২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কানাডায় পড়তে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৬০ শতাংশ।
২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কানাডায় পড়তে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৬০ শতাংশ।
এই ধরনের জালিয়াতির ঘটনায় ভুক্তভোগী হরিয়ানার পঞ্চকুলার ২৪ বছর বয়সী এক ছাত্র। তিনি কানাডায় পৌঁছনোর পর ব্র্যাম্পটনের একটি কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে হতবাক হয়ে যান। তার ভর্তির চিঠিতে যে ঠিকানা লেখা ছিল সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন সেটি কোনো কলেজ নয়, একটি ছোট অফিস মাত্র। সেখানে তাকে বলা হয় সব আসন পূর্ণ। তাকে অপেক্ষা করতেও বলা হয়। এক সপ্তাহ কেটে গেলেও সেখান থেকে ভর্তির ডাক আসেনি। তখন ওই ছাত্র বুঝতে পারেন কলেজটি জাল। বছরের মোট ১২ লাখ রুপির টিউশন ফির মধ্যে ৪.২ লাখ রুপি জমা দিয়েছিলেন। তার হাতে বিশেষ অর্থ না থাকায় নিজের খরচ চালানোর জন্য স্থানীয় একটি পেট্রল পাম্পে কাজ শুরু করেন।
এ ছাড়া গুজরাটের বলসাডের ২৭ বছর বয়সী যুবক স্বীকার করেছেন, তিনি দুই বছরের জন্য সাড়ে সাত লাখ রুপি ফি দিয়ে একটি কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কানাডায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতে যে খরচ লাগে, কমিউনিটি কলেজে খরচ তার চেয়ে কম। তবে এটি বিদেশের ছাত্রদের জন্য অবৈধ।
কানাডায় বহু শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের মাথার ওপর ২০ থেকে ২৫ লাখ রুপির ঋণের বোঝা চেপে রয়েছে। সেই ঋণ শোধ করার জন্য বেআইনিভাবে উপার্জন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থীই কানাডায় যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার পর তারা সেখানে ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বা চাকরির ছাড়পত্র পাবেন না। কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট না থাকলে বৈধভাবে কোথাও কাজ করা সম্ভব নয়।
মূলত গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলো থেকে সে দেশে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই অন্তত দুটি শিফটে চাকরি করেন। কেউ রেস্তোরাঁ, কেউ ডেলিভারি সংস্থার কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন ও ঘণ্টায় ডলারের হিসাবে রোজগার করেন।
অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ
কিছু শিক্ষার্থী কলেজের কাছ থেকে প্রতারিত হলেও, অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে কানাডায় পাড়ি জমান মোটা রোজগারের আশায়। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার পড়তে হলে পড়ার খরচ পুরোপুরি জমা দিলে তবেই সে দেশের কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। অন্যদিকে কানাডায় বিদেশ থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আগে থেকে পুরো টিউশন ফি জমা দিতে হয় না। এই নীতির কারণে পড়তে যাওয়ার নাম করে শিক্ষার্থীরা বড় বড় শহরে অবৈধভাবে বিভিন্ন কাজ করতে শুরু করেন। বেশ কিছু শিক্ষার্থী অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য কানাডাকে প্রবেশদ্বার হিসেবেও ব্যবহার করেন। ভিসা ছাড়া বেআইনিভাবে ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কাজে জড়িত রয়েছে একাধিক চক্র।
কানাডা সীমান্ত হয়ে ভারতীয়দের অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করানোর চক্রের কথা অতীতেও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। ইডির দাবি, এই চক্রের সঙ্গে কানাডার কিছু কলেজ ও ভারতের বেশ কয়েকটি সংস্থা জড়িত। যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চাইতেন, তাদের আগে কানাডার কিছু কলেজে ভর্তি করানোর ‘ব্যবস্থা’ করা হতো। তাদের জন্য করা হতো কানাডার স্টুডেন্ট ভিসাও। কিন্তু কানাডায় পৌঁছনোর পর কলেজে ভর্তি করানোর বদলে কানাডা সীমান্ত দিয়ে বেআইনিভাবে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো যুক্তরাষ্ট্রে। এই চক্রে একেকজন ভারতীয়র কাছ থেকে ৫৫-৬০ লাখ রুপি করে নেওয়া হতো বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।
অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হেনরি লটিন সংবাদমাধ্যমে জানান, তার ধারণা, নিখোঁজ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেননি। তারা এখনো কানাডায় কাজ করছেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা