বেলজিয়াম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ। এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এটি ইউরোপের ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বেলজিয়াম ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বেলজিয়ামের আয়তন ৩০ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১৩৯তম। এটি ইউরোপের সর্বাধিক নগরায়িত দেশ, এখানকার ৯৭% লোক শহরে বাস করে।
ব্রাসেলস বেলজিয়ামের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ইউরোপীয় কমিশন, ন্যাটো এবং বিশ্ব শুল্ক সংস্থার সদর দপ্তর ব্রাসেলসয়ে অবস্থিত। বেলজিয়াম ইউরো জোনে অবস্থিত হওয়ায় এখন দেশটিতে প্রচলিত মুদ্রার নাম ইউরো। তবে এর আগে বেলজিয়ামের মুদ্রার নাম ছিল বেলজিয়াম ফ্রাঁ। বেলজিয়াম তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত- ফ্ল্যান্ডার্স, ওয়ালোনিয়া এবং ব্রাসেলস ক্যাপিটাল সিটি।
বেলজিয়ামের প্রধান দুটি ভাষা হলো ফরাসি ও ফ্লেমিশ। এছাড়া অঞ্চল বিশেষে জার্মানি, ফরাসি, ইংরেজি ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বেলজিয়ামের অন্যান্য ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি, তুর্কি, কাবিলে, স্পেনীয়, পর্তুগিজ এবং লেৎসেবুর্গেশ ভাষা অন্যতম।
বেলজিয়ামের রাজনীতি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাজা বা রাণী হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং দ্বিপাক্ষিক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত।
উন্নত এ দেশটি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েই জার্মানির দখলে ছিল। কিন্তু বর্তমানে স্বাধীন এ দেশটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত। একই সাথে দেশটির উচ্চশিক্ষার মান বেশ ভালো। এ কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ দেশ হতে পারে বেলজিয়াম।
বেলজিয়ামের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো,
• Katholieke Universiteit Leuven
• University of Ghent
• Université Catholique de Louvain
• Vrije Universiteit Brussel
• Universite Libre de Bruxelles
এখানে মডার্ন হিস্ট্রি, ল্যাটিন, গ্রিক, জার্মান, আর্কিওলজি, নরডিক স্টাডিজ, কমিউনিকেশন স্টাডিজ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ল, সোসিওলজি, জিওগ্রাফি, বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, জেনেটিক্স, মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স, প্যাথলজি, সার্জারি, ডেন্টিস্ট্রি, মাইক্রো বায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি, রেডিওলজি, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন, আর্কিটেকচার, আরবান প্লানিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনমিক্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ফার্মেসি, ভেটেরিনারি, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিক্স, ম্যাথম্যাটিকস, হর্টিকালচার ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাটিসটিকসসহ আরো অনেক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারবেন।
বেলজিয়ামের শিক্ষাব্যবস্থা খুবই মানসম্পন্ন। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭টিই বেলজিয়ামে অবস্থিত। এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা তাত্ত্বিক নয়, গবেষণা ভিত্তিক। এখানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আপনি সবকিছু হাতে কলমে শিখতে পারবেন। কৌশল, আইটি, হেলথ ও বিজনেস কোর্সের জন্য দেশটি খুবই ভালো।
ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের মতো বেলজিয়ামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনার্স মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। এখানে অনার্স কোর্সের মেয়াদ তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স কোর্স এক থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি তিন থেকে চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে তিন বার ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত একবার, আরেকবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে এবং আবার জুলাই এর প্রথম দিকে।
Image Source: marj3.com
বেলজিয়ামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত ডাচ, ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়। বেশিরভাগ কোর্স ডাচ ভাষায় পড়ানো হয়, তবে স্বল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি কোর্সও পড়াশোনা পড়ানো হয়। আপনি ডাচ বা ইংরেজি যে ভাষায় পড়াশোনা করুন না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই আপনাকে ভাষা দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। বেলজিয়ামে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইলে ডাচ ভাষা শিখে নিলে আপনার জন্য ভালো হবে। কারণ সে দেশের মানুষের সাথে ভালোভাবে মেলামেশা করা এবং চাকরির জন্য ডাচ ভাষার প্রয়োজন পড়বে।
বেলজিয়ামে জীবনযাত্রার মান উন্নত। এটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকদের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, গণপরিবহণ সুবিধাসহ আরো নানা ধরণের সামাজিক সুবিধা দেয়া হয়।
বেলজিয়ামে বিদেশী শিক্ষার্থী সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা খন্ডকালীন কাজ করতে পারে। তবে গ্রীষ্মের ছুটিতে আপনি তিন মাস ফুলটাইম কাজ করতে পারবেন। ডাচ ভাষায় পারদর্শী হলে আপনি সহজেই এখানে কাজ পেয়ে যাবেন।
বেলজিয়াম সরকার এবং সে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতিবছরই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৪৫টি স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে।
Image Source:thecrazytourist.com
এর মধ্যে অন্যতম হলো VLIR-UOS স্কলারশিপ। এটি মূলত বেলজিয়াম সরকার প্রদত্ত স্কলারশিপ । এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে, এমন দশটি এশিয়ান দেশের তালিকার মধ্যে বাংলাদেশর নামও রয়েছে। আবেদনকারীকে বাংলাদেশ এর স্থায়ী নাগরিক হতে হবে এবং আবেদন করার সময় বাংলাদেশে অবস্থান করতে হবে।
Government of Flanders Master Mind Scholarships for International Students এটিও মূলত বেলজিয়াম সরকার প্রদত্ত স্কলারশিপ, এটিও মূলত বেলজিয়াম সরকার প্রদত্ত স্কলারশিপ, আগামী বছর আবার আবেদন করা যাবে
এছাড়া স্থায়ীভাবে বাস করতে চাইলে নূন্যতম পাঁচ বছর বৈধভাবে একটানা বাস করার প্রমাণপত্র দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির (পিআর) জন্য আবেদন করতে হবে।
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় বেলজিয়ামের টিউশন ফি ও জীবন যাত্রার খরচ তুলনামূলক ভাবে কম। সব মিলিয়ে বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সভেদে এর তারতম্য হতে পারে।
বেলজিয়ামে বসবাস করা মানে ইউরোপের কেন্দ্রে বসবাস করা, কারণ এদেশ থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো একদম কাছাকাছি। বেলজিয়ামের উত্তরে নেদারল্যান্ড, পূর্বে জার্মানি ও লুক্সেমবার্গ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে ফ্রান্স অবস্থিত। মাত্র দুই তিন ঘণ্টার প্লেন অথবা বাসে ভ্রমণ করে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।