বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এই প্রযুক্তি এখন শুধু মানুষের কাজ সহজ করে দিচ্ছে না, বরং শিক্ষার পদ্ধতি, কোডিংয়ের ভবিষ্যৎ ও চিকিৎসাক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। তবে প্রায় সময় এআই নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠে। বিশেষ করে অনেকের মতে এআই মানুষকে অলস করে দেবে এমনকি সৃজনশীল কাজের ক্ষমতা কেড়ে নেবে। এবার এআই-এর ভবিষ্যৎ এবং অন্যায় বিষয় নিয়ে কথা বললেন গুগল ডিপ মাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে জানা যায়, সম্প্রতি রোয়ান চিয়াংয়ের পডকাস্টে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেমিস হাসাবিস জানিয়েছেন, এআই মানুষকে অলস নয়, বরং বুদ্ধিমান করে তুলবে। তিনি বলেন, এআই প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ধরনের সহকারী হয়ে উঠবে। শিক্ষা, সফটওয়্যার নির্মাণ, এমনকি ওষুধ আবিষ্কারেও এটি নতুন যুগের সূচনা করবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গুগল যেসব নতুন এআই টুল উন্মোচন করেছে, সেগুলো নিয়ে দারুণ আশাবাদী হাসাবিস। তিনি জানান তার পছন্দের তিনটি উদ্ভাবন হলো জেমিনি ২.৫ প্রো ডিপথিঙ্ক, ভিও থ্রি, ও জেমিনি ফ্ল্যাশ। ডিপথিঙ্ক একটি ‘সুপার ফ্রন্টিয়ার মডেল’, যা জটিল যুক্তি বিশ্লেষণে সক্ষম। অন্যদিকে ভিও থ্রি প্রথমবারের মতো অডিও ও ভিডিও একত্রে তৈরি করতে পারে। আর জেমিনি ফ্ল্যাশ দারুণ একটি এআই যেটি মূলত মোবাইল ও স্মার্ট ডিভাইসে ব্যবহার উপযোগী।
শিক্ষাক্ষেত্রে গুগলের লার্নএমের উদ্যোগ নিয়ে গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস বলেন, এই টুলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে ফ্ল্যাশকার্ড বানাতে পারবে, ইউটিউব ভিডিও সাজেস্ট পাবে এবং নিজের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারবে। তার মতে, এআই ব্যবহার করে উন্নতমানের শিক্ষা পৌঁছে দেয়া যাবে সেইসব অঞ্চলে, যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা এখনও দুর্বল।
এআই-এর সাহায্যে বর্তমান সময়ে কোডিং সহজ হয়ে উঠছে উল্লেখ করে হাসাবিস বলেন, আগামী দিনে প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা হতে পারে মানুষের প্রাকৃতিক ভাষা। টপ ইঞ্জিনিয়াররা এআই-এর সহায়তায় ১০ গুণ বেশি উৎপাদনশীল হবেোম এমনকি নতুন প্রোগ্রামাররাও জটিল কোডিং করতে পারবে এআই-এর সাহায্যে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে গুগলের বিখ্যাত আলফাফোল্ড প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী এক দশকে এআই হয়তো সব রোগের ওষুধ আবিষ্কার করতে পারবে। তার মতে, একসময় একেকটি প্রোটিন ম্যাপ করতে যেখানে পাঁচ বছর সময় লাগত, সেখানে আলফাফোল্ড এক বছরে ২০০ মিলিয়ন প্রোটিন ম্যাপ করেছে যা এক বিলিয়ন বছরের গবেষণাকে এগিয়ে দিয়েছে। সবশেষে, হাসাবিস বলেন, এআই আমাদের কাজ বদলাবে ঠিকই, কিন্তু মানুষের চিন্তাশক্তিকে আরও বিকশিত করবে।
ডেমিস হাসাবিসের কথাগুলো শুধু ভবিষ্যতের আভাস নয়, বরং এআই প্রযুক্তির হাত ধরে কীভাবে আমাদের জীবন, শিক্ষা, কর্মজীবন ও চিকিৎসাব্যবস্থা বদলে যেতে পারে তারই আভাস। যেখানে অনেকে ভয় পান যে এআই মানুষকে অলস করে দেবে, সেখানে গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও মানুষ আরও দক্ষ, স্মার্ট ও সৃজনশীল হয়ে উঠার কথা বলছেন।