এই মুহূর্তে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বন্ধু, সঙ্গী, প্রেমাস্পদ হয়ে উঠছে বিভিন্ন এআই চ্যাটবট। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, আমেরিকায় প্রতি চার জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে অন্তত তিন জন কোনো না কোনোভাবে এই ধরনের চ্যাটবট ব্যবহার করছে।
মন খারাপ হলে তাদের বলা যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। তারা শুনছে, ভরসা জোগাচ্ছে, ভালোবাসাও জানাচ্ছে। অথচ তারা মানুষ নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কারও নাম সারা, কারও লায়লা, আবার কারও জেসমিন। প্রয়োজনমতো ব্যবহারকারী নিজেই তাদের নাম ও ব্যক্তিত্ব কাস্টমাইজ করে নিচ্ছে – কারও কাছে সে প্রথম প্রেম, কারও কাছে প্রয়াত সঙ্গীর প্রতিরূপ। ফলে সম্পর্ক হয়ে উঠছে আরও ঘনিষ্ঠ, আরও ব্যক্তিগত।
মার্কিন সংস্থা ‘কমন সেন্স মিডিয়া’ ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১০৬০ জন কিশোর-কিশোরীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছে—
মনোবিদদের মতে, এই প্রবণতা বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোররা বাস্তব জীবনের সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাবে। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়দের সঙ্গে মনের কথা ভাগ না করে তারা কৃত্রিম এক সত্তার সঙ্গেই মানসিকভাবে জড়িয়ে পড়বে। যা একদিকে একাকিত্ব বাড়াবে, অন্যদিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ঝুঁকিও বাড়াবে।
ভারতে এখনও এই নিয়ে বিস্তৃত কোনো সমীক্ষা না হলেও, কিছু তথ্য ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে।
মাইক্রোসফটের ‘গ্লোবাল অনলাইন সেফটি সার্ভে’ অনুযায়ী:
‘শেইল ইন্ডিয়া’-র ২০২৪ সালের আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে:
তবে এখনো পর্যন্ত এআইকে প্রেমিক বা সঙ্গী হিসেবে ব্যবহারের মাত্রা নিয়ে ভারতে নির্দিষ্ট কোনও গবেষণা নেই।
অনেকে হয়তো AI-এর সঙ্গ পেয়ে মানসিক স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায় – কৃত্রিম ভালোবাসা কি সত্যিকারের ভালোবাসার বিকল্প হতে পারে? AI সঙ্গী আসলেই কি “সম্পর্ক” গড়ে তুলছে, না কি এটা নিছক এক প্রযুক্তিগত বিভ্রম?
প্রযুক্তি আমাদের জীবনে আসছে সহায়ক হিসেবে, কিন্তু যদি সেটা মানুষের সম্পর্কের জায়গা দখল করতে শুরু করে, তখন সেটাই হয়ে দাঁড়ায় উদ্বেগের কারণ। আমেরিকার পরিস্থিতি হয়তো ভারতের ভবিষ্যতের পূর্বাভাস। এখনই প্রয়োজন প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা, শিক্ষার পরিকাঠামোয় মানসিক স্বাস্থ্য এবং নৈতিক দিকগুলো যুক্ত করা।