বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন

উত্তর কোরিয়ার একমাত্র বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা এয়ার কোরিও

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

উত্তর কোরিয়ার একমাত্র বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা এয়ার কোরিও (Air Koryo), যা সরকারের মালিকানাধীন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। বিমান সংস্থাটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও, নিষেধাজ্ঞা ও সীমিত সুযোগ-সুবিধার কারণে এটির কার্যক্রম অন্যান্য প্রধান এয়ারলাইনের তুলনায় অনেক ছোট আকারের।

এয়ার কোরিওর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

  • নাম: এয়ার কোরিও (Air Koryo)
  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৫৫
  • প্রধান কেন্দ্র: পিয়ংইয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (FNJ)
  • আইএটিএ কোড: JS
  • আইসিএও কোড: KOR
  • মূল মালিক: উত্তর কোরিয়ার সরকার
  • স্লোগান: “The Wings of Juche Korea”

এয়ার কোরিও প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে “চোসন মিনহাং” (Choson Minhang) নামে, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এয়ারলাইনের নাম পরিবর্তন করে এয়ার কোরিও রাখা হয়।

ফ্লাইট রুট ও গন্তব্য

বর্তমানে এয়ার কোরিওর আন্তর্জাতিক সংযোগ খুবই সীমিত। বিমান সংস্থাটি সাধারণত চীন ও রাশিয়ার কিছু শহরে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

আন্তর্জাতিক রুট

বর্তমানে এয়ার কোরিও মূলত নিম্নলিখিত আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনা করে:

  • চীন: বেইজিং, শেনইয়াং, সাংহাই (কখনও কখনও)
  • রাশিয়া: ভ্লাদিভোস্টক

পূর্বে সংস্থাটি ব্যাংকক, কুয়ালা লামপুর, কাতমান্ডু এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু শহরে ফ্লাইট পরিচালনা করত। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রুট

উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যা খুবই কম এবং প্রধানত সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত। মূল অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলো হলো:

  • ওয়ানসান (Kalma Airport)
  • সামজিয়ন (Samjiyon Airport)
  • চংজিন (Orang Airport)
  • হামহুং (Sondok Airport)

বিমান বহর ও পরিষেবা

বিমান বহর (Fleet)

এয়ার কোরিওর বিমান বহর বেশ পুরনো এবং বেশিরভাগই সোভিয়েত আমলের তৈরি। বর্তমানে বহরে রয়েছে:

বিমান মডেল সংখ্যা ব্যবহার
Tupolev Tu-204 আন্তর্জাতিক ফ্লাইট
Tupolev Tu-154 আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
Antonov An-148 স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইট
Ilyushin Il-62 দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট
Ilyushin Il-18 বিশেষ ফ্লাইট

পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধা

এয়ার কোরিওর পরিষেবার মান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে, ২০১৫ সালে নতুন কিছু বিমান যুক্ত করার পর পরিষেবার মান কিছুটা উন্নত হয়েছে।

  • বিমানে পরিবেশিত খাবার সাধারণত কোরিয়ান খাবার হয়, যেমন কিমচি, নুডলস ও বিফ-বান।
  • বিমানের অভ্যন্তরীণ বিনোদন ব্যবস্থা সীমিত, তবে কিছু বিমানে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ এবং সংগীত শোনানো হয়।
  • বিমানবন্দরে এয়ার কোরিওর নিজস্ব লাউঞ্জ সুবিধা থাকলেও এটি অন্যান্য আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের তুলনায় অনেক সাধারণ।

নিষেধাজ্ঞা ও চ্যালেঞ্জ

এয়ার কোরিওর প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমা বিশ্বের বয়কট।

  1. ইউরোপীয় ইউনিয়নের কালো তালিকা:

    • ২০০৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এয়ার কোরিওকে তাদের আকাশসীমায় নিষিদ্ধ করে, কারণ তাদের বিমানগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে, পরবর্তীতে Tupolev Tu-204 মডেলের বিমানগুলো কিছু শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন পায়।
  2. আধুনিকায়নের অভাব:

    • বিমান বহর বেশ পুরনো হওয়ায় এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে পড়েছে। নতুন বিমান কেনার সামর্থ্য বা সুযোগ উত্তর কোরিয়ার জন্য সীমিত।
  3. সীমিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট:

    • শুধুমাত্র চীন ও রাশিয়ার কয়েকটি শহরে এয়ার কোরিওর ফ্লাইট পরিচালিত হয়, যা দেশটির বৈশ্বিক সংযোগকে সংকুচিত করে রেখেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ এয়ারলাইনস?

Skytrax, যা বিশ্বের এয়ারলাইনস পর্যালোচনার জন্য বিখ্যাত, তারা এয়ার কোরিওকে “এক তারকা” রেটিং দিয়েছে এবং এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ এয়ারলাইন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে অনেক পর্যটক এয়ার কোরিওর পরিষেবা সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিছু যাত্রী বিমানবাহিনীর কর্মীদের আতিথেয়তা ও খাবার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, আবার অনেকে বিমানের পুরনো আসন, বিনোদনহীন পরিবেশ এবং বাণিজ্যিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিষেবা নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

উপসংহার

এয়ার কোরিও উত্তর কোরিয়ার একমাত্র বিমান সংস্থা, যা দেশের বিমান পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনার মূল দায়িত্বে রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা, পুরনো বিমান বহর এবং সীমিত আন্তর্জাতিক সংযোগের কারণে এটি একটি সীমিত কার্যক্ষমতার এয়ারলাইন হিসেবে পরিচিত।

যদি ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি হয় এবং দেশটি বিমানবহর আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে এয়ার কোরিও বিশ্বব্যাপী একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও সীমিত এয়ারলাইনগুলোর মধ্যে অন্যতম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com