে ছোট ছোট বিল ও নদীগুলো একসঙ্গে সুবিশাল বিলের রূপ নেয়। তিন জেলা হলেও চলনবিলের বড় অংশ রয়েছে নাটোর জেলার সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে।

চলনবিলের দর্শনীয় জায়গাগুলো মূলত বর্ষাকালেই বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা, বইঠার নৌকা, পালতোলা নৌকায় ঘুরে দেখা যায় বিলের বিভিন্ন অংশ। এর অন্যতম দর্শনীয় জায়গা হজরত ঘাসী দেওয়ান (রহ.)-এর মাজার, যা দেশব্যাপী পরিচিত তিশিখালীর মাজার নামে। বর্ষায় যখন চারদিকে পানি থইথই করে, তখন দ্বীপের মতো জেগে থাকে এই মাজারটি। এর চারদিকে সারি সারি নৌকা বাঁধা থাকে। জনশ্রুতি আছে, আনুমানিক ৩৫০ বছর আগে সিংড়ার ডাহিয়া এলাকায় ইসলাম প্রচার করতে আসেন হজরত ঘাসী দেওয়ান। জনাকীর্ণ প্রান্তর তিশিখালীতে চাটাই দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘরে বাস করতেন তিনি। পরে সেই জায়গায় তৈরি হয় মাজার। বর্ষার দিনগুলোতে, বিশেষ করে শুক্রবারে এই মাজারকে কেন্দ্র করে বসে তিশিখালীর মেলা।

এখন চলনবিলের আকর্ষণীয় দিক হলো, কংক্রিটে নির্মিত সাবমার্সিবল সড়ক। সিংড়া পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সড়কটি চলে গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দিকে। ভরা বর্ষায় ডুবে থাকা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে চলাচল করা যায়। গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা ব্রিজ এখন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ডুবে থাকা রাস্তাটির জন্য। আশপাশে জনপদ না থাকলেও বিলসা একটি গ্রাম। বর্ষায় বিলসার চারদিক ডুবে থাকে পানিতে। দ্বীপের মতো এ জায়গায় পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘স্বর্ণদ্বীপ’ নামে একটি কৃত্রিম দ্বীপ।

অনেক ছোট বিল আর ৪৭টি নদী নিয়ে চলনবিল

অনেক ছোট বিল আর ৪৭টি নদী নিয়ে চলনবিল

বছরের পর বছর চলনবিলে পাওয়া নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ অনেক দুর্লভ জিনিস নিয়ে গড়ে উঠেছে চলনবিল জাদুঘর। গুরুদাসপুরের খুবজিপুরে গ্রামে গড়ে ওঠা এই জাদুঘরও অনেক পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় জায়গা। এ ছাড়া গুরুদাসপুরের বিলসা ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশের কুন্দইলের বুক চিরে বয়ে চলা বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের তাড়াশ এলাকার ৯ ও ১০ নম্বর ব্রিজ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও আকর্ষণ করবে আপনাকে।

যেভাবে যাওয়া যাবেন 
একসময়ের দুর্গম চলনবিলে যাওয়া এখন অনেক সহজ। দেশের যেকোনো জায়গা থেকে চলনবিল দেখতে আসতে হবে নাটোরের গুরুদাসপুরের কাছিকাটা নয়াবাজার অথবা নাটোর শহরে। কাছিকাটা থেকে বিলসা দেখে সেখান থেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করে পর্যটকেরা আসতে পারবেন মূল চলনবিল দেখতে।

এ ছাড়া নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে এক ঘণ্টা দূরত্বে প্রথমে বাসে বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৫০ টাকা ভাড়ায় এবং পরে সিংড়ার চলনবিল গেট থেকে পেট্রোবাংলা পয়েন্ট পর্যন্ত ১০ থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় চলনবিল পয়েন্টে যাওয়া যাবে। পয়েন্ট থেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিভিন্ন আকারের নৌকা ভাড়া নিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় ঘুরে দেখা যাবে চলনবিলের বিশাল অঞ্চল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com